আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতশাসিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি মারা গেছেন।
বুধবার রাতে শ্রীনগরে নিজের বাড়িতেই ৯২ বছর বয়সী এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিপক্ষে থাকা গিলানি গত ১১ বছরের বেশিরভাগ সময়ই গৃহবন্দি ছিলেন।
তার মৃত্যুর পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শ্রীনগরের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গিলানির বাড়ির আশপাশের রাস্তায় কাঁটাতার ও ব্যারিকেড দেয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
শহরটিতে ইন্টারনেট ও ভয়েস কলিং সেবাও সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে, কারফিউ দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে এখন যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তাতে এ ধরনের পদক্ষেপ অস্বাভাবিক নয়।
অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইন্টারনেট ও ভয়েস কলিংয়ের ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ হয়, বলছে পুলিশ।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সমগ্র কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে এলেও তারা এর পৃথক দুটি অংশ শাসন করে আসছে। শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে গত ৩ দশক ধরে ভারতশাসিত অংশটিতে ব্যাপক সহিংসতা ও অস্থিরতাও চলছে।
ভারতের ভেতরে গিলানিকে নিয়ে নানা ধরনের মত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে সরব থাকলেও অল পার্টিজ হুরিয়াত কনফারেন্সের এ নেতা মূলত ভারতশাসিত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দিতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
তার মৃত্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের অনেক রাজনীতিকই শোক জানিয়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, গিলানির মৃত্যুতে তিনি শোকাহত।
টুইটারে দেওয়া পোস্টে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গিলানিকে ‘স্বাধীনতা যোদ্ধা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ভারতশাসিত কাশ্মীরের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছেন।
“গিলানি তার নিজের জনগণ ও তাদের আত্মমর্যাদার অধিকারের জন্য জীবনভর লড়েছেন,” বলেছেন ইমরান।
গিলানির শেষকৃত্যে পুলিশ কেবল তার নিকটাত্মীয়দেরই যেতে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তার বাড়ির কাছের মসজিদের লাউড স্পিকার থেকে লোকজনকে শেষকৃত্যে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও পুলিশ সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকতে বলে।
শেষকৃত্যের সময় গিলানির বাড়ির আশপাশে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জামাত-ই-ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন গিলানি।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীরের অন্যতম বড় রাজনৈতিক-ধর্মীয় সংগঠন জামাত-ই-ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রায় দুই ডজন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জোট অল পার্টিজ হুরিয়াত কনফারেন্সের একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন গিলানি। ২০২০ সালে তিনি জোট নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ তুলে পদ ছেড়ে দেন।
ভারতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের আলোচনার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। ভারত এখন কাশ্মীরের যে অংশের নিয়ন্ত্রক, তার জনগণ নয়া দিল্লির সঙ্গে থাকবে কি থাকবে না, যে কোনো আলোচনার আগে এ বিষয়ে একটি গণভোট করারও চাপ দিয়ে আসছিলেন তিনি।
গিলানির সঙ্গে তার চেয়ে কমবয়সী নেতাদের বিবাদের খবরও প্রায়ই শোনা যেত। হুরিয়াতের অনেক নেতাই ভারতীয়দের সঙ্গে আলাচনায় আগ্রহী।
২০২০ সালে পাকিস্তান গিলানিকে তাদের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব নিশান-ই-ইমতিয়াজে ভূষিত করেছিল।
কাশ্মীরের নেতা সৈয়দ আলি গিলানির মৃত্যু

Kashmiri separatist leader Syed Ali Shah Geelani gestures as he speaks to media before his arrest in Srinagar, India, Wednesday, Sept. 8, 2010. Police in Indian-controlled Kashmir arrested Geelani Wednesday in an attempt to stop protests against Indian rule in the disputed region. (AP Photo/Altaf Qadri)
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ