ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

কারও কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অক্টোবর ২০২১
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কোনো সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে তার মনে হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন থেকে এসে গতকাল সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে হয় রিফিউজি পালাটা একটা ব্যবসা কোনো কোনো সংস্থার জন্য। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। এটা হল আসল কথা।”
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সঙ্কট এবার পঞ্চম বছরে গড়িয়েছে, কিন্তু নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর একজনকেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
এ বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি। মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।”
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকা-ে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না।
“আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়, রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের মনে হয় লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই, যান মিযানমারে, ওখানে ঘর করেন, ইশকুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, (তাদের কাছে) সব কিছুই যেন একটা ব্যবসা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংস্থা আছে, যারা রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে বরাবারই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার এই চাপে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষত হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি চলছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগৃ এই ড্রাগ পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।”
মুজিববর্ষে জাতিসংঘে বৃক্ষরোপণ দেশের জন্য বিরল সম্মান : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরে বৃক্ষরোপণ দেশের জন্য বিরল সম্মান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্থায়ী বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। তার নিচে একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে কোনও রাজনৈতিক নেতার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরল সম্মান। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমরা আলোচনা করি, বৃক্ষরোপণ আমাদেরও লক্ষ্য। বাংলাদেশে আমরা সেটি করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ সদর দফতর প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করতে পারা সত্যেই আমার জন্য আনন্দের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে, এই পুরস্কার তারই বিশ্ব স্বীকৃতি। আমি দেশের জনগণকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দিয়েছি। আমি কোভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি।’
তিনি বলেন, ‘টিকা বৈষম্য দূরীকরণে আমি কোভিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। আমি কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি কমানো, ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান, টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের অনুরোধ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘চলমান মহামারির প্রকোপে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক আমি জাতিসংঘকে অংশীদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই। অভিবাসী বহনকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে আমি আবারও বিশ্বনেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেই যে রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতেই এর সমাধান। টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই। আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে সবুজ প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লগ অ্যান্ড ভ্যাসের এবং জলবায়ুজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত জনগণের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক কার্যকর ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরি। তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গঠন এবং নারী নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধাদি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে উল্লেখ করে আমি কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহযোগিতা কামনা করি। এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল। বিশেষত, কোভিড-১৯ টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা ও মহামারি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত শীর্ষ সভাসমূহে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেখানে আমাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাও বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করেছি, যা সব মহলে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।’
২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্র ও সংগঠনের প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম প্রথম তো একটু খাওয়াতেই হয়: সরকার কৃষিপণ্য রফতানির দিকে নজর দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আমের স্বাদ একদম আলাদা। এবার আম পাঠালাম। প্রথম প্রথম তো একটু খাওয়াতেই হয়। তারপর আস্তে আস্তে পাঠাতে হয় তাই না…সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এ বছর আমের মৌসুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আম পাঠিয়েছেন। কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার এবং রফতানির দিকটি মাথায় রেখে এই আম পাঠানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য রফতানির দিকে নজর দিচ্ছি। তার জন্য প্রথমেই দরকার ফসল ক্ষেত থেকে তোলার পর তা সংরক্ষণ এবং কার্গোতে তুলে দেওয়া। তার জন্য কার্গো ভিলেজ করতে হবে। যেখানে বিভিন্ন চেম্বার থাকবে। কোন ফসল-কোন তরকারিটা হবে, কোনটা কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালো থাকে—এগুলোর কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল আছে। আর আমি নিজে নেদারল্যান্ডসে দেখেছি, আমাদের দেশেও এটা করবো। ক্ষেত থেকে কার্গোতে নিয়ে আসার জন্য সেই ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এখন আমরা কার্গো ভাড়া করে বিদেশে পাঠাই, কিন্তু আমাদের নিজস্ব কয়েকটা কার্গো দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টমেটোর জন্য আলাদা চেম্বার, অন্যান্য সবজির জন্য আলাদা চেম্বার করতে হবে। আমাদের যে অঞ্চলে যে ফসল ভালো হবে, ওই ফসলের প্রক্রিয়াজাত করে যদি আমরা রফতানি করতে পারি, তাহলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো। আমি মনে করি, কৃষিপণ্য রফতানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে আইসিটি ডিভাইস রফতানি। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা। এভাবে একটার পর একটা করলে বাংলাদেশে আর কোনও আর্থিক সমস্যা থাকবে না।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কারও কারও কাছে রিফিউজি পালা একটা ব্যবসা: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অক্টোবর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও আশাব্যাঞ্জক সাড়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কোনো সংস্থা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী করে রাখতেই বেশি আগ্রহী বলে তার মনে হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন থেকে এসে গতকাল সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মনে হয় রিফিউজি পালাটা একটা ব্যবসা কোনো কোনো সংস্থার জন্য। রিফিউজি না থাকলে তাদের চাকরিই থাকবে না। এটা হল আসল কথা।”
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সঙ্কট এবার পঞ্চম বছরে গড়িয়েছে, কিন্তু নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর একজনকেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
এ বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি। মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।”
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকা-ে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না।
“আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়, রিফিউজি থাকলে কিছু লোকের মনে হয় লাভই হয়। অনেক প্রস্তাব আসে রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে অনেক কিছু করে দিতে চায়। আমি সোজা বলে দিই, যান মিযানমারে, ওখানে ঘর করেন, ইশকুল করেন, এখানে করা লাগবে না। আমার কাছে যেটা মনে হয়, (তাদের কাছে) সব কিছুই যেন একটা ব্যবসা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংস্থা আছে, যারা রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে বরাবারই ভালো সাড়া দিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সেই আগ্রহ দেখায় না। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার এই চাপে কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষত হচ্ছে, সে কথা জাতিসংঘে তুলে ধরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে নানা ধরনের অসঙ্গতি চলছে, নারী পাচার, শিশু পাচার, সবচেয়ে বড় ড্রাগৃ এই ড্রাগ পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা (রোহিঙ্গারা)। যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক। “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলছি, এটা সেখানে হচ্ছে, আরও হবে, যদি প্রত্যাবাসন না হয়।”
মুজিববর্ষে জাতিসংঘে বৃক্ষরোপণ দেশের জন্য বিরল সম্মান : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরে বৃক্ষরোপণ দেশের জন্য বিরল সম্মান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্থায়ী বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। তার নিচে একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে কোনও রাজনৈতিক নেতার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরল সম্মান। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমরা আলোচনা করি, বৃক্ষরোপণ আমাদেরও লক্ষ্য। বাংলাদেশে আমরা সেটি করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ সদর দফতর প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করতে পারা সত্যেই আমার জন্য আনন্দের।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে, এই পুরস্কার তারই বিশ্ব স্বীকৃতি। আমি দেশের জনগণকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দিয়েছি। আমি কোভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি।’
তিনি বলেন, ‘টিকা বৈষম্য দূরীকরণে আমি কোভিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। আমি কোভিড-১৯ মহামারির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি কমানো, ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান, টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের অনুরোধ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘চলমান মহামারির প্রকোপে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখপূর্বক আমি জাতিসংঘকে অংশীদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই। অভিবাসী বহনকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে আমি আবারও বিশ্বনেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেই যে রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতেই এর সমাধান। টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই। আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে সবুজ প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লগ অ্যান্ড ভ্যাসের এবং জলবায়ুজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত জনগণের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক কার্যকর ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরি। তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গঠন এবং নারী নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধাদি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে উল্লেখ করে আমি কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহযোগিতা কামনা করি। এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল। বিশেষত, কোভিড-১৯ টিকার সর্বজনীন প্রাপ্যতা ও মহামারি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত শীর্ষ সভাসমূহে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেখানে আমাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাও বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করেছি, যা সব মহলে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।’
২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্র ও সংগঠনের প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম প্রথম তো একটু খাওয়াতেই হয়: সরকার কৃষিপণ্য রফতানির দিকে নজর দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আমের স্বাদ একদম আলাদা। এবার আম পাঠালাম। প্রথম প্রথম তো একটু খাওয়াতেই হয়। তারপর আস্তে আস্তে পাঠাতে হয় তাই না…সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এ বছর আমের মৌসুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আম পাঠিয়েছেন। কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার এবং রফতানির দিকটি মাথায় রেখে এই আম পাঠানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য রফতানির দিকে নজর দিচ্ছি। তার জন্য প্রথমেই দরকার ফসল ক্ষেত থেকে তোলার পর তা সংরক্ষণ এবং কার্গোতে তুলে দেওয়া। তার জন্য কার্গো ভিলেজ করতে হবে। যেখানে বিভিন্ন চেম্বার থাকবে। কোন ফসল-কোন তরকারিটা হবে, কোনটা কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভালো থাকে—এগুলোর কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল আছে। আর আমি নিজে নেদারল্যান্ডসে দেখেছি, আমাদের দেশেও এটা করবো। ক্ষেত থেকে কার্গোতে নিয়ে আসার জন্য সেই ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এখন আমরা কার্গো ভাড়া করে বিদেশে পাঠাই, কিন্তু আমাদের নিজস্ব কয়েকটা কার্গো দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টমেটোর জন্য আলাদা চেম্বার, অন্যান্য সবজির জন্য আলাদা চেম্বার করতে হবে। আমাদের যে অঞ্চলে যে ফসল ভালো হবে, ওই ফসলের প্রক্রিয়াজাত করে যদি আমরা রফতানি করতে পারি, তাহলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো। আমি মনে করি, কৃষিপণ্য রফতানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে আইসিটি ডিভাইস রফতানি। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা। এভাবে একটার পর একটা করলে বাংলাদেশে আর কোনও আর্থিক সমস্যা থাকবে না।’