ঢাকা ১১:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

কানাডার নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নাটকীয় জয়

  • আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে নাটকীয় জয় পেয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি লিবারেল পার্টি।
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা দখলের হুমকি ও বাণিজ্য যুদ্ধ। বিজয় ভাষণে কার্নি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের পুরোনো সম্পর্ক-যেটি ক্রমাগতভাবে একীভূত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল-তা শেষ।’ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

তবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার চেয়েছিলেন, তা অর্জন করতে পারেননি।

‘মার্কিন নেতৃত্বাধীন উন্মুক্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা, যেটির ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কানাডা নির্ভর করে এসেছে—যেটি নিখুঁত না হলেও আমাদের বহু দশক ধরে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে—এখন সেটিও শেষ।’ ‘এগুলো কেবল দুঃখজনক ঘটনা নয়, এটাই এখন আমাদের নতুন বাস্তবতা।’

কার্নি জানান, সামনের মাসগুলো হবে কঠিন এবং এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রাথমিক পূর্বাভাসে দেখা গেছে, লিবারেলরা এখন পর্যন্ত ১৬৭টি নির্বাচনি আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর কনজারভেটিভরা পেয়েছে ১৪৫টি। ভোট গণনা এখনও চলমান। কানাডার হাউজ অব কমন্সে মোট ৩৪৩টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ১৭২টি আসনে জয় দরকার।

জনমত জরিপ সংস্থা অ্যাঙ্গাস রেইড ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শাচি কার্ল রয়টার্সকে বলেন, এই লিবারেল বিজয়ের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ ছিল। প্রথমত: যে কোনো কিছু কিন্তু কনজারভেটিভ নয়- মনোভাব। দ্বিতীয়ত: ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি এবং তৃতীয়টি ছিল ট্রুডোর বিদায়—যার ফলে অনেক মধ্য-বামপন্থি ও ঐতিহ্যবাহী লিবারেল ভোটার আবার দলে ফিরে আসেন।

কার্নি ওয়াশিংটনের সঙ্গে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টিও নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তারা ৯ বছরের লিবারেল শাসনের পর পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল। তবে কানাডায় সংখ্যালঘু সরকার সাধারণত ২ থেকে আড়াই বছরের বেশি স্থায়ী হয় না।

কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রে লিবারেলদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে বলেন, তার দল সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখবে।

এই ফলাফল লিবারেলদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাবর্তন। কারণ জানুয়ারিতে তারা ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। এরপর ট্রুডো পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক ও দখলের হুমকি দিয়ে নির্বাচনের কেন্দ্রে উঠে আসেন।

কার্নি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় আমাদের জমি, আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের দেশ। এগুলো কোনো ফাঁকা হুমকি নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের ভাঙার চেষ্টা করছেন যাতে আমেরিকা আমাদের অধিকার করতে পারে। তা কখনও, কখনোই হবে না।’

গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, তিনি কানাডিয়ান নির্মিত গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন, কারণ আমেরিকা সেগুলো চায় না। এর আগে তিনি বলেছিলেন, অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করা হবে।

কার্নি জোর দিয়ে বলেন, তিনি অর্থনৈতিক ইস্যুতে দক্ষ নেতৃত্ব দিতে পারেন। বিপরীতে পয়েলিয়েভ্রে জীবনযাত্রার ব্যয়, অপরাধ এবং গৃহনির্মাণ সংকট নিয়ে প্রচার চালান।

অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। লিবারেল পার্টি কানাডার সর্বশেষ দল যারা ২০০৪ সাল থেকে পরপর চারটি নির্বাচন জিতেছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কানাডার নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নাটকীয় জয়

আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে নাটকীয় জয় পেয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি লিবারেল পার্টি।
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা দখলের হুমকি ও বাণিজ্য যুদ্ধ। বিজয় ভাষণে কার্নি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের পুরোনো সম্পর্ক-যেটি ক্রমাগতভাবে একীভূত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল-তা শেষ।’ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

তবে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার চেয়েছিলেন, তা অর্জন করতে পারেননি।

‘মার্কিন নেতৃত্বাধীন উন্মুক্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা, যেটির ওপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কানাডা নির্ভর করে এসেছে—যেটি নিখুঁত না হলেও আমাদের বহু দশক ধরে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে—এখন সেটিও শেষ।’ ‘এগুলো কেবল দুঃখজনক ঘটনা নয়, এটাই এখন আমাদের নতুন বাস্তবতা।’

কার্নি জানান, সামনের মাসগুলো হবে কঠিন এবং এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রাথমিক পূর্বাভাসে দেখা গেছে, লিবারেলরা এখন পর্যন্ত ১৬৭টি নির্বাচনি আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর কনজারভেটিভরা পেয়েছে ১৪৫টি। ভোট গণনা এখনও চলমান। কানাডার হাউজ অব কমন্সে মোট ৩৪৩টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ১৭২টি আসনে জয় দরকার।

জনমত জরিপ সংস্থা অ্যাঙ্গাস রেইড ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শাচি কার্ল রয়টার্সকে বলেন, এই লিবারেল বিজয়ের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ ছিল। প্রথমত: যে কোনো কিছু কিন্তু কনজারভেটিভ নয়- মনোভাব। দ্বিতীয়ত: ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি এবং তৃতীয়টি ছিল ট্রুডোর বিদায়—যার ফলে অনেক মধ্য-বামপন্থি ও ঐতিহ্যবাহী লিবারেল ভোটার আবার দলে ফিরে আসেন।

কার্নি ওয়াশিংটনের সঙ্গে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টিও নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তারা ৯ বছরের লিবারেল শাসনের পর পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল। তবে কানাডায় সংখ্যালঘু সরকার সাধারণত ২ থেকে আড়াই বছরের বেশি স্থায়ী হয় না।

কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রে লিবারেলদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে বলেন, তার দল সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখবে।

এই ফলাফল লিবারেলদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাবর্তন। কারণ জানুয়ারিতে তারা ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। এরপর ট্রুডো পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক ও দখলের হুমকি দিয়ে নির্বাচনের কেন্দ্রে উঠে আসেন।

কার্নি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় আমাদের জমি, আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের দেশ। এগুলো কোনো ফাঁকা হুমকি নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের ভাঙার চেষ্টা করছেন যাতে আমেরিকা আমাদের অধিকার করতে পারে। তা কখনও, কখনোই হবে না।’

গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, তিনি কানাডিয়ান নির্মিত গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন, কারণ আমেরিকা সেগুলো চায় না। এর আগে তিনি বলেছিলেন, অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করা হবে।

কার্নি জোর দিয়ে বলেন, তিনি অর্থনৈতিক ইস্যুতে দক্ষ নেতৃত্ব দিতে পারেন। বিপরীতে পয়েলিয়েভ্রে জীবনযাত্রার ব্যয়, অপরাধ এবং গৃহনির্মাণ সংকট নিয়ে প্রচার চালান।

অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। লিবারেল পার্টি কানাডার সর্বশেষ দল যারা ২০০৪ সাল থেকে পরপর চারটি নির্বাচন জিতেছে।