নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে দুর্গাপূজার আয়োজন করতে অসহযোগিতার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান বলে কলাবাগান মাঠে দুর্গাপূজার মতো বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের বাস্তবতা এখন নেই। তবে ‘ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা কমিটি’ চাইলে সুবিধাজনক অন্য যে কোনো স্থানে পূজা উদযাপনের আয়োজন করে দিতে ড্এিসসিসি প্রস্তুত রয়েছে।
কলাবাগান মাঠ নিয়ে ধানম-ি পূজা উদযাপন কমিটি যে অভিযোগ তুলেছে, তা ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘একপেশে’ বলে নাকচ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ধানম-ি পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমেন সাহা বলেন, গত ২৬ আগস্ট তারা সরকার নির্দেশিত সব নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলাবাগান মাঠে পূজা উদ্যাপনের জন্য ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে লিখিত অনুমতি চাইলেও সাড়া মিলছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ধানম-ি সার্বজনীন পূজা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য উপস্থাপনের বিষয়াদি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস সুস্পষ্ট।”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র থাকার পরেও ডিএসসিসি অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগের জবাবে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হতে পূজা উদযাপনকালে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠ ও মাঠের স্থাপনাসমূহের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি/বিনষ্ট না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এমন শর্তসাপেক্ষে পূজা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উল্লেখ করেননি।
“মন্ত্রণালয় প্রদত্ত শর্তসাপেক্ষ অনুমতি প্রদান করার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে যে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে, প্রেরিত পত্রের প্রদত্ত শর্তপূরণকল্পে পূজা আয়োজনের ফলে কলাবাগান মাঠ কিংবা প্রকল্প এলাকায় কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার যথার্থ ক্ষতিপূরণ/জরিমানা দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা প্রদানপূর্বক কমিটির পক্ষ হতে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে কোনো আবেদনও করা হয়নি।”
কলাবাগান মাঠ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২০১৮ সাল থেকে একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, “২০১৯ সালে বিশেষ বিবেচনায় মাঠের ক্ষয়ক্ষতি না করা এবং ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করার শর্তে দুর্গাপূজা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্গাপূজার কারণে, মাঠের যে অংশে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়, মাঠের সেই অংশের ঘাস সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়, পূজা আয়োজনে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মাঠ ভরাটে ব্যবহৃত বালি সরিয়ে ফেলায় মাটির নিচের থাকা খোয়া বেরিয়ে আসে, মাটির নিচে স্থাপিত পাইপ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামগ্রিকভাবে সে সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে মর্মে মুচলেকা হলেও বস্তুত কমিটি কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রদান করেনি।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কোনো স্থান কিংবা মাঠে পূজা আয়োজন করা হলে করপোরেশন তাতে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এবং হস্তান্তর হওয়ার আগ পর্যন্ত কলাবাগান মাঠে পূজা আয়োজন করার সুযোগ নেই বলে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়।”
পূজা আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনার কথা তুলে ধরে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনাভাইরাসের মহামারীর এই সময়ে মন্দিরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করতে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত স্থানে পূজা আয়োজনের বিষয়ে অনুমতি প্রদানে সরকারের তরফ হতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ‘শৈথিল্য’ প্রদান করা হয়নি।
কলাবাগানের আশাপাশে কোনো মন্দির নেই বলে পূজা কমিটির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তাও নাকচ করেছে ডিএসসিসি।
“সংবাদ সম্মেলনে ধানম-ি, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর এলাকায় কোনো মন্দির নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। কারণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন ধানম-ি ও হাজারীবাগ এলাকায় ৮টি মন্দিরের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্পন্ন করেছেন।”
কলাবাগান মাঠের পূজা আয়োজন নিয়ে যা বলল ডিএসসিসি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ