রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি কিছুটা দেরিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এ বছর শ্রাবণের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের ফলে মাত্রই কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ রয়েছে ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত। এই অবস্থায় মাছ আহরণ শুরু হলে পুরো মৌসুমেই মাছ সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। এই মুহূর্তে মাছ আহরণ শুরু হলে কারও কোনো উপকারে আসবে না। প্রথম কয়েকদিন ভালো মাছ পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি হিসাব করলে তা আমাদের লোকসান ডেকে আনবে।” সাধারণত আষাঢ় মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় মাছের ডিম ছাড়ার সুযোগ ও অবমুক্ত হওয়া মাছের পোনা বৃদ্ধির সুযোগ হয়। সেজন্য প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। তবে গত বছর বৃষ্টিপাত ও পানির স্তর কম থাকায় এ বছর ১৯ এপ্রিল থেকে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তিন মাসের এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ১৯ জুলাই শেষ হলেও হ্রদে পানি কম থাকায় জেলা প্রশাসন মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক মাস বৃদ্ধি করে। কিন্তু এরপরও কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা না মেলায় পানিও বৃদ্ধি পায়নি। পানির অভাবে অবমুক্ত করা মাছের পোনা সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া এবং অনেক মাছই ডিম ছাড়তে পারেনি। তবে সম্প্রতি টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র ৯ দিন।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে সহজেই পোনা মাছ জালে চলে আসবে। এতে পরবর্তীতে মাছের আকাল দেখা দিবে। যার ফলে তাদের যেমন লোকসানে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি জেলে ও কর্মচারীরাও কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাই তারা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাছ আহরণ বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের আবেদনে হ্রদে মাছ ধরায় ব্যবহৃত কেচকি জালের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার ফুটের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, বর্তমানে অনেকেই তিন-চার হাজার ফুট জাল ব্যবহার করার কারণে একসঙ্গে বেশি মাছ আহরণ করছেন। কিন্তু যথোপযুক্তভাবে বাজারজাত করতে না পারায় মাছগুলো অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এতে অনেক মাছই নষ্ট হয়ে পানিতে ফেলে দিতে হচ্ছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, হ্রদে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের দিকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের নতুন পোনা জন্মায়। সাগরের মত কাপ্তাই হ্রদেও প্রাকৃতিক উৎপাদিত মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দুই মাসে ৪০-৬০ দিন হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখা হোক।
এ ছাড়া মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে যে সাতটি অভয়াশ্রম আছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং আয়তনে অনেক ছোট। সেগুলোর আয়তন বৃদ্ধি এবং নতুন করে আরও দশটি অভয়াশ্রম সৃষ্টির পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজননস্থল তথা চ্যানেলসমূহ খনন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান তারা।
মাছ উৎপাদন ও কাপ্তাই হ্রদের রক্ষণাবেক্ষণে রাঙামাটি জেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করারও আবেদন জানান ব্যবসায়ীরা। মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, “কেচকি মাছের জাল দেড় হাজার ফুট ও দ্বিতীয় দফায় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ৪০ থেকে ৬০ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও আমরা তুলে ধরেছি। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে কাপ্তাই হ্রদের সুদিন আবারও ফিরে আসবে।”
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “এই ধরনের চিঠি আমি পাইনি। তাই এই বিষয়ে কিছু জানি না। সময় বৃদ্ধির বিষয়টি সবদিক পর্যালোচনা করে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।” জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, “নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াতে মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি আবেদন পেয়েছি। এ সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। সে কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। সেখানে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।”
কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের
জনপ্রিয় সংবাদ























