ঢাকা ০২:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

কাবুলে ড্রোন হামলায় বেসামরিক হত্যার কথা স্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের

  • আপডেট সময় : ১১:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৩০ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় ১০ নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে ২৯ অগাস্টের হামলায় ত্রাণ সংস্থার এক কর্মী ও তার পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছে বলে উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। নিহতদের মধ্যে শিশুই ৭টি। এর মধ্যে সবার ছোট সুমাইয়ার বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। তালেবানের ঝড়ের বেড়ে ক্ষমতা দখলের পর কাবুল থেকে বিদেশি কূটনীতিক, সেনা ও তাদের সহযোগীদের সরিয়ে নেওয়ার হযবরল পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরে হওয়া এক আত্মঘাতী হামলার কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্র একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ওই ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। দেশটিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর দুই দশকের অভিযানের একেবারে শেষ মুহুর্তে করা কাজগুলোর মধ্যে এই ‘মারাত্মক ভুল’টিও ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা প্রায় ৮ ঘণ্টা ওই ত্রাণ সংস্থার কর্মীর গাড়িটিকে অনুসরণ করেছিলেন; তাদের ধারণা ছিল গাড়িটি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, বলেছেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাককেনজি।
গাড়িটিকে আইএস আইএস খোরাসানের (আইএস-কে) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি কম্পাউন্ডে দেখা যায় এবং এর গতিবিধির সঙ্গে বিমানবন্দরে ফের হামলায় সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা নিয়ে অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়, বলছে মার্কিন তদন্ত প্রতিবেদন। এক পর্যায়ে নজরদারি করা একটি ড্রোন গাড়ির আরোহীদেরকে গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্কে কিছু একটা তুলতে দেখে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন, তারা বিস্ফোরক তুলেছে। পরে প্রমাণিত হয়, তা ছিল পানির কনটেইনার। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ‘নিহতরা আইএসের ছিল না’
কাবুল বিমানবন্দরে অগাস্টে আত্মঘাতী হামলায় প্রায় ২০০ নিহতের ঘটনার দায় স্বীকার করে নেয় আইএস-কে। তারা ফের হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দারা সতর্কও করেছিলেন। ওই সতর্কতার মধ্যেই ত্রাণ সংস্থার কর্মীর গাড়িতে ড্রোন হামলা হয়।
জেনারেল ম্যাককেনজি এই হামলাকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ অভিহিত করেন। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতায় তালেবানের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। জেমারি আহমাদি নামে ওই ত্রাণকর্মীর গাড়িতে যখন ড্রোন হামলাটি হয়, তখন সেটি তার বাড়ির উঠানে প্রবেশ করছিল, যা ছিল বিমানবন্দর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
হামলার পর সৃষ্ট বিস্ফোরণের পর আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মার্কিন কর্মকর্তারা আহমাদির গাড়িটি বিস্ফোরক বহন করছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন। কিন্তু পরে তদন্তে উঠে আসে, ওই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি সম্ভবত বাড়ির উঠানে থাকা প্রোপেন ট্যাঙ্কের কারণে হয়েছিল। সেদিনের ড্রোন হামলায় যারা নিহত হয়েছিল, তাদের মধ্যে আরেকজন আহমেদ নাসের, তিনি মার্কিন বাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন; নিহত অন্য একজন কাজ করতে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসাও ছিল তাদের কাছে। তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার আবেদন করেছিল এবং একটি ফোন কলের অপেক্ষায় ছিল; যে ফোন কলে তাদেরকে বিমানবন্দরে যেতে বলা হবে- ড্রোন হামলার পরদিন এমনটাই বলেছেন নিহতের স্বজনরা।
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, “এখন আমরা জানি, আহমাদির সঙ্গে আইএসআইএস-খোরাসানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেদিন তার কর্মকা- ছিল একেবারেই নিরীহ এবং যে ধরনের হুমকির মুখে ছিলাম বলে ধারণা ছিল আমাদের, তার সঙ্গে আহমাদির কোনো যোগই ছিল না।” “আমরা ক্ষমা চাইছি এবং ভয়াবহ এই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো,” বলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেধে দেওয়ার সময় অনুযায়ী ৩১ অগাস্ট শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়ে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

কাবুলে ড্রোন হামলায় বেসামরিক হত্যার কথা স্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের

আপডেট সময় : ১১:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় ১০ নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের তদন্তে ২৯ অগাস্টের হামলায় ত্রাণ সংস্থার এক কর্মী ও তার পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছে বলে উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। নিহতদের মধ্যে শিশুই ৭টি। এর মধ্যে সবার ছোট সুমাইয়ার বয়স ছিল মাত্র ২ বছর। তালেবানের ঝড়ের বেড়ে ক্ষমতা দখলের পর কাবুল থেকে বিদেশি কূটনীতিক, সেনা ও তাদের সহযোগীদের সরিয়ে নেওয়ার হযবরল পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরে হওয়া এক আত্মঘাতী হামলার কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্র একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ওই ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। দেশটিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর দুই দশকের অভিযানের একেবারে শেষ মুহুর্তে করা কাজগুলোর মধ্যে এই ‘মারাত্মক ভুল’টিও ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা প্রায় ৮ ঘণ্টা ওই ত্রাণ সংস্থার কর্মীর গাড়িটিকে অনুসরণ করেছিলেন; তাদের ধারণা ছিল গাড়িটি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, বলেছেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাককেনজি।
গাড়িটিকে আইএস আইএস খোরাসানের (আইএস-কে) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি কম্পাউন্ডে দেখা যায় এবং এর গতিবিধির সঙ্গে বিমানবন্দরে ফের হামলায় সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা নিয়ে অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়, বলছে মার্কিন তদন্ত প্রতিবেদন। এক পর্যায়ে নজরদারি করা একটি ড্রোন গাড়ির আরোহীদেরকে গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্কে কিছু একটা তুলতে দেখে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন, তারা বিস্ফোরক তুলেছে। পরে প্রমাণিত হয়, তা ছিল পানির কনটেইনার। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ‘নিহতরা আইএসের ছিল না’
কাবুল বিমানবন্দরে অগাস্টে আত্মঘাতী হামলায় প্রায় ২০০ নিহতের ঘটনার দায় স্বীকার করে নেয় আইএস-কে। তারা ফের হামলা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দারা সতর্কও করেছিলেন। ওই সতর্কতার মধ্যেই ত্রাণ সংস্থার কর্মীর গাড়িতে ড্রোন হামলা হয়।
জেনারেল ম্যাককেনজি এই হামলাকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ অভিহিত করেন। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতায় তালেবানের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। জেমারি আহমাদি নামে ওই ত্রাণকর্মীর গাড়িতে যখন ড্রোন হামলাটি হয়, তখন সেটি তার বাড়ির উঠানে প্রবেশ করছিল, যা ছিল বিমানবন্দর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
হামলার পর সৃষ্ট বিস্ফোরণের পর আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মার্কিন কর্মকর্তারা আহমাদির গাড়িটি বিস্ফোরক বহন করছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন। কিন্তু পরে তদন্তে উঠে আসে, ওই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি সম্ভবত বাড়ির উঠানে থাকা প্রোপেন ট্যাঙ্কের কারণে হয়েছিল। সেদিনের ড্রোন হামলায় যারা নিহত হয়েছিল, তাদের মধ্যে আরেকজন আহমেদ নাসের, তিনি মার্কিন বাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন; নিহত অন্য একজন কাজ করতে আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসাও ছিল তাদের কাছে। তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার আবেদন করেছিল এবং একটি ফোন কলের অপেক্ষায় ছিল; যে ফোন কলে তাদেরকে বিমানবন্দরে যেতে বলা হবে- ড্রোন হামলার পরদিন এমনটাই বলেছেন নিহতের স্বজনরা।
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, “এখন আমরা জানি, আহমাদির সঙ্গে আইএসআইএস-খোরাসানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেদিন তার কর্মকা- ছিল একেবারেই নিরীহ এবং যে ধরনের হুমকির মুখে ছিলাম বলে ধারণা ছিল আমাদের, তার সঙ্গে আহমাদির কোনো যোগই ছিল না।” “আমরা ক্ষমা চাইছি এবং ভয়াবহ এই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো,” বলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেধে দেওয়ার সময় অনুযায়ী ৩১ অগাস্ট শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়ে।