প্রত্যাশা ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার (২৬ এপ্রিল) বলেছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় যেকোনো ‘নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ’ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে তাঁর দেশ। এ হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চলা চরম উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন।
পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ওই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত ২৬ জনের বেশির ভাগই পর্যটক। ২০০০ সালের পর থেকে হিমালয়ঘেঁষা উপত্যকাটিতে এটাকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সশস্ত্র হামলা বিবেচনা করা হচ্ছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। যদিও এই সংগঠন খুব একটা পরিচিত নয়।
এ ঘটনার পর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে পাকিস্তানের আকাশসীমা। ভারতের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পেহেলগামে হামলাকারীদের সঙ্গে আন্তসীমান্ত সংযোগ রয়েছে। যদিও পাকিস্তান এমন সম্পৃক্ততার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে আজ শনিবার একটি প্যারেড পরিদর্শনের সময় ভাষণ দিতে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পেহেলগামের সাম্প্রতিক এই হৃদয়বিদারক ঘটনার দায় চাপানোর খেলার আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া দরকার। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ আর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে।’
ভারতের সমালোচনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটি ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে এবং বাস্তব প্রমাণহীন অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে।
এ সময় শাহবাজ শরিফ আরো বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই কাশ্মীরের গুরুত্ব তুলে ধরা প্রয়োজন। আমাদের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঠিকই বলতেন, “কাশ্মীর হলো পাকিস্তানের ঘাড়ের শিরার মতো।” দুর্ভাগ্য হলো, জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবনা থাকা সত্ত্বেও এই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরোধ আজও মীমাংসা করা যায়নি।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, পাকিস্তান কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে আছে। সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করা বিজয়ের আগপর্যন্ত সব সময় তাঁদের পাশে থাকবে। পাকিস্তান সব সময় সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের কঠোর নিন্দা জানিয়ে এসেছে।’
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সম্মুখসারির একটি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ৯০ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন এবং কল্পনারও বাইরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের এমন বক্তব্যের এক দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে পাকিস্তান।’
খাজা আসিফ আরো বলেন, ‘ভারত এই হামলাকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার অজুহাত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। দেশটি কোনো ধরনের তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
‘আমরা চাই না, শুধু শুধু যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক। কেননা সেটা পুরো অঞ্চলের জন্য এক বিপর্যয় বয়ে আনবে’—যোগ করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-তইয়্যেবা এখন ‘অকার্যকর’ হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান থেকে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা সংগঠনটির নেই।স্কাই নিউজকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে ভারত হামলা চালালে নিশ্চিতভাবে “পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ” শুরু হয়ে যাবে। আর এ অঞ্চলে এমন একটি যুদ্ধের বিষয়ে বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’