ঢাকা ০৩:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

কাগজের অগ্নিমূল্যে বইমেলার প্রস্তুতিতে লাগাম

  • আপডেট সময় : ০১:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে সৃজনশীল বইয়ের অন্যতম পুরনো প্রকাশনী মাওলা ব্রাদার্স প্রতিবছর একুশে বইমেলার জন্য ৬০ থেকে ৭০টি বই ছাপায়। কিন্তু প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক এবার ততটা আত্মবিশ্বাসী নন। একটি সংবাদসংস্থাকে তিনি বললেন, “এখনো আসলে বলতে পারতেছি না আমরা কী পরিমাণ নতুন বই দিতে পারব। আমরা চেষ্টা করব ছাপতে, কিন্তু সবকিছু মিলে কতটুকু পারব বলতে পারছি না।”
একুশে বইমেলা সামনে রেখে ঢাকার বাংলাবাজারে নতুন বই ছাপানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় নভেম্বরেই। কিন্তু কাগজের দাম নিয়ে শঙ্কিত অনেক প্রকাশক এবার কাজে হাত দেওয়ারই সাহস করতে পারছেন না। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অন্য শিল্প খাতগুলোর মত প্রকাশনা শিল্পও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই এ বছরের শুরুতে বেধে যায় ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ। প্রতিবছর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে সাত থেকে আটশ কোটি টাকার বই ছাপা হয়।
কাগজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ম- বা ভার্জিন পাল্পের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডলারের দর চড়ে থাকায় দেশে কাগজের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তাতে বাজারে কাগজের সরবরাহ কমেছে। আর মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ছয় মাসের মধ্যে পাইকারিতে প্রতি টন কাগজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা।তাছাড়া বছরের এ সময়টায় পাঠ্যবই, নোট-গাইড ছাপানোরও চাপ থাকে। ফলে কাগজের চাহিদা থাকে বেশি। এ পরিস্থিতিতে কোপটা পড়ছে সৃজনশীল বইয়ের ওপর। ঝুঁকি কমাতে আসছে বইমেলায় ‘সীমিত আকারে’ বই প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন প্রকাশকরা। আবার খরচ তুলতে বইয়ের দাম বাড়ানোর কথাও তাদের ভাবতে হচ্ছে।
মাওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, “আমরা বইগুলো নিয়মিত রিপ্রিন্ট করে থাকি। বর্তমানে সেটা করতেও হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের অনেক পুরোনো বই শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো ছাপানো খুব জরুরি। কিন্তু এখন যদি আমরা বই বের করি, তাহলে নতুন দাম ঠিক করতে হবে, দাম বাড়বেও অনেক। তাতে পাঠক বই কিনতে পারবে কিনা সে কথা ভাবতে হচ্ছে।”
এ অবস্থায় নতুন লেখকদের বই ছাপানোর ঝুঁকি নিতেও ভয় পাচ্ছে সাত দশকের পুরনো এই প্রকাশনী। “নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার যে চেষ্টা আমরা প্রতিনিয়ত করি, সেটাও ব্যাহত হবে। কাগজের দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে প্রকাশনা শিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়গুলোতে সরকারের তদারকি করা উচিত,” বললেন মাহমুদুল হক।
অংকটা সহজ নয়: হুমায়ুন আহমেদের বই প্রকাশ করে প্রকাশনা বাজারে মজবুত জায়গা করে নেওয়া অন্যপ্রকাশ বইমেলার জন্য বই প্রকাশের প্রস্ততি নিতে শুরু করেছে। তবে কাগজের দাম বাড়ায় এবার নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হয়েছে বলে জানালেন প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে, ফলে একটু হিসাব-নিকাশ করে বের করব। কারণ বইয়ের দাম অনেক বাড়বে এবং পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। অন্য সময় যেখানে ১০০টার মত ছাপাতাম, এবার ৩০ থেকে ৪০টা বই ছাপাব আমরা।”
কাগজের দাম বৃদ্ধি বই বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এমনিতেই সৃজনশীল সাহিত্যের পাঠক কম। দাম বাড়লে পাঠক আরো কমে যাবে। প্রকাশকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক জানান, গত বছর যে কাগজের রিম ১৭০০ টাকা ছিল, এবার সেটি ৩৪০০ টাকা হয়ে গেছে। “দিন দিন লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছুর দাম। ফলে খরচের চিন্তা করে আমরা পারছি না। কাগজ বিক্রেতারা বলছে আরো বাড়বে। এটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না। একটাই বাহানা, ডলার সঙ্কট। সেটা কত? একটা তো লিমিট থাকবে।”
এ পরিস্থিতিতে এবারের বইমেলায় অনন্যা প্রকাশনী তাদের পরিকল্পনার পাঁচ শতাংশের বেশি বই ছাপাতে পারবে না বলেই মনে করছেন এই প্রকাশক।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গনির অভিযোগ, কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’ করে। এর ফলে বই ছাপা কমবে ‘৫০ শতাংশ’।
আগামী প্রকাশনীর এই কর্ণধার বলেন, “কাগজের দাম ডাবল হয়ে গেল, অন্য কোনো সেক্টরে পণ্যের দাম ডাবল হয়নি। বইমেলা আর পাঠ্যবই ছাপার সময় এলে মিল মালিকরা একত্রিত হয়ে দাম বাড়াতে থাকে। এবার সুযোগ পেয়ে সেটা ডাবল করে ফেলছে।”
সরকারের কাছে ‘সিন্ডিকেট ভাঙা ও কাগজের আমাদানি ট্যাক্স কমানোর’ দাবি জানিয়ে ওসমান গনি বলেন, “পাঁচ ফর্মার একটা বই এতদিন ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন যদি সেটা ৪০০ টাকায় বিক্রি করি; তাহলে পাঠক আমাদের গালি দেবে। এটা দেখবে না যে, কাগজের দাম কত বাড়ছে।”
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বললেন, ৮০-৮৫ হাজার টাকা টন হোয়াইট প্রিন্ট এখন তাদের কিনতে হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।
“সেক্ষেত্রে প্রকাশকরা যে হোয়াইট প্রিন্ট দিয়ে সৃজনশীল বই মেলায় প্রকাশ করবে, সেটা তাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। দামটা আরো বাড়তে থাকলে অনেকেই বই প্রকাশ করতে পারবে না।”
প্রায় ৭-৮ শ কোটি টাকার বই প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে ছাপা হয়। তবে এবার সেটা ৫শ কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করেন না ছোটন। বইয়ের দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে একুশে বইমেলা সামনে রেখে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রকাশনা শিল্পের সংকটের কথা জানাতে গণমাধ্যমের সামনে আসছে বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক পরিষদও। ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে বইমেলার স্টল ভাড়া ১৮ হাজার থেকে কমিয়ে আনার প্রস্তাবনা রয়েছে তাদের।
পরিষদের সদস্য সচিব মাসুল ইসলাম নীল (নীল সাধু) বলেন, “কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত। স্টল ভাড়া ইউনিট প্রতি ১০ হাজার করার দাবি আমাদের। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর পরিধি ও ব্যাপ্তি ছোট করে আনতে হবে।“ কাগজ সংকট নিরসনে ‘ত্বরিত পদক্ষেপ’ নিতেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কাগজের অগ্নিমূল্যে বইমেলার প্রস্তুতিতে লাগাম

আপডেট সময় : ০১:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে সৃজনশীল বইয়ের অন্যতম পুরনো প্রকাশনী মাওলা ব্রাদার্স প্রতিবছর একুশে বইমেলার জন্য ৬০ থেকে ৭০টি বই ছাপায়। কিন্তু প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক এবার ততটা আত্মবিশ্বাসী নন। একটি সংবাদসংস্থাকে তিনি বললেন, “এখনো আসলে বলতে পারতেছি না আমরা কী পরিমাণ নতুন বই দিতে পারব। আমরা চেষ্টা করব ছাপতে, কিন্তু সবকিছু মিলে কতটুকু পারব বলতে পারছি না।”
একুশে বইমেলা সামনে রেখে ঢাকার বাংলাবাজারে নতুন বই ছাপানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় নভেম্বরেই। কিন্তু কাগজের দাম নিয়ে শঙ্কিত অনেক প্রকাশক এবার কাজে হাত দেওয়ারই সাহস করতে পারছেন না। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অন্য শিল্প খাতগুলোর মত প্রকাশনা শিল্পও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই এ বছরের শুরুতে বেধে যায় ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ। প্রতিবছর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে সাত থেকে আটশ কোটি টাকার বই ছাপা হয়।
কাগজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ম- বা ভার্জিন পাল্পের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডলারের দর চড়ে থাকায় দেশে কাগজের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, তাতে বাজারে কাগজের সরবরাহ কমেছে। আর মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ছয় মাসের মধ্যে পাইকারিতে প্রতি টন কাগজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা।তাছাড়া বছরের এ সময়টায় পাঠ্যবই, নোট-গাইড ছাপানোরও চাপ থাকে। ফলে কাগজের চাহিদা থাকে বেশি। এ পরিস্থিতিতে কোপটা পড়ছে সৃজনশীল বইয়ের ওপর। ঝুঁকি কমাতে আসছে বইমেলায় ‘সীমিত আকারে’ বই প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন প্রকাশকরা। আবার খরচ তুলতে বইয়ের দাম বাড়ানোর কথাও তাদের ভাবতে হচ্ছে।
মাওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, “আমরা বইগুলো নিয়মিত রিপ্রিন্ট করে থাকি। বর্তমানে সেটা করতেও হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের অনেক পুরোনো বই শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো ছাপানো খুব জরুরি। কিন্তু এখন যদি আমরা বই বের করি, তাহলে নতুন দাম ঠিক করতে হবে, দাম বাড়বেও অনেক। তাতে পাঠক বই কিনতে পারবে কিনা সে কথা ভাবতে হচ্ছে।”
এ অবস্থায় নতুন লেখকদের বই ছাপানোর ঝুঁকি নিতেও ভয় পাচ্ছে সাত দশকের পুরনো এই প্রকাশনী। “নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার যে চেষ্টা আমরা প্রতিনিয়ত করি, সেটাও ব্যাহত হবে। কাগজের দাম সহনীয় পর্যায়ে না এলে প্রকাশনা শিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়গুলোতে সরকারের তদারকি করা উচিত,” বললেন মাহমুদুল হক।
অংকটা সহজ নয়: হুমায়ুন আহমেদের বই প্রকাশ করে প্রকাশনা বাজারে মজবুত জায়গা করে নেওয়া অন্যপ্রকাশ বইমেলার জন্য বই প্রকাশের প্রস্ততি নিতে শুরু করেছে। তবে কাগজের দাম বাড়ায় এবার নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হয়েছে বলে জানালেন প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে, ফলে একটু হিসাব-নিকাশ করে বের করব। কারণ বইয়ের দাম অনেক বাড়বে এবং পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। অন্য সময় যেখানে ১০০টার মত ছাপাতাম, এবার ৩০ থেকে ৪০টা বই ছাপাব আমরা।”
কাগজের দাম বৃদ্ধি বই বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, “এমনিতেই সৃজনশীল সাহিত্যের পাঠক কম। দাম বাড়লে পাঠক আরো কমে যাবে। প্রকাশকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক জানান, গত বছর যে কাগজের রিম ১৭০০ টাকা ছিল, এবার সেটি ৩৪০০ টাকা হয়ে গেছে। “দিন দিন লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছুর দাম। ফলে খরচের চিন্তা করে আমরা পারছি না। কাগজ বিক্রেতারা বলছে আরো বাড়বে। এটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না। একটাই বাহানা, ডলার সঙ্কট। সেটা কত? একটা তো লিমিট থাকবে।”
এ পরিস্থিতিতে এবারের বইমেলায় অনন্যা প্রকাশনী তাদের পরিকল্পনার পাঁচ শতাংশের বেশি বই ছাপাতে পারবে না বলেই মনে করছেন এই প্রকাশক।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ওসমান গনির অভিযোগ, কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’ করে। এর ফলে বই ছাপা কমবে ‘৫০ শতাংশ’।
আগামী প্রকাশনীর এই কর্ণধার বলেন, “কাগজের দাম ডাবল হয়ে গেল, অন্য কোনো সেক্টরে পণ্যের দাম ডাবল হয়নি। বইমেলা আর পাঠ্যবই ছাপার সময় এলে মিল মালিকরা একত্রিত হয়ে দাম বাড়াতে থাকে। এবার সুযোগ পেয়ে সেটা ডাবল করে ফেলছে।”
সরকারের কাছে ‘সিন্ডিকেট ভাঙা ও কাগজের আমাদানি ট্যাক্স কমানোর’ দাবি জানিয়ে ওসমান গনি বলেন, “পাঁচ ফর্মার একটা বই এতদিন ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন যদি সেটা ৪০০ টাকায় বিক্রি করি; তাহলে পাঠক আমাদের গালি দেবে। এটা দেখবে না যে, কাগজের দাম কত বাড়ছে।”
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বললেন, ৮০-৮৫ হাজার টাকা টন হোয়াইট প্রিন্ট এখন তাদের কিনতে হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়।
“সেক্ষেত্রে প্রকাশকরা যে হোয়াইট প্রিন্ট দিয়ে সৃজনশীল বই মেলায় প্রকাশ করবে, সেটা তাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। দামটা আরো বাড়তে থাকলে অনেকেই বই প্রকাশ করতে পারবে না।”
প্রায় ৭-৮ শ কোটি টাকার বই প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে ছাপা হয়। তবে এবার সেটা ৫শ কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করেন না ছোটন। বইয়ের দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে একুশে বইমেলা সামনে রেখে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রকাশনা শিল্পের সংকটের কথা জানাতে গণমাধ্যমের সামনে আসছে বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক পরিষদও। ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে বইমেলার স্টল ভাড়া ১৮ হাজার থেকে কমিয়ে আনার প্রস্তাবনা রয়েছে তাদের।
পরিষদের সদস্য সচিব মাসুল ইসলাম নীল (নীল সাধু) বলেন, “কাগজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত। স্টল ভাড়া ইউনিট প্রতি ১০ হাজার করার দাবি আমাদের। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর পরিধি ও ব্যাপ্তি ছোট করে আনতে হবে।“ কাগজ সংকট নিরসনে ‘ত্বরিত পদক্ষেপ’ নিতেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।