নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিরা মুক্তির স্বাদ না পেলেও বিজয়ের আনন্দে ভেসেছেন দিনভর। স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ আর মন খুলে মনের কথা বলাই নয়, ছিল গান বাজনাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। নারী ও পুরুষ বন্দিরা ঢোল, হারমোনিয়াম, তবলা বাজিয়েছেন, গেয়েছেন গান। নাচ, আবৃত্তিতেও অংশ নিয়েছেন তারা। হৈচৈ করেই কেটেছে পুরো দিন। এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা। কারাপ্রধানও খেয়েছেন বন্দিদের খাবার। শুক্রবার এমন আনন্দমুখর পরিবেশই ছিল কষ্টগাঁথা কারাগারের বন্দিজীবনে।
কারাগর সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস ঘিরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লাল-সবুজ ঝলমলে বাতিতে বিজয়ের লাল-সবুজ রংয়ে সেজেছে কারাগারের ভেতরের চারদেয়াল। বন্দিদের কাছে এই চার দেয়াল অন্ধকার কোঠরি বা অভিশপ্ত হিসেবে পরিচিত হলেও লাল-সবুজ আলোকসজ্জা ওই দেয়াল থেকে মুছে দিয়েছিল অপরাধ আর অপরাধীর সঙ্গে দিন কাটানোর ছাপ। ভেতরে নানা আল্পনা আঁকা, ফেস্টুন আর বিজয়ের গান, বঙ্গবন্ধুর ভাষন। নারী বন্দিদের তুলির আচড়ে কারাগারের দেয়াল হয়ে ওঠে বিখ্যাত এক চিত্রশালা, বললেন এক কারা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বন্দিদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক প্রতিভাবান। এদিন কারাকর্মকর্তারা বন্দিরে শোনালেন বিজয়ের প্রকৃত ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ইতিহাস। বড় পর্দায় দেখানো হয় ৫১ বছরে পা দেওয়া বাংলাদেশের উন্নয়মমূলক কর্মকান্ড। এছাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সর্বোপরি ডজিটাল বাংলাদেশের ডকুমেন্টারি।
এদিকে কারাকর্মকর্তাদের তাদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য আবৃত্তি, গান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার খবর পাওয়া গেছে মেহেরপুর জেলা কারাগার থেকে। কারাগারটির সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ ঢাকা টাইমসকে বলেন, কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশ মোতাবেক বন্দিদের জন্য সব আয়োজন করা হয়েছে। মাংস পোলাওসহ বিশেষ খাবার দেওয়া হয়েছে। স্বজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই দেখা করেছেন তারা।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সব কারাগারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দিদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাবার। সকালের নাস্তায় হয়েছে সেমাই, পায়েস, চা। দুপুরে পোলাও, মুরগির মাংস, ধর্ম ও রুচি অনুযায়ী গরুর মাংস, খাসির মাংস মাছ, কোল্ড ড্রিংকস (কোমল পানীয়)। আর রাতের মেন্যুতে রয়েছে- ডিম ও আলুর দম। এক প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, বিজয় দিবসে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি আর সাধারণ বন্দিদের জন্য একই খাবারের মেন্যু সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিন ডিভিশনপ্রাপ্ত (ভিআইপি) বন্দিদের জন্য ভিন্ন মেন্যু করা হলেও আজ একই খাবার দেওয়া হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক আরও জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তার কাছে খবর আছে যে, সব বন্দিরা সকাল ও দুপুরের খাবার খেয়েছেন। সন্ধ্যায় নাচ-গান, আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক অনুণ্ঠান শেষ হলে সকলে নিজ নিজ ওয়ার্ড, সেল ও ডিভিশনে ফিরে যান। কারাবিধি অনুযায়ী, সন্ধ্যার আগেই সব অনুষ্ঠান শেষ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারের সব বন্দিকে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে এবং কোনা সংকট হয়নি বলেও জানান কারামহাপরিদর্শক। দেশের সব কারাগারে এই মুহূর্তে ৮০-৮৫ হাজার নারী ও পুরুষ বন্দি রয়েছেন। কারাসূত্র জানায়, প্রতিটি কারাগারের খাবারের মান তত্ত্বাবধান করেন কারামহাপরিদর্শক। এই কারামহাপরিদর্শক যোগদানের পর থেকে রান্নার মান তদারকির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। রান্নার সঙ্গে সঙ্গে ছবি পাঠাতে হয় কারাপ্রধানকে। কারা অধিদপ্তরের অধীনে দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৪৫০ জন।
কারাগারে নেচে-গেয়ে বিজয় দিবস উদযাপন ৮০ হাজার বন্দির
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ