নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করেছেন। এই যাত্রায় কারো কাছে মাথা নত না করার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতা থেকে উদ্বৃত করে বলেন, “আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। কবি সুকান্তের ভাষায় বলে গেলাম।” মাধ্যমিক থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম’ উদ্বোধন, ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩’ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে, আত্মসম্মান নিয়ে চলবে, কারো কাছে মাথা নোয়াব না। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ছোট্ট সোনামনিদের কাছে আমার সেটাই (পরামর্শ), সব সময় মাথায় রাখতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি, কারো কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা উঁচু করে আমরা চলি, মাথা উঁচু করে চলব।
“আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল, কাজেই আমরাও পথ দেখাতে পারি।” শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান- তারা পারবে কিনা। সবাই সমস্বরে পারবে বলে জবাব দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের মানুষকে ভুলবে না। মানুষের জন্য কিন্তু সব। জাতির পিতা বলেছিলেন- শিক্ষিত ভাইয়েরা, আপনাদের লেখাপড়ার যে খরচ জনগণ দিয়েছে তা শুধু আপনাদের সংসার দেখবার জন্য নয়। দিয়েছে এই জন্য যে, তাদের জন্য আপনারা কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। জনগণের সেবা করতে হবে। জনসেবার চেয়ে আর কোনো কিছু বড় না।”
দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে শিক্ষিত জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটা কথা বলতেন- দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য শিক্ষাই হচ্ছে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। জাতির পিতা বলেছেন, শিক্ষায় যত অর্থই ব্যয় হোক এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না। তার জন্যই আজকে আমাদের সব উদ্যোগ এই শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা নিয়ে যাচ্ছি।”
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “বিশ্ব পরিবর্তনশীল, এই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আজকে প্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ, গবেষণার যুগ।”
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সরকারের নানা সৃজনশীল কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, আমাদের ছেলেমেয়েদের যে মেধা, সেই মেধা যদি বিকাশের সুযোগ আমরা দেই, তাহলে এই দেশকে কখনো কেউ আর পেছাতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাব।”
বিজ্ঞান, কারিগরি শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি শিক্ষাকে বহুমুখী করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা জায়গায় আমাদের গবেষণা একটু পিছিয়ে আছে, সেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণার ওপর আমি গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিতে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিন্তু অতটা করতে পারিনি।”
বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বাংলাদেশে এই প্রথম, ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। আর সেটা আছে বলেই আজকে আমাদের দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।”
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্মৃতি কর্মকার বলেন, মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের প্রায় ৫৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি এবং টিউশন ফি হিসেবে ১২’শ কোটি টাকা পাচ্ছেন। মোবাইলে আর্থিক সেবার মাধ্যমে এই উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ করা হবে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী পুরস্কার পায়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২২ পেয়েছেন ২২ জন শিক্ষার্থী।