নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে খুনি ভাড়া করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার উপরের নির্দেশদাতা কে—জানে না হত্যাকারী নিজেও।
গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার মাসুম মোহাম্মদ আকাশের নামে হত্যা মামলাসহ চার-পাঁচটি মামলা আছে বলে সে দাবি করেছে। নিজেকে সে ফেরারি বলে পরিচয় দিয়েছে। সে হতাশাগ্রস্ত ছিল। মামলার কারণে বাড়িঘরে যেতে পারে না, মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারে না। যারা তাকে আওয়ামী লীগ নেতাকে খুন করতে ভাড়া করেছিল, তারা বলেছিল, হত্যা করতে পারলে এসব মামলা থেকে সে রিলিফ পাবে। এ কারণে সে হত্যাটি করে। তবে তাকে কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে কাটআউট পদ্ধতিতে।’ ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে সাধারণত জঙ্গিরা কাজ করে। অর্থাৎ একটা পর্যায় পর্যন্ত খুনি জানে। কিন্তু এর পেছনে কে রয়েছে তা আর জানে না খুনি। হত্যাকা-ের মোটিভের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘যেহেতু এটা বিচার্য বিষয়, তাই এখনই আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আরও নির্দিষ্ট হয়ে এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছি। আকাশের সহযোগীর নাম আমরা পেয়েছি। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছেপ্রীতিরও গুলি লেগেছে তা জানতাম না: আকাশ : রাজধানীর শাজাহানপুরে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ‘আকাশ বলেছে, আমার টার্গেট ছিল টিপুকে হত্যা করা। তাই আমি অস্ত্রের ট্রিগার চেপে রেখেছিলাম। একাধারে গুলি বের হচ্ছিল। প্রীতিকে টার্গেট করে গুলি করিনি। প্রীতির শরীরে যে গুলি লেগেছে সেটা আমি জানতাম না। হত্যার পরের দিন টিভি দেখে জেনেছি। তাকে আমি গুলি করতেও চাইনি। আমার টার্গেট ছিল কেবল টিপু।’
রোববার দুপুরে মাসুমকে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে হাজির করে ডিবি। গণমাধ্যমের সামনে কিছু বলেনি মাসুম। এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মাসুম এই হত্যাকা-ের কথাটি আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। হত্যার জন্য মাসুমকে কন্ট্রাক্ট করা হয়েছিল। তবে টাকা দিয়ে নয়, তাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কন্ট্রাক্ট করা হয়। তার বিরুদ্ধে চার-পাঁচটি মামলা রয়েছে। একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। তাকে সেসব মামলা থেকে সেভ করা হবে বলা হয়েছিল। ডিবি জানায়, গ্রেফতারকৃত আকাশ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে পাস করেছে। তার বাবা একটি স্কুলের শিক্ষক। তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, মোটিভ পরে বলতে পারবো। নিহত প্রীতির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। বাবার চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকে তার পরিবার। প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন মিরপুরে একটি ফ্যাক্টরির প্রোডাকশনে চাকরি করেন। এর আগে মেয়ে হত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মামলা করবো না। মামলা পরিচালনা করার মতো অবস্থা ও সুযোগ আমার নাই। কোনও বিবাদে জড়াতে চাই না, কেউ যদি সহযোগিতা করে সেটা ভিন্ন বিষয়। ঘটনার দিন যানজটে আটকা পড়ে রিকশায় বসা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত প্রীতি বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী। পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে সে নিজে চাকরির চেষ্টা করছিল। ১৫ হাজার টাকা বেতনে একটা অফিসে চাকরি নিয়েছিল। সামনের মাসে জয়েন করার কথা ছিল তার। কিন্তু সেটা আর হলো না।
কাটআউট’ পদ্ধতিতে খুনি ভাড়া করে আ.লীগ নেতা টিপুকে হত্যা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ