ঢাকা ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

কাঁদলেন, কাঁদালেন মিজান

  • আপডেট সময় : ১০:৫০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন: রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা শাহবাগ তখন অনেকটাই স্তব্ধ। মাইকে ভেসে আসছে এক যুবকের আর্তনাদের শব্দ। সদ্য স্ত্রী-সন্তান হারানো এই যুবকের বিলাপে যেন থেমে গেছে কোলাহল, যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা বাহনের যাত্রীরাও নিশ্চুপ। মঞ্চের সামনে তার মতোই বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় বিচারের দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। ওই যুবক আর্তনাত করে বলছেন, ‘আমি জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি। যারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়। আমি স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছি। আমাকে লাশ বহন করে নিয়ে যেতে হয়েছে। যারা আগুনে মানুষ পোড়াচ্ছে, তাদের বিচার চাই।’ কথাগুলো বলছেন বটে, কিন্তু কান্নার দমকে অর্ধেক শব্দ নাই হয়ে যাচ্ছিল। মঞ্চে বা মঞ্চের সামনে যারা ছিলেন, তারাও নিজেদের চোখ মুছছেন মিজানের কথা শুনে।
গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী পদযাত্রায় কথাগুলো বলেন সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান হারানো মিজানুর রহমান মিজান।
তিনি বলেন, ‘যে সন্তানকে সুন্দর করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। তাকে আর কোলে নিতে পারি নাই। লাশ কোলে নিয়ে বাড়িতে যেতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার দাবি করি। আমি একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সুন্দরমতো জীবনযাপন করছিলাম। আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার করবেন। আমার স্ত্রী-সন্তানের কী দোষ ছিল? প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি, এই অপরাধীদের যেন বিচার হয়। আর কোনো দাবি নেই।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের দিন দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মারা গেছেন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার শিশু সন্তান ইয়াসিন। মায়ের কোলেই ছিল ৩ বছর বয়সী শিশুটি। বগিতে আগুন লাগলে সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন মা নাদিরা আক্তার, মরদেহ উদ্ধারের সময়ও শিশুটি তার কোলেই ছিল।
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমে নানাভাবে মিজানুর রহমান বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি আজ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আরও অনেকের সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করতে এসেছিলেন। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মিজানুর রহমান এসেছিলেন অন্য অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানকে হারিয়েছি, তাদের আর ফিরে পাবো না। আমি একজন সাধারণ মানুষ। ছোট চাকরি করে সংসার বাচ্চা নিয়ে চলতাম। এ আগুনে আমার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে যাওয়াতে আমি জীবনকে অনেক পিছে ফেলে এসেছি। এই আগুন বন্ধ করে মানুষের সন্তান, স্ত্রী পোড়ানো বন্ধ করেন। নিজের বিবেককে কাজে লাগান।’
কান্নারত মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিজের সন্তান হারালে কী কষ্ট হয়, সেই হুঁশটুকু নিজের ভেতরে তৈরি করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, সন্তান পুড়লে কী কষ্ট হয়। যার হারায় সে বুঝতে পারে। চোখের সামনে আমার স্ত্রী-সন্তান পুড়ে গেছে, আমার যে কী অবস্থা আমি বুঝতেসি। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার স্ত্রী-সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
পদযাত্রায় অংশ নেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল। পদযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাদের একজন রেদওয়ানুল হক বলেন, ‘এই কষ্ট আমার বাবারও হতে পারে যে কোনো দিন। এই বিচার যেন মিজানুর রহমানকে একা চাইতে না হয়, সেজন্য আমরা সবাই এখানে জড়ো হয়েছি। সবাই প্রতিবাদী হয়ে উঠলে এই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সাহস করবে না সাধারণ জনগণকে আঘাত করার।’
বিচারের দাবিতে সংগঠিত হওয়া পদযাত্রার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত শাস্তির মধ্য দিয়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আজ ভুক্তভোগী মিজান বলছেন— সে বিচারের দাবি নিয়ে এসেছে। এই বিচারের দাবি আমাদের সকলের। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন রাজনীতি হতে পারে না।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কাঁদলেন, কাঁদালেন মিজান

আপডেট সময় : ১০:৫০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

মহানগর প্রতিবেদন: রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা শাহবাগ তখন অনেকটাই স্তব্ধ। মাইকে ভেসে আসছে এক যুবকের আর্তনাদের শব্দ। সদ্য স্ত্রী-সন্তান হারানো এই যুবকের বিলাপে যেন থেমে গেছে কোলাহল, যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা বাহনের যাত্রীরাও নিশ্চুপ। মঞ্চের সামনে তার মতোই বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় বিচারের দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। ওই যুবক আর্তনাত করে বলছেন, ‘আমি জাতির কাছে বিচার দিতে এসেছি। যারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়। আমি স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছি। আমাকে লাশ বহন করে নিয়ে যেতে হয়েছে। যারা আগুনে মানুষ পোড়াচ্ছে, তাদের বিচার চাই।’ কথাগুলো বলছেন বটে, কিন্তু কান্নার দমকে অর্ধেক শব্দ নাই হয়ে যাচ্ছিল। মঞ্চে বা মঞ্চের সামনে যারা ছিলেন, তারাও নিজেদের চোখ মুছছেন মিজানের কথা শুনে।
গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী পদযাত্রায় কথাগুলো বলেন সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান হারানো মিজানুর রহমান মিজান।
তিনি বলেন, ‘যে সন্তানকে সুন্দর করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। তাকে আর কোলে নিতে পারি নাই। লাশ কোলে নিয়ে বাড়িতে যেতে হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার দাবি করি। আমি একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সুন্দরমতো জীবনযাপন করছিলাম। আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার করবেন। আমার স্ত্রী-সন্তানের কী দোষ ছিল? প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি, এই অপরাধীদের যেন বিচার হয়। আর কোনো দাবি নেই।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধের দিন দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মারা গেছেন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার শিশু সন্তান ইয়াসিন। মায়ের কোলেই ছিল ৩ বছর বয়সী শিশুটি। বগিতে আগুন লাগলে সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন মা নাদিরা আক্তার, মরদেহ উদ্ধারের সময়ও শিশুটি তার কোলেই ছিল।
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমে নানাভাবে মিজানুর রহমান বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি আজ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আরও অনেকের সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করতে এসেছিলেন। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মিজানুর রহমান এসেছিলেন অন্য অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানকে হারিয়েছি, তাদের আর ফিরে পাবো না। আমি একজন সাধারণ মানুষ। ছোট চাকরি করে সংসার বাচ্চা নিয়ে চলতাম। এ আগুনে আমার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে যাওয়াতে আমি জীবনকে অনেক পিছে ফেলে এসেছি। এই আগুন বন্ধ করে মানুষের সন্তান, স্ত্রী পোড়ানো বন্ধ করেন। নিজের বিবেককে কাজে লাগান।’
কান্নারত মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিজের সন্তান হারালে কী কষ্ট হয়, সেই হুঁশটুকু নিজের ভেতরে তৈরি করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, সন্তান পুড়লে কী কষ্ট হয়। যার হারায় সে বুঝতে পারে। চোখের সামনে আমার স্ত্রী-সন্তান পুড়ে গেছে, আমার যে কী অবস্থা আমি বুঝতেসি। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার স্ত্রী-সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
পদযাত্রায় অংশ নেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল। পদযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাদের একজন রেদওয়ানুল হক বলেন, ‘এই কষ্ট আমার বাবারও হতে পারে যে কোনো দিন। এই বিচার যেন মিজানুর রহমানকে একা চাইতে না হয়, সেজন্য আমরা সবাই এখানে জড়ো হয়েছি। সবাই প্রতিবাদী হয়ে উঠলে এই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সাহস করবে না সাধারণ জনগণকে আঘাত করার।’
বিচারের দাবিতে সংগঠিত হওয়া পদযাত্রার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত শাস্তির মধ্য দিয়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আজ ভুক্তভোগী মিজান বলছেন— সে বিচারের দাবি নিয়ে এসেছে। এই বিচারের দাবি আমাদের সকলের। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন রাজনীতি হতে পারে না।’