প্রত্যাশা ডেস্ক: কাঁচা দুধ থেকে তৈরি করা চিজে বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১ ভাইরাসের জীবিত অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণায় এমনই আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে। এ কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। গবেষকরা বলছেন, চিজের অম্লত্ব যত বেশি হবে, ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা ততটাই বেশি।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি। এতে সায়েন্স ডেইলির খবর অনুযায়ী বলা হয়েছে, করনেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) গবেষকরা দেখেছেন, খুবই সংক্রামক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচপিএআই) ভাইরাস কাঁচা দুধ থেকে তৈরিকৃত কিছু চিজে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। এমনকি কাঁচা দুধের ক্ষেত্রে চিজের নির্ধারিত ৬০ দিনের পরিপক্বতা অতিক্রম হওয়ার পরও এটি টিকে থাকতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক ও করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক দিয়েগো ডিয়েল বলেন, সংক্রমিত গরুর দুধে ভাইরাসের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পূর্বের গবেষণায় প্রমাণ হওয়ার কারণে এ গবেষণা করা হয়েছে আমাদের।
এফডিএর নির্দেশিকা অনুসারে, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার জন্য কাঁচা দুধের চিজ অন্তত ৬০ দিন ধরে ৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা বা এর বেশি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, কিছু চিজের নমুনায় ৩৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায়ও ভাইরাসটি ১২০ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, চিজের অম্লত্ব (পিএইচ মাত্রা) ভাইরাস নিস্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেসব চিজের পিএইচ ৫ বা এর কম, যেমন ফেটা চিজ, তাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়নি। বিপরীতে, পিএইচ ৫.৮ থেকে ৬.৬-এর মধ্যে থাকা চিজগুলোয় ভাইরাস সক্রিয় থাকে।
গবেষণার সহকারী লেখক ও দুগ্ধ খাদ্য অণুজীববিজ্ঞানী নিকোল মার্টিন বলেন, এইচ৫এন১ সংক্রান্ত আমাদের গবেষণা দুগ্ধশিল্পের ক্ষেত্রে সময়োপযোগী ও তথ্যনির্ভর দিকনির্দেশনা পাওয়ার ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এ গবেষক দলটি তাদের গবেষণার সময় কৃত্রিমভাবে এইচ৫এন১ সংক্রমিত কাঁচা দুধ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক চিজ তৈরির পর সংক্রমণের স্থায়ীত্ব পরীক্ষা করে। আবার এফডিএ কর্তৃপক্ষের পাঠানো বাণিজ্যিক চেডার চিজের চারটি নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। সেসবের সবগুলোয় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এছাড়া ভাইরাসের ঝুঁকি যাচাই করার জন্য প্রাণীর ওপরও এর পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে ভাইরাস থাকা কাঁচা দুধ পান করা ফ্যারেটগুলো আক্রান্ত হলেও চিজ খাওয়ানো ফ্যারেটগুলোয় ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
দিয়েগো ডিয়েল বলেন, দুধ তরল হওয়ার কারণে এটি শরীরের শ্লেষ্মা ঝিল্লির সঙ্গে সংস্পর্শে বেশি এসে থাকে। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। চিজের ক্ষেত্রে এই প্রভাব তুলনামূলক বেশ কম।
এছাড়াও গবেষকরা জানান, চিজে অম্লত্ব বৃদ্ধি করার জন্য ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া বা সরাসরি অ্যাসিড ব্যবহার করে দুধের চিনি থেকে অ্যাসিড সৃষ্টি করা হয়। যা ভাইরাস ধ্বংস করায় অবদান রাখে।
ওআ/আপ্র/২২/১০/২০২৫