ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালো মেয়ে

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ২৬১ বার পড়া হয়েছে

মুম রহমান : আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম।
মেয়ে তো ছবি নয় যে তাকে সাদা-কালো কিংবা রঙিন বলা যায়। সবাই বলতো মেয়েটা কালো; তাই আমিও বললাম। তাছাড়া কালো তো কালোই, তাকে ‘লাল’ বলা যায় না।
যাক, সে ছিলো প্রস্তর যুগের কথা। তখন আমি এতোটাই জোয়ান যে তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে বনের মধ্যে ওকে আকড়ে ধরে বসে থাকি। কিন্তু তখনই জানি, জানতাম, ওকে আমার ঘরে আনা হবে না।
আমাদের বাড়ি ঢাকায়, মানে বাবার নিজের বাড়ি, আলিশান কিছু নয়, তবু ছেলের বাড়ি আছে ঢাকায়, পরিবারের বড় ছেলে, পাশ করার আগেই হাতে চাকরি, যাকে বলে এলিজেবল ব্যাচেলর। আর আমার মা নিজে কালো বলেই কিনা জানি না জগতের সব কালো মেয়েকে ঘৃণা করতো। এখনও করে। কালো বউ ঘরে আনলে ভবিষ্যৎ বংশধর কালো হবে, সেই ভয়েই কালো মেয়েদের জন্য বাড়িতে কার্ফ্যু জারি ছিলো।
আমার কালো মেয়েটার নাম ছিলো শায়লা। আমি শায়লার মতো একটা কালো মেয়ের বাবা হতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, শায়লার পেটে আমার মেয়ে জন্মাবে। আমি শায়লার পা দুটো খুব ভালোবাসতাম, বাসি। চাইতাম, জগতের সব জোনাকি পোকা ধরে এনে ওর পায়ের নখে জ্বালিয়ে দেই, জ্বলজ্বল করুক ও। এমনটা আমি শিখেছিলাম সেলিম আল দীনের কাছ থেকে। সে যেন কোনো বইতে লিখেছিলো, কালিন্দীর কথা। সেই কুচকুচে কালিন্দীর চরণ দুটো উজাল হোক, উজ্জ্বল হোক বলে প্রেমিক পুরুষ জোনাকি ঘষে দিতো পায়ে। এইসব অতো বিস্তৃত মনে নেই আমার। তবে শায়লার কথা মনে আছে আমরা। ও খুব সুন্দর কালো ছিলো। ওর চোখের জমিন আর দাঁত ছিলো ঝকঝকে সাদা। ওগুলো যেন কয়লার খনিতে হীরা। বিশেষ করে ওর দাঁতগুলো অদ্ভুত সাদা ছিলো। আমার তো উঁচু দাঁত, বিশ্রী, ওর দাঁতগুলোকে হিংসা করতাম। চুমু খেতে গেলে ওর ঠোঁট নয়, দাঁতেই বেশি ঘষাঘষি করতাম, জিভ। শায়লা বলতো- পাগল, কী সব করো! আমি বলতাম- পা গোল কোথায়, এই দ্যাখো আমার পা চ্যাপ্টা।
শায়লার চোখের মতো চোখ আর কোথাও দেখিনি আমি, দেখবো বলে ভাবিওনি। এই কদিন আগে নড়াইলে শুটিং করতে গিয়ে একটা মেয়ের চোখ আর ঠোঁট দেখে চমকে উঠেছিলাম, ঠিক তেমন টানা চোখ আর পুরুষ্টু ঠোঁট। এই ফেয়ার এ- লাভলির জগতে না-জন্মালে শায়লাকে অপূর্ব সুন্দরী বলা যেতো।
কিন্তু শায়লা অপূর্ব সুন্দরী ছিলো। কেবল বিদেশি রক্তের মিশেল না থাকায় ও ফর্সা হতে পারেনি। কিন্তু শায়লার কথা কেন বলছি আমি!
না, তোমার গায়ের রঙ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে ওর মিল নেই। খুব শান্ত-লক্শ্মী-মিষ্টি আর একটু বোকা মেয়ে ছিলো, হতে পারতো আদর্শ বউ। শায়লাকে যেদিন না-করে দিয়েছি সেদিন অভিশাপ দিয়েছিলো- তুই কোনোদিন এই জনমে সুখ পাবি না। অভিশাপটা কাজে লেগেছে। শায়লাকে যদি খুঁজে পেতাম, বুক উঁচিয়ে বলতাম- দেখ, তোর কথামতো আমার জীবনটা হয়েছে।
না, এই ফেইসবুকের দুনিয়াতে খুঁজে পাচ্ছি না। গত চার-পাঁচ বছর ধরে খুঁজছি। পেলে, একবার অন্তত মাফ চাইতে পারতাম। বলতে পারতাম, তোকে না করেছি, কারণ আমাকে বিয়ে করে তুই সুখি হতে পারতি না। এই পরিবারে তুই শান্তি পেতি না। আমার মা তোকে ভালো থাকতে দিতো না। আর আমি মাকে ছেঁড়ে ভালো থাকতে পারতাম না। কিন্তু নিশ্চয়ই ও এখন ভালো আছে। এতো ভালো যে আমার থেকে দূরেই আছে।
আচ্ছা তিলোত্তমা, দূরত্ব কাকে বলে? এখান থেকে এন্ড্রোমিডার শেষ নক্ষত্রটা দূরে নাকি আমার বালিশ থেকে সীমার বালিশটা দূরে। সীমা আমার বউ। ওকেও আমি বিয়ে করেছি। ব্যাপারটা এক বাক্যে বললেও অতোটা সহজ ছিলো না। সীমা নামকরা সুন্দরী ছিলো, গোটা দশেক প্রেমপ্রার্থী চারপাশে ঘুরছিলো। কিন্তু আমাদের ছিলো বাড়ি-গাড়ি। আমার ছিলো ভালো চাকরি। আর সীমা ছিলো ফর্সা। আর আমার মা আর ঘটকের ছিলো কথার কারুকাজ খেলার যোগ্যতা। আর সীমার সকল প্রেমপ্রার্থীদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমি সোজা তাকে বিয়ে করে ফেলি। প্রথম বছর পার না হতেই সীমার মতো একটা ফর্সা ছেলে জন্ম নেয় আমাদের বংশে। আমার মা বংশের বাত্তি পেয়ে দারুণ খুশি। আমার মা মরার আগে সীমাকে আশীর্বাদ করে গেছে। সীমা ভালো আছে। কিন্তু আমি কি সীমাকে ভালোবাসি? বাসতে পেরেছি? জানি না।
এখন আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা ব্যবহৃত হয় তার নাম ‘জানি না।’ আমি আসলে একটা জিনিসই জানতাম, ভালোবাসতে। কিন্তু সেটা তো কোনো কাজে লাগেনি। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য এটা কোনো যোগ্যতাই না। ক্লাস নাইনে যে মেয়েটাকে ভালোবেসেছিলাম, সে পাশের বাড়িতেই থাকতো। ছাদ থেকে ছাদে টাংকি মারতাম। একদিন ফ্লাইং কিস মারলাম। সেই অপরাধে পা থেকে স্যান্ডেল খুলে দেখিয়ে দিলো! কলেজে এক মেয়ের জন্য হাবুডুবু। তার মহল্লার ছেলেরা ধরে একদিন সাশালো। সেই ঘটনা নকল করেই অঞ্জন দত্ত গান লিখলো, রঞ্জনা আমি আর আসবো না। কিন্তু আমি বেহায়া ছিলাম। তখন কবিতা লিখতাম। কবিরা বোধহয় বেহায়া টাইপ প্রেমিক হয়। ভার্সিটিতে উঠেই যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলাম, যার জন্য খাতা ভর্তি করে কবিতা লিখেছিলাম, সে ভালোবাসতো এক ক্রিকেটারকে, সেই ক্রিকেটার ভালোবাসতো ওই মেয়েটিরই ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে। আমি ওর হয়ে সেই ক্রিকেটারের সঙ্গে দেখা করতে যাই দিনাজপুরে। বলাবাহুল্য, দিনাজপুর থেকে আমি গলা ধাক্কা খেয়েই বিদায় হই। আর আমার সেই প্রেমিকাটি রাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে আমেরিকা চলে যায়, নিজের দ্বিগুণ বয়সী এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করে।
সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এর শোধ নেবো। আমিও একদিন বিদেশ থেকে অনেক নাম-টাকা কামিয়ে দেশে এসে ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিয়ে যাবো কোন ছোকরার অমূল্য ধন। যেহেতু বাংলা ছবির নায়ক নই, সেহেতু প্রতিশোধ নেয়া হয়নি, কেবল কয়েকটা দিন বালিশ ভিজিয়েছি। অনেকেরই ধারণা ছেলেরা কাঁদে না। তারা যদি আমার কান্নার ইতিহাস রাখতো আমাকে পুরুষ জাতির কলঙ্ক বানিয়ে ছাড়তো।
কিন্তু এই সব ছাইপাশ কেন লিখছি তোমাকে। তিলোত্তমা, মানুষ মরার আগে স্মৃতি রোমন্থন করে। আমি কী সেই সময়ের কাছে চলে এসেছি। জানি না। আচ্ছা, আমি যদি এখন তোমাকে ভালোবাসি, তোমার প্রেমে পড়ি, এই চিঠিটা যদি তোমাকে পাঠাই, তুমি কী আমাকে স্যান্ডেল দেখাবে, তোমার মহল্লার লোক দিয়ে ধোলাই খাওয়াবে… না, ও সব দিন গেছে। এখন হয়তো আনফ্রেন্ড করে দেবে, ব্লক করে দেবে, সিমটা চেঞ্জ করে দেবে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ এখন যতো সহজ বিচ্ছিন্নতা তার চেয়েও সহজ। তুমি আবার বিচ্ছিন্নতা ব্যাপারটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারো, আমার ধারণা। আজো তো একবার ফোনেও কণ্ঠ শুনতে দিলে না। এতো সাবধানতা! না হয় একটু…
আচ্ছা, আমার একটা জিনিস ইচ্ছা করে, আমরা দুজন বেরিয়ে যাবো, একটা ছোট্ট লাল রঙের মারুতি নিয়ে, লাল আমার খুব প্রিয়, আর মারুতি গাড়িটা শস্তায় ভালো চলে। আমরা এ দেশের ৬৪টা জেলা ঘুরবো। সব জেলার স্পেশাল খাবার খাবো, জানোই তো, আমি পেটুক, সব জেলার বিশেষ জায়গাগুলো ঘুরে দেখবো। ছবি তুলবো না। ছবি তুললে মনের মধ্যে স্মৃতিগুলো জমে না, মন পড়ে থাকে ক্যামেরার ভরসায়। যাই হোক ঘুরতে ঘুরতে আমরা দিন রাত্রি পার করে দেবো। হোটেলের এক রুমে উঠবো, কিন্তু বিছানা আলাদা, আমরা তো স্বামী-স্ত্রী নই, প্রেমিক-প্রেমিকা নই, আবার হোটেলে আলাদা রুম নিলেও সন্দেহ, তাই অভিনয়টা থাকবে। তারপর ফ্রাঙ্ক কাপরার সেই ‘ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট’ ছবির মতো হোটেলের ঘরে দুজনের মাঝখানে পর্দা টানিয়ে ঘুমাবো, অথবা জেগে জেগে রাত পার।
প্রশ্ন করতে পারো, এই যাত্রার উদ্দেশ্য কি! উত্তরটা অনধিকার চর্চা হতে পারে, তবু বলি, যাবতীয় আনন্দ, ফূর্তি, ভ্রমণ-ঘোরাঘুরির আড়ালে আমরা খুঁজবো তোমার বাবাকে। যদি পেয়ে যাই, তাহলে আমাকে একটা চুম্বন দিয়ো। বহু বছর যৌনতা ছাড়া চুম্বন খেয়ে দেখিনি, বহু বছর রুটিন ছাড়া চুম্বন খেয়ে দেখিনি।
আর যদি খুঁজে না পাই, তাহলে ৬৪ জেলা খোঁজা শেষ হলে, আমি হতাশ হয়ে বসে পড়বো পা মেলে। তুমি আমার পায়ে, কোলে অথবা বুকে মাথা রেখে কেঁদো, কাঁদতে কাঁদতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে তোমার, আমি তোমাকে জল-হাওয়া খাইয়ে ঠিক করবো। তারপর বলবো, কোথায় যাবে মেয়ে? যেখানে যেতে চাও বলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দেবো।
আর যদি তোমার কোন যাওয়ার জায়গা না-থাকে, আমার লুকানো জায়গাটা তোমাকে দিয়ে বলবো, এইখানে থাকো। কাঁচামরিচ লাগাও, পুঁই শাক বোনো, মাঝে মাঝে চড়ুইভাতি হবে। না, কোনো স্থায়ী বন্দবস্ত নয়, অস্থায়ী এই জীবনে তোমার সাথে একটু পিকনিক হতে পারে। কলাপাতায় দুটো ভাত, একটা মরিচ একটু পুঁইশাক, আমি খুশি। তুমি?
রাজী থাকলে জানিও, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া করা যেতে পারে। আর রাজী না থাকলে বলো- ধুরো বুড়ো হাবড়া ফাজলামি রাখ, এখন তোর কবরে যাওয়ার সময়, প্রেম-ফ্রেম ছেড়ে তসবি দানা টেপ। না, আমার বিশ্বাস আর অভ্যাস অথবা বদভ্যাস কেবল ভালোবাসায়।
আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম। সেই মেয়েটাকে আমি কাপুরুষের মতো ছেড়ে এসেছি। কিন্তু তাকে ছেঁড়ে আসার অনুশোচনা আমার যায়নি। আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার মা কালো মেয়েদের ঘৃণা করে। আমার বৌ খুব ফর্সা। কিন্তু বাঙালিরা খুব ফর্সা হয় কীভাবে? আমরা তো আদতে কালোর জাত। আমাদের তো মা কালী ছিলো, আমাদের তো শ্রীকৃষ্ণ ছিলো। তারপর আমাদের এখানে আরব এলো, ইংরেজ এলো, পর্তুগীজ এলো। গিজগিজ করে কতো রঙ আর কতো চেহারা এলো। বাঙালির চেহারা বদলে গেলো। আমাদের ধর্ম-বর্ণ বদলে গেলো। আমরা ফর্সা হওয়ার অহঙ্কারে আস্ফালন করলাম। কিন্তু ভালোবাসা ছিলো কালো মেয়েটির বুকে, বাঙালি মেয়েদের পুরুষ্ট বুকে ভালোবাসা থাকে।
তিলোত্তমা, তুমি শায়লার মতো। তোমার আবলুশ কালো রঙ, টানা চোখ, পুরুষ্ট ঠোঁট, সাদা দাঁত আমাকে যৌবনে নিয়ে যায়। অনুশোচনায় নিয়ে যায়। তোমার বাবা তোমার মাকে ছেঁড়ে গেছে। তার অপরাধ ছিলো সে কালো এবং তোমার মতো একটা কালো মেয়েকে জন্ম দিয়েছে। আমি তোমার মতো একটা কালো মেয়ের বাবা হতে চেয়েছিলাম। আমি কিসসু হতে পারিনি। আমার তাতে কিসসু যায় আসে না। আমি একটু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। মিথ্যে বলবো না, শায়লাকে আমি এখনও ভালোবাসি। তোমাকেও আমি ভালোবাসবো। ভালোবেসে একটা জীবন পার করে দেয়ে যায়। আসো, ভালোবাসি।
তুমি বলবে, ‘প্যারা’ নিয়ে লাভ নাই। এইসব ভালোবাসাবাসি প্যারার ব্যাপার। আচ্ছা মানুষ সারা জীবন ইংরেজি লাভ রেখে বাংলা লাভের পেছনে এতো ছোটে কেন, এমনি এমনি হরলিক্স খাওয়া গেলে ভালোবাসা যাবে না। আমি তো এমনি এমনি তোমাকে ভালোবাসি।
তুমি কি আমাকে মিথ্যাবাসো? মন্দবাসো? ঘৃণাবাসো? একটু ভালোবাসতে পারো না?
ভালোবেসে দেখো। এখন আমি তৈরি হয়ে আছি। মা, বউ, বাচ্চা, সমাজ, সংসার- সবকিছু আমি ছাড়তে তৈরি আছি আমি। চলো একটা নতুন জীবন আমরা খুঁজে নেই। তাহলে চলো না একদিন বৃষ্টিতে ভিজি, একদিন ঝাল দিয়ে চটপটি খেয়ে হেঁচকি তুলি, একদিন কৃষ্ণচূড়া ফুল তোমার মাথায় দিয়ে নিতাই হয়ে বলি, ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দো ক্যানে, রাঙা চুলে কালো কুসুম হেরেছো কি দুই নয়ানে?’
বন্ধুরা বলে, আমি একটা হারামী। এক ঠ্যাং কবরে চলে গেছে এখনও আমি নামাজ-রোজা করি না। আর মেয়েদের পেছনে ছুটে বেড়াই। ওরা ভুল বলে। আমার মরার সময় হয়নি, আমার সময় হয়েছে ভালোবাসার। আমি ছুটি ভালোবাসার পেছনে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি তিলোত্তমা মুখার্জি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কালো মেয়ে

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

মুম রহমান : আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম।
মেয়ে তো ছবি নয় যে তাকে সাদা-কালো কিংবা রঙিন বলা যায়। সবাই বলতো মেয়েটা কালো; তাই আমিও বললাম। তাছাড়া কালো তো কালোই, তাকে ‘লাল’ বলা যায় না।
যাক, সে ছিলো প্রস্তর যুগের কথা। তখন আমি এতোটাই জোয়ান যে তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে বনের মধ্যে ওকে আকড়ে ধরে বসে থাকি। কিন্তু তখনই জানি, জানতাম, ওকে আমার ঘরে আনা হবে না।
আমাদের বাড়ি ঢাকায়, মানে বাবার নিজের বাড়ি, আলিশান কিছু নয়, তবু ছেলের বাড়ি আছে ঢাকায়, পরিবারের বড় ছেলে, পাশ করার আগেই হাতে চাকরি, যাকে বলে এলিজেবল ব্যাচেলর। আর আমার মা নিজে কালো বলেই কিনা জানি না জগতের সব কালো মেয়েকে ঘৃণা করতো। এখনও করে। কালো বউ ঘরে আনলে ভবিষ্যৎ বংশধর কালো হবে, সেই ভয়েই কালো মেয়েদের জন্য বাড়িতে কার্ফ্যু জারি ছিলো।
আমার কালো মেয়েটার নাম ছিলো শায়লা। আমি শায়লার মতো একটা কালো মেয়ের বাবা হতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, শায়লার পেটে আমার মেয়ে জন্মাবে। আমি শায়লার পা দুটো খুব ভালোবাসতাম, বাসি। চাইতাম, জগতের সব জোনাকি পোকা ধরে এনে ওর পায়ের নখে জ্বালিয়ে দেই, জ্বলজ্বল করুক ও। এমনটা আমি শিখেছিলাম সেলিম আল দীনের কাছ থেকে। সে যেন কোনো বইতে লিখেছিলো, কালিন্দীর কথা। সেই কুচকুচে কালিন্দীর চরণ দুটো উজাল হোক, উজ্জ্বল হোক বলে প্রেমিক পুরুষ জোনাকি ঘষে দিতো পায়ে। এইসব অতো বিস্তৃত মনে নেই আমার। তবে শায়লার কথা মনে আছে আমরা। ও খুব সুন্দর কালো ছিলো। ওর চোখের জমিন আর দাঁত ছিলো ঝকঝকে সাদা। ওগুলো যেন কয়লার খনিতে হীরা। বিশেষ করে ওর দাঁতগুলো অদ্ভুত সাদা ছিলো। আমার তো উঁচু দাঁত, বিশ্রী, ওর দাঁতগুলোকে হিংসা করতাম। চুমু খেতে গেলে ওর ঠোঁট নয়, দাঁতেই বেশি ঘষাঘষি করতাম, জিভ। শায়লা বলতো- পাগল, কী সব করো! আমি বলতাম- পা গোল কোথায়, এই দ্যাখো আমার পা চ্যাপ্টা।
শায়লার চোখের মতো চোখ আর কোথাও দেখিনি আমি, দেখবো বলে ভাবিওনি। এই কদিন আগে নড়াইলে শুটিং করতে গিয়ে একটা মেয়ের চোখ আর ঠোঁট দেখে চমকে উঠেছিলাম, ঠিক তেমন টানা চোখ আর পুরুষ্টু ঠোঁট। এই ফেয়ার এ- লাভলির জগতে না-জন্মালে শায়লাকে অপূর্ব সুন্দরী বলা যেতো।
কিন্তু শায়লা অপূর্ব সুন্দরী ছিলো। কেবল বিদেশি রক্তের মিশেল না থাকায় ও ফর্সা হতে পারেনি। কিন্তু শায়লার কথা কেন বলছি আমি!
না, তোমার গায়ের রঙ ছাড়া কোনো কিছুর সঙ্গে ওর মিল নেই। খুব শান্ত-লক্শ্মী-মিষ্টি আর একটু বোকা মেয়ে ছিলো, হতে পারতো আদর্শ বউ। শায়লাকে যেদিন না-করে দিয়েছি সেদিন অভিশাপ দিয়েছিলো- তুই কোনোদিন এই জনমে সুখ পাবি না। অভিশাপটা কাজে লেগেছে। শায়লাকে যদি খুঁজে পেতাম, বুক উঁচিয়ে বলতাম- দেখ, তোর কথামতো আমার জীবনটা হয়েছে।
না, এই ফেইসবুকের দুনিয়াতে খুঁজে পাচ্ছি না। গত চার-পাঁচ বছর ধরে খুঁজছি। পেলে, একবার অন্তত মাফ চাইতে পারতাম। বলতে পারতাম, তোকে না করেছি, কারণ আমাকে বিয়ে করে তুই সুখি হতে পারতি না। এই পরিবারে তুই শান্তি পেতি না। আমার মা তোকে ভালো থাকতে দিতো না। আর আমি মাকে ছেঁড়ে ভালো থাকতে পারতাম না। কিন্তু নিশ্চয়ই ও এখন ভালো আছে। এতো ভালো যে আমার থেকে দূরেই আছে।
আচ্ছা তিলোত্তমা, দূরত্ব কাকে বলে? এখান থেকে এন্ড্রোমিডার শেষ নক্ষত্রটা দূরে নাকি আমার বালিশ থেকে সীমার বালিশটা দূরে। সীমা আমার বউ। ওকেও আমি বিয়ে করেছি। ব্যাপারটা এক বাক্যে বললেও অতোটা সহজ ছিলো না। সীমা নামকরা সুন্দরী ছিলো, গোটা দশেক প্রেমপ্রার্থী চারপাশে ঘুরছিলো। কিন্তু আমাদের ছিলো বাড়ি-গাড়ি। আমার ছিলো ভালো চাকরি। আর সীমা ছিলো ফর্সা। আর আমার মা আর ঘটকের ছিলো কথার কারুকাজ খেলার যোগ্যতা। আর সীমার সকল প্রেমপ্রার্থীদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমি সোজা তাকে বিয়ে করে ফেলি। প্রথম বছর পার না হতেই সীমার মতো একটা ফর্সা ছেলে জন্ম নেয় আমাদের বংশে। আমার মা বংশের বাত্তি পেয়ে দারুণ খুশি। আমার মা মরার আগে সীমাকে আশীর্বাদ করে গেছে। সীমা ভালো আছে। কিন্তু আমি কি সীমাকে ভালোবাসি? বাসতে পেরেছি? জানি না।
এখন আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা ব্যবহৃত হয় তার নাম ‘জানি না।’ আমি আসলে একটা জিনিসই জানতাম, ভালোবাসতে। কিন্তু সেটা তো কোনো কাজে লাগেনি। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য এটা কোনো যোগ্যতাই না। ক্লাস নাইনে যে মেয়েটাকে ভালোবেসেছিলাম, সে পাশের বাড়িতেই থাকতো। ছাদ থেকে ছাদে টাংকি মারতাম। একদিন ফ্লাইং কিস মারলাম। সেই অপরাধে পা থেকে স্যান্ডেল খুলে দেখিয়ে দিলো! কলেজে এক মেয়ের জন্য হাবুডুবু। তার মহল্লার ছেলেরা ধরে একদিন সাশালো। সেই ঘটনা নকল করেই অঞ্জন দত্ত গান লিখলো, রঞ্জনা আমি আর আসবো না। কিন্তু আমি বেহায়া ছিলাম। তখন কবিতা লিখতাম। কবিরা বোধহয় বেহায়া টাইপ প্রেমিক হয়। ভার্সিটিতে উঠেই যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলাম, যার জন্য খাতা ভর্তি করে কবিতা লিখেছিলাম, সে ভালোবাসতো এক ক্রিকেটারকে, সেই ক্রিকেটার ভালোবাসতো ওই মেয়েটিরই ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে। আমি ওর হয়ে সেই ক্রিকেটারের সঙ্গে দেখা করতে যাই দিনাজপুরে। বলাবাহুল্য, দিনাজপুর থেকে আমি গলা ধাক্কা খেয়েই বিদায় হই। আর আমার সেই প্রেমিকাটি রাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে আমেরিকা চলে যায়, নিজের দ্বিগুণ বয়সী এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করে।
সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এর শোধ নেবো। আমিও একদিন বিদেশ থেকে অনেক নাম-টাকা কামিয়ে দেশে এসে ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিয়ে যাবো কোন ছোকরার অমূল্য ধন। যেহেতু বাংলা ছবির নায়ক নই, সেহেতু প্রতিশোধ নেয়া হয়নি, কেবল কয়েকটা দিন বালিশ ভিজিয়েছি। অনেকেরই ধারণা ছেলেরা কাঁদে না। তারা যদি আমার কান্নার ইতিহাস রাখতো আমাকে পুরুষ জাতির কলঙ্ক বানিয়ে ছাড়তো।
কিন্তু এই সব ছাইপাশ কেন লিখছি তোমাকে। তিলোত্তমা, মানুষ মরার আগে স্মৃতি রোমন্থন করে। আমি কী সেই সময়ের কাছে চলে এসেছি। জানি না। আচ্ছা, আমি যদি এখন তোমাকে ভালোবাসি, তোমার প্রেমে পড়ি, এই চিঠিটা যদি তোমাকে পাঠাই, তুমি কী আমাকে স্যান্ডেল দেখাবে, তোমার মহল্লার লোক দিয়ে ধোলাই খাওয়াবে… না, ও সব দিন গেছে। এখন হয়তো আনফ্রেন্ড করে দেবে, ব্লক করে দেবে, সিমটা চেঞ্জ করে দেবে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ এখন যতো সহজ বিচ্ছিন্নতা তার চেয়েও সহজ। তুমি আবার বিচ্ছিন্নতা ব্যাপারটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারো, আমার ধারণা। আজো তো একবার ফোনেও কণ্ঠ শুনতে দিলে না। এতো সাবধানতা! না হয় একটু…
আচ্ছা, আমার একটা জিনিস ইচ্ছা করে, আমরা দুজন বেরিয়ে যাবো, একটা ছোট্ট লাল রঙের মারুতি নিয়ে, লাল আমার খুব প্রিয়, আর মারুতি গাড়িটা শস্তায় ভালো চলে। আমরা এ দেশের ৬৪টা জেলা ঘুরবো। সব জেলার স্পেশাল খাবার খাবো, জানোই তো, আমি পেটুক, সব জেলার বিশেষ জায়গাগুলো ঘুরে দেখবো। ছবি তুলবো না। ছবি তুললে মনের মধ্যে স্মৃতিগুলো জমে না, মন পড়ে থাকে ক্যামেরার ভরসায়। যাই হোক ঘুরতে ঘুরতে আমরা দিন রাত্রি পার করে দেবো। হোটেলের এক রুমে উঠবো, কিন্তু বিছানা আলাদা, আমরা তো স্বামী-স্ত্রী নই, প্রেমিক-প্রেমিকা নই, আবার হোটেলে আলাদা রুম নিলেও সন্দেহ, তাই অভিনয়টা থাকবে। তারপর ফ্রাঙ্ক কাপরার সেই ‘ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট’ ছবির মতো হোটেলের ঘরে দুজনের মাঝখানে পর্দা টানিয়ে ঘুমাবো, অথবা জেগে জেগে রাত পার।
প্রশ্ন করতে পারো, এই যাত্রার উদ্দেশ্য কি! উত্তরটা অনধিকার চর্চা হতে পারে, তবু বলি, যাবতীয় আনন্দ, ফূর্তি, ভ্রমণ-ঘোরাঘুরির আড়ালে আমরা খুঁজবো তোমার বাবাকে। যদি পেয়ে যাই, তাহলে আমাকে একটা চুম্বন দিয়ো। বহু বছর যৌনতা ছাড়া চুম্বন খেয়ে দেখিনি, বহু বছর রুটিন ছাড়া চুম্বন খেয়ে দেখিনি।
আর যদি খুঁজে না পাই, তাহলে ৬৪ জেলা খোঁজা শেষ হলে, আমি হতাশ হয়ে বসে পড়বো পা মেলে। তুমি আমার পায়ে, কোলে অথবা বুকে মাথা রেখে কেঁদো, কাঁদতে কাঁদতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে তোমার, আমি তোমাকে জল-হাওয়া খাইয়ে ঠিক করবো। তারপর বলবো, কোথায় যাবে মেয়ে? যেখানে যেতে চাও বলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দেবো।
আর যদি তোমার কোন যাওয়ার জায়গা না-থাকে, আমার লুকানো জায়গাটা তোমাকে দিয়ে বলবো, এইখানে থাকো। কাঁচামরিচ লাগাও, পুঁই শাক বোনো, মাঝে মাঝে চড়ুইভাতি হবে। না, কোনো স্থায়ী বন্দবস্ত নয়, অস্থায়ী এই জীবনে তোমার সাথে একটু পিকনিক হতে পারে। কলাপাতায় দুটো ভাত, একটা মরিচ একটু পুঁইশাক, আমি খুশি। তুমি?
রাজী থাকলে জানিও, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া করা যেতে পারে। আর রাজী না থাকলে বলো- ধুরো বুড়ো হাবড়া ফাজলামি রাখ, এখন তোর কবরে যাওয়ার সময়, প্রেম-ফ্রেম ছেড়ে তসবি দানা টেপ। না, আমার বিশ্বাস আর অভ্যাস অথবা বদভ্যাস কেবল ভালোবাসায়।
আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম। সেই মেয়েটাকে আমি কাপুরুষের মতো ছেড়ে এসেছি। কিন্তু তাকে ছেঁড়ে আসার অনুশোচনা আমার যায়নি। আমি একটা কালো মেয়েকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার মা কালো মেয়েদের ঘৃণা করে। আমার বৌ খুব ফর্সা। কিন্তু বাঙালিরা খুব ফর্সা হয় কীভাবে? আমরা তো আদতে কালোর জাত। আমাদের তো মা কালী ছিলো, আমাদের তো শ্রীকৃষ্ণ ছিলো। তারপর আমাদের এখানে আরব এলো, ইংরেজ এলো, পর্তুগীজ এলো। গিজগিজ করে কতো রঙ আর কতো চেহারা এলো। বাঙালির চেহারা বদলে গেলো। আমাদের ধর্ম-বর্ণ বদলে গেলো। আমরা ফর্সা হওয়ার অহঙ্কারে আস্ফালন করলাম। কিন্তু ভালোবাসা ছিলো কালো মেয়েটির বুকে, বাঙালি মেয়েদের পুরুষ্ট বুকে ভালোবাসা থাকে।
তিলোত্তমা, তুমি শায়লার মতো। তোমার আবলুশ কালো রঙ, টানা চোখ, পুরুষ্ট ঠোঁট, সাদা দাঁত আমাকে যৌবনে নিয়ে যায়। অনুশোচনায় নিয়ে যায়। তোমার বাবা তোমার মাকে ছেঁড়ে গেছে। তার অপরাধ ছিলো সে কালো এবং তোমার মতো একটা কালো মেয়েকে জন্ম দিয়েছে। আমি তোমার মতো একটা কালো মেয়ের বাবা হতে চেয়েছিলাম। আমি কিসসু হতে পারিনি। আমার তাতে কিসসু যায় আসে না। আমি একটু ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। মিথ্যে বলবো না, শায়লাকে আমি এখনও ভালোবাসি। তোমাকেও আমি ভালোবাসবো। ভালোবেসে একটা জীবন পার করে দেয়ে যায়। আসো, ভালোবাসি।
তুমি বলবে, ‘প্যারা’ নিয়ে লাভ নাই। এইসব ভালোবাসাবাসি প্যারার ব্যাপার। আচ্ছা মানুষ সারা জীবন ইংরেজি লাভ রেখে বাংলা লাভের পেছনে এতো ছোটে কেন, এমনি এমনি হরলিক্স খাওয়া গেলে ভালোবাসা যাবে না। আমি তো এমনি এমনি তোমাকে ভালোবাসি।
তুমি কি আমাকে মিথ্যাবাসো? মন্দবাসো? ঘৃণাবাসো? একটু ভালোবাসতে পারো না?
ভালোবেসে দেখো। এখন আমি তৈরি হয়ে আছি। মা, বউ, বাচ্চা, সমাজ, সংসার- সবকিছু আমি ছাড়তে তৈরি আছি আমি। চলো একটা নতুন জীবন আমরা খুঁজে নেই। তাহলে চলো না একদিন বৃষ্টিতে ভিজি, একদিন ঝাল দিয়ে চটপটি খেয়ে হেঁচকি তুলি, একদিন কৃষ্ণচূড়া ফুল তোমার মাথায় দিয়ে নিতাই হয়ে বলি, ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দো ক্যানে, রাঙা চুলে কালো কুসুম হেরেছো কি দুই নয়ানে?’
বন্ধুরা বলে, আমি একটা হারামী। এক ঠ্যাং কবরে চলে গেছে এখনও আমি নামাজ-রোজা করি না। আর মেয়েদের পেছনে ছুটে বেড়াই। ওরা ভুল বলে। আমার মরার সময় হয়নি, আমার সময় হয়েছে ভালোবাসার। আমি ছুটি ভালোবাসার পেছনে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি তিলোত্তমা মুখার্জি।