ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কাপ্তান বাজারের চাঁদাবাজিতে নতুন মুখ, পরিত্রাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি

  • আপডেট সময় : ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য কমেনি রাজধানীর একমাত্র মুরগির পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজারে। তবে বদল হয়েছে চাঁদাবাজের চেহারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যাওয়া দখলদারদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন চেহারার পাশাপাশি বেড়েছে চাঁদার হারও। সিটি করপোরেশনের খাস আর অবৈধ চাঁদায় অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। ‘মুরগিপট্টি খ্যাত’ এই পাইকারি বাজারের চাঁদাবাজি ও দখলদারির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। কাপ্তান বাজার এলাকার সড়ক দখল করে অবৈধ মুরগির বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে তুলেছে তারা। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন যে গোষ্ঠী চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা সড়কের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ৪০-৪৫টি ভিটা দখলে নিয়েছে। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নতুন লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব ভিটা। নতুন করে বিপাকে পড়েছেন কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা। নতুন নিয়ন্ত্রণে এখান থেকে প্রতিদিন ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে সূত্র জানায়। জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ করে এই অবৈধ মুরগি বাজার। এরপর কয়েক দিন কাপ্তান বাজারে অবৈধ দোকান বসেনি। কিন্তু ১ নভেম্বর রাতে সড়ক দখলে নেয় নতুন চক্র। বসাতে থাকে দোকান। তবে পুরনো অনেককে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন লোক বসিয়ে নতুন রেটে টাকা নিচ্ছে তারা। এই মুরগির বাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভোগান্তির আরেক নাম। রাত ১১টার পর মুরগিবোঝাই শত শত ট্রাক-পিকআপে কাপ্তান বাজার, জয়কালী মন্দির, নবাবপুর ও গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ওপরে যানজট লেগে যায়। স্থানীয় লোকজন রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে না। জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১১টার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুরগিভর্তি শত শত ট্রাক আসতে থাকে কাপ্তানবাজারে। মুরগিবাহী এসব ট্রাক কাপ্তান বাজার এলাকায় আসা মাত্র চাঁদাবাজরা গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতি গাড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকা নিত। এখন তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুরগির ব্যবসায়ী জানান, আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা টাকা তুলত। তাদের হটিয়ে এখন নতুন একটি গোষ্ঠী চাঁদা তুলছে। এই দলে রয়েছে নিয়াজ মুর্শেদ জুম্মন, নুর ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দেননি তিনি। জানতে চাইলে নুর ইসলাম কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন কারা চাঁদা তুলছে।’ আর নিয়াজ মুর্শেদ জুম্মানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরকার পতনের পর ভিটা ভাড়া দেওয়ার কথা বলে এরশাদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টানা নেন মনির ওরফে হোটেল মনির। কিন্তু তাকে ব্যবসা করার জন্য জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে মনির বলেন, ‘তাকে (এরশাদ) জায়গা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ব্যবসা করতে আসেন না। যারা জায়গা ইজারা নিয়েছেন, তাদের দেওয়া হয়েছে এরশাদের টাকা।’ তবে কারা ইজারা নিয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই বাজার এখনো কাউকে ইজারা দেয়নি বলে জানা যায়। করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, ‘কাপ্তান বাজারের মুরগিপট্টি ইজারার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে সিটি করপোরেশনের খাস আদায় করা হচ্ছে সেখানে।’ এদিকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর চিঠি দিয়েছেন কাপ্তান বাজার পোল্ট্রি মুরগি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতারা। তারা আইনসিদ্ধভাবে এবং সমিতির মাধ্যমে মুরগির বাজার পরিচালনা করতে চান। এই সমিতির সভাপতি বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের আমলে স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বহু ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তারা সমিতির নেতাদের নির্যাতন করে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাজারছাড়া করে।’ গত বছরের ৪ অক্টোবর আইনসিদ্ধভাবে বাজারটি পরিচালনার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাবর আবেদন করেছিলেন জানিয়ে সমিতির সভাপতি বলেন, কিন্ত আশানুরূপ কোনো ফল পাইনি। নানা কারসাজিতে বাজারে চাঁদাবাজি বহাল ছিল। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর নতুন একটি গোষ্ঠী বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারি শুরু করেছে বলে অভিযোগ সমিতির সভাপতির। তিনি বলেন, ‘দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা বিভিন্নভাবে চাঁদার হার বাড়িয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ীদের ভিটা দখল নিয়ে নতুন করে ১ থেকে ২ লাখ টাকা নিচ্ছে। প্রতি রাতে ৮-৯ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে।’ তারা আইনসিদ্ধভাবে ও সমিতির মাধ্যমে বাজার পরিচালনা করতে চান জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখলদারি থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চিঠি দিয়েছি। আমরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে মুরগির বাজার পরিচালনা করতে চাই।’ এদিকে কাপ্তান বাজারসংলগ্ন সড়ক দখল করে মুরগির ব্যবসা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। শনিবার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি তোলেন সংগঠনের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, প্রতিরাতে দক্ষিণ ঢাকার কাপ্তান বাজার দখল করে অবৈধভাবে মুরগির ব্যবসা চালাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এর ফলে চিটাগাং থেকে ঢাকামুখী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সগুলো যানজটে পড়ছে। এতে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।’ আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, ‘অবৈধ বাজারের কারণে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে রাতের বেলা চলাচল করতে পারে না। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ছাত্র প্রতিনিধিরা যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করে। কিন্তু ১ নভেম্বরের পর সড়কে নতুন করে মুরগির বাজার বসিয়ে চাঁদা তুলছে নতুন চক্র।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত চাঁদাবাজির অভিযোগের তালিকায়ও নিয়াজ মোর্শেদ জুম্মন, নূর ইসলাম, লাল মিয়াসহ আরও কয়েক ব্যক্তির নাম উঠে আসে। আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, তাদের নির্দিষ্ট কোনো দলের রাজনৈতিক পরিচয় আমরা এখনো পাইনি। তবে তাদের পেছনে রাজনৈতিক দলের মদদ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। তারা প্রতিরাতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব ও তার লোকজন কাপ্তান বাজারের একচেটিয়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সরকার পতনের পর তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

কাপ্তান বাজারের চাঁদাবাজিতে নতুন মুখ, পরিত্রাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি

আপডেট সময় : ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশেষ সংবাদদাতা : ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য কমেনি রাজধানীর একমাত্র মুরগির পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজারে। তবে বদল হয়েছে চাঁদাবাজের চেহারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যাওয়া দখলদারদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন চেহারার পাশাপাশি বেড়েছে চাঁদার হারও। সিটি করপোরেশনের খাস আর অবৈধ চাঁদায় অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। ‘মুরগিপট্টি খ্যাত’ এই পাইকারি বাজারের চাঁদাবাজি ও দখলদারির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। কাপ্তান বাজার এলাকার সড়ক দখল করে অবৈধ মুরগির বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটে তুলেছে তারা। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠত বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন যে গোষ্ঠী চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা সড়কের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ৪০-৪৫টি ভিটা দখলে নিয়েছে। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নতুন লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব ভিটা। নতুন করে বিপাকে পড়েছেন কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা। নতুন নিয়ন্ত্রণে এখান থেকে প্রতিদিন ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে সূত্র জানায়। জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যৌথ বাহিনী উচ্ছেদ করে এই অবৈধ মুরগি বাজার। এরপর কয়েক দিন কাপ্তান বাজারে অবৈধ দোকান বসেনি। কিন্তু ১ নভেম্বর রাতে সড়ক দখলে নেয় নতুন চক্র। বসাতে থাকে দোকান। তবে পুরনো অনেককে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন লোক বসিয়ে নতুন রেটে টাকা নিচ্ছে তারা। এই মুরগির বাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভোগান্তির আরেক নাম। রাত ১১টার পর মুরগিবোঝাই শত শত ট্রাক-পিকআপে কাপ্তান বাজার, জয়কালী মন্দির, নবাবপুর ও গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ওপরে যানজট লেগে যায়। স্থানীয় লোকজন রাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে না। জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১১টার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুরগিভর্তি শত শত ট্রাক আসতে থাকে কাপ্তানবাজারে। মুরগিবাহী এসব ট্রাক কাপ্তান বাজার এলাকায় আসা মাত্র চাঁদাবাজরা গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতি গাড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকা নিত। এখন তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মুরগির ব্যবসায়ী জানান, আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা টাকা তুলত। তাদের হটিয়ে এখন নতুন একটি গোষ্ঠী চাঁদা তুলছে। এই দলে রয়েছে নিয়াজ মুর্শেদ জুম্মন, নুর ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দেননি তিনি। জানতে চাইলে নুর ইসলাম কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন কারা চাঁদা তুলছে।’ আর নিয়াজ মুর্শেদ জুম্মানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরকার পতনের পর ভিটা ভাড়া দেওয়ার কথা বলে এরশাদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টানা নেন মনির ওরফে হোটেল মনির। কিন্তু তাকে ব্যবসা করার জন্য জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে মনির বলেন, ‘তাকে (এরশাদ) জায়গা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ব্যবসা করতে আসেন না। যারা জায়গা ইজারা নিয়েছেন, তাদের দেওয়া হয়েছে এরশাদের টাকা।’ তবে কারা ইজারা নিয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই বাজার এখনো কাউকে ইজারা দেয়নি বলে জানা যায়। করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, ‘কাপ্তান বাজারের মুরগিপট্টি ইজারার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে সিটি করপোরেশনের খাস আদায় করা হচ্ছে সেখানে।’ এদিকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর চিঠি দিয়েছেন কাপ্তান বাজার পোল্ট্রি মুরগি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতারা। তারা আইনসিদ্ধভাবে এবং সমিতির মাধ্যমে মুরগির বাজার পরিচালনা করতে চান। এই সমিতির সভাপতি বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের আমলে স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বহু ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তারা সমিতির নেতাদের নির্যাতন করে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাজারছাড়া করে।’ গত বছরের ৪ অক্টোবর আইনসিদ্ধভাবে বাজারটি পরিচালনার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাবর আবেদন করেছিলেন জানিয়ে সমিতির সভাপতি বলেন, কিন্ত আশানুরূপ কোনো ফল পাইনি। নানা কারসাজিতে বাজারে চাঁদাবাজি বহাল ছিল। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর নতুন একটি গোষ্ঠী বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারি শুরু করেছে বলে অভিযোগ সমিতির সভাপতির। তিনি বলেন, ‘দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা বিভিন্নভাবে চাঁদার হার বাড়িয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ীদের ভিটা দখল নিয়ে নতুন করে ১ থেকে ২ লাখ টাকা নিচ্ছে। প্রতি রাতে ৮-৯ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে।’ তারা আইনসিদ্ধভাবে ও সমিতির মাধ্যমে বাজার পরিচালনা করতে চান জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দখলদারি থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চিঠি দিয়েছি। আমরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে মুরগির বাজার পরিচালনা করতে চাই।’ এদিকে কাপ্তান বাজারসংলগ্ন সড়ক দখল করে মুরগির ব্যবসা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। শনিবার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি তোলেন সংগঠনের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, প্রতিরাতে দক্ষিণ ঢাকার কাপ্তান বাজার দখল করে অবৈধভাবে মুরগির ব্যবসা চালাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এর ফলে চিটাগাং থেকে ঢাকামুখী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সগুলো যানজটে পড়ছে। এতে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।’ আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, ‘অবৈধ বাজারের কারণে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা এই পথ দিয়ে রাতের বেলা চলাচল করতে পারে না। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ছাত্র প্রতিনিধিরা যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করে। কিন্তু ১ নভেম্বরের পর সড়কে নতুন করে মুরগির বাজার বসিয়ে চাঁদা তুলছে নতুন চক্র।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত চাঁদাবাজির অভিযোগের তালিকায়ও নিয়াজ মোর্শেদ জুম্মন, নূর ইসলাম, লাল মিয়াসহ আরও কয়েক ব্যক্তির নাম উঠে আসে। আব্দুল্লাহ মেহেদী দীপ্ত বলেন, তাদের নির্দিষ্ট কোনো দলের রাজনৈতিক পরিচয় আমরা এখনো পাইনি। তবে তাদের পেছনে রাজনৈতিক দলের মদদ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। তারা প্রতিরাতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা চাঁদা তোলে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব ও তার লোকজন কাপ্তান বাজারের একচেটিয়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সরকার পতনের পর তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।