ঢাকা ০৫:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

কালোজামে ডায়াবেটিসসহ অনেক সমস্যার সমাধান

  • আপডেট সময় : ০৯:১৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • ১৫৪ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক : গ্রীষ্মকালীন কালোজাম অন্যান্য ফলগুলোর মতো জাম একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম হলেও এটি পুষ্টিগুণে অতুলনীয়। এই গরমে প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কালো জামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না। ফলে কালো জাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। চিরসবুজ কালোজাম উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিয়াম কামিনি। কালোজাম গাছের উদ্ভব হয় দক্ষিণ এশিয়া, সিলন, আন্দামান ও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজাম ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। আমাদের দেশে কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় কালোজাম বেশি উৎপন্ন হয়। কালোজাম ফল লম্বাটে ডিম্বাকার। শুরুতে এটি সবুজ থাকে যা পরে গোলাপী হয় এবং পাকলে কালো বা কালচে বেগুনি হয়ে যায়। এটি খেলে জিহ্বা বেগুনি হয়ে যায়। কালোজাম পুষ্টিতে ভরা। কালোজামের বিচিও অনেক রোগের দাওয়াই। কালোজামের রয়েছে হাজারো স্বাস্থ্য উপকারিতা। কালোজামে আছে ওষুধি গুণ। ১০০ গ্রাম কালোজামে রয়েছে শক্তি ৬০ কিলোক্যালরী, শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩.০ আন্তর্জাতিক একক, থায়ামিন বি১ ০.০০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০১২ মিলিগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.২৬০ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লোহা ০.১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, পানি ৮৩.১৩ গ্রাম। গরমে বেশি করে কালোজাম খেলে নানা রোগ থেকে নিস্তার মিলবে। সেই সঙ্গে আপনার সারা বছরের পুষ্টির চাহিদাও মেটাবে। রক্তের টক্সিন দূর করা থেকে শুরু করে হাড় মজবুত করা। সব জায়গায় এর রয়েছে গুণাগুণ। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জাম হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কালোজাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো। কালোজামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ কালোজাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কালোজাম অপরিহার্য। ডায়াবেটিস মোকাবিলায় অব্যর্থ কালোজাম। তাই প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কালোজামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না। ফলে কালোজাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে কালোজামের শাঁসের থেকে অনেক বেশি উপকারি কালোজামের বীচি। কালোজামের বীজে থাকে জাম্বোলিন; যা স্টার্চ সুগারে পরিণত করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজাম।
ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী কালোজাম। কালোজাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যানসারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে কালোজামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।
কালোজাম মানসিকভাবে সতেজ রাখে। কালোজামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। কালোজাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর করে কালোজাম। কালোজামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এই ফল ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই । এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠা-া এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে রেয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। জাম ফলটি ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা সু-স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জামে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লৌহ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে। তাই হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। জামে আছে অ্যালজিনিক এসিড বা অ্যালজিট্রিন, অ্যান্থোসিয়ানিন এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস এর মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-সমৃদ্ধ যা অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালো রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও এটি পটাসিয়াম-এর একটি সমৃদ্ধ ভা-ার, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকির কারণ।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কালোজাম। কালোজামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কালোজাম। কালোজামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে। কালোজাম চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য কালোজাম ভীষণ উপকারী। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগজীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। কালোজামের রস এ জীবাণুকে মেরে ফেলে। ডায়াবেটিসের রক্ষা কবচ কালো জামের বীজ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়া করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রথমেই জামের বীজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর এক সপ্তাহ রোদে খুব ভালো করে শুকিয়ে নিন। বীজের খোসা ছাড়িয়ে সবুজ অংশ বের করে নিন। সবুজ অংশগুলো ভেঙ্গে আবারও রোদে ৩ থেকে ৪ দিন শুকিয়ে নিন। এরপর মিক্সিতে খুব ভালো করে গুঁড়া করে নিন। গুঁড়া করার পর চালনিতে চেলে তার থেকে বড় দানাগুলো বের করে নিন। এরপর একটি এয়ারটাইট কন্টেনারে এই গুঁড়া সংরক্ষণ করুন। একগ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বীজের গুঁড়া মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কালোজামে ডায়াবেটিসসহ অনেক সমস্যার সমাধান

আপডেট সময় : ০৯:১৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

লাইফস্টাইল ডেস্ক : গ্রীষ্মকালীন কালোজাম অন্যান্য ফলগুলোর মতো জাম একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম হলেও এটি পুষ্টিগুণে অতুলনীয়। এই গরমে প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কালো জামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না। ফলে কালো জাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। চিরসবুজ কালোজাম উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিয়াম কামিনি। কালোজাম গাছের উদ্ভব হয় দক্ষিণ এশিয়া, সিলন, আন্দামান ও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজাম ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। আমাদের দেশে কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় কালোজাম বেশি উৎপন্ন হয়। কালোজাম ফল লম্বাটে ডিম্বাকার। শুরুতে এটি সবুজ থাকে যা পরে গোলাপী হয় এবং পাকলে কালো বা কালচে বেগুনি হয়ে যায়। এটি খেলে জিহ্বা বেগুনি হয়ে যায়। কালোজাম পুষ্টিতে ভরা। কালোজামের বিচিও অনেক রোগের দাওয়াই। কালোজামের রয়েছে হাজারো স্বাস্থ্য উপকারিতা। কালোজামে আছে ওষুধি গুণ। ১০০ গ্রাম কালোজামে রয়েছে শক্তি ৬০ কিলোক্যালরী, শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩.০ আন্তর্জাতিক একক, থায়ামিন বি১ ০.০০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০১২ মিলিগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.২৬০ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লোহা ০.১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, পানি ৮৩.১৩ গ্রাম। গরমে বেশি করে কালোজাম খেলে নানা রোগ থেকে নিস্তার মিলবে। সেই সঙ্গে আপনার সারা বছরের পুষ্টির চাহিদাও মেটাবে। রক্তের টক্সিন দূর করা থেকে শুরু করে হাড় মজবুত করা। সব জায়গায় এর রয়েছে গুণাগুণ। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জাম হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কালোজাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো। কালোজামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ কালোজাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কালোজাম অপরিহার্য। ডায়াবেটিস মোকাবিলায় অব্যর্থ কালোজাম। তাই প্রতিদিন কালোজাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কালোজামে সুক্রোজ একেবারেই থাকে না। ফলে কালোজাম রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে কালোজামের শাঁসের থেকে অনেক বেশি উপকারি কালোজামের বীচি। কালোজামের বীজে থাকে জাম্বোলিন; যা স্টার্চ সুগারে পরিণত করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজাম।
ক্যানসার প্রতিরোধে উপকারী কালোজাম। কালোজাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যানসারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে কালোজামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। জাম লড়াই করে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।
কালোজাম মানসিকভাবে সতেজ রাখে। কালোজামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। কালোজাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর করে কালোজাম। কালোজামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এই ফল ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই । এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠা-া এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে রেয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। জাম ফলটি ক্যালসিয়াম, লোহা, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা সু-স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জামে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও লৌহ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে। তাই হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের এবং বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। জামে আছে অ্যালজিনিক এসিড বা অ্যালজিট্রিন, অ্যান্থোসিয়ানিন এবং অ্যান্থোসায়ানাডিনস এর মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস-সমৃদ্ধ যা অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভালো রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও এটি পটাসিয়াম-এর একটি সমৃদ্ধ ভা-ার, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি, স্ট্রোক প্রভৃতির ঝুঁকির কারণ।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কালোজাম। কালোজামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন কালোজাম। কালোজামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে। কালোজাম চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য কালোজাম ভীষণ উপকারী। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগজীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। কালোজামের রস এ জীবাণুকে মেরে ফেলে। ডায়াবেটিসের রক্ষা কবচ কালো জামের বীজ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ খুবই উপকারী। ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়া করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রথমেই জামের বীজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর এক সপ্তাহ রোদে খুব ভালো করে শুকিয়ে নিন। বীজের খোসা ছাড়িয়ে সবুজ অংশ বের করে নিন। সবুজ অংশগুলো ভেঙ্গে আবারও রোদে ৩ থেকে ৪ দিন শুকিয়ে নিন। এরপর মিক্সিতে খুব ভালো করে গুঁড়া করে নিন। গুঁড়া করার পর চালনিতে চেলে তার থেকে বড় দানাগুলো বের করে নিন। এরপর একটি এয়ারটাইট কন্টেনারে এই গুঁড়া সংরক্ষণ করুন। একগ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বীজের গুঁড়া মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।