ঢাকা ০৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

কলম্বিয়া নদীর গল্প

  • আপডেট সময় : ০১:৪০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

অনেক অনেক বছর আগের কথা। তখন পৃথিবীর প্রায় অংশই জনমানবহীন ছিল। পশুপাখির বিচরণ ছিল পৃথিবীজুড়ে। বাঘ, ভালুক, সিংহ, শেয়াল ও নেকড়েরা বসবাস করত বনে, জঙ্গলে এবং কি সমতলের সব জায়গায়। সেই সময় নেকড়ের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। তার ভয়ে সবাই পালিয়ে বেড়াত। যা মনে চায় সে তাই করে বেড়াত।
এক গ্রীষ্মের দুপুর। সূর্য উজ্জ্বলভাবে জ্বলছিল। এই তীব্র দাবদাহের দুপুর বেলায় একটি নেকড়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এইসময় সে খুব গরম অনুভব করছিল। প্রচণ্ড দাবদাহে বিরক্ত হয়ে নেকড়ে মনে মনে সৃষ্টি কর্তাকে ডেকে বলল- আমার মাথার উপরে একখণ্ড মেঘ চাই।
সৃষ্টিকর্তার আদেশে একখণ্ড মেঘ এসে নেকড়ের মাথার উপর ছায়া তৈরি করল। কিন্তু নেকড়ে এটাতে সন্তুষ্ট হলো না।
সে বলল, আমি আরো মেঘ চাই। তার আবেদনে আরও মেঘ এসে গেল। সূর্যটা ঢেকে গেল। কোথাও সামান্য রোদ নেই। আলো থেমে গিয়ে নেমে এল আঁধার। আকাশ খুব ঝড়ো দেখাতে লাগল। কালো মেঘের আড়ালে ডোবে গেল আকাশের রঙ। চারদিক ঠান্ডা হলেও নেকড়ের না কি তখনও গরম লাগছিল। গরমে সে হাসফাঁস করছিল।
মেঘমালাদের ঝড়ের বেগে এমন জড়ো হতে দেখেও নেকড়ে তাচ্ছিল্য মনোভাব পোষণ করল। বলল, জানা আছেÑ কেমন বৃষ্টি হবে? কত দেখেছি- যত গর্জে তত বর্ষে না। মেঘের ক্ষমতা থাকলে বৃষ্টি নামিয়ে দিক। জানা আছে কেমন পারবে। নেকড়ের এমন তাচ্ছিল্যের সুর শুনে মেঘমালারা নেকড়ের উপর বৃষ্টি ছিটাতে শুরু করল।
-আরো বৃষ্টি চাই, আরো বৃষ্টি চাই বলে নেকড়ে একের পর এক দাবি জানাতে লাগল। ফলে সৃষ্টি কর্তা মেঘ হতে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়ে দিল। এমন বৃষ্টি হল যে চারদিকে পানিতে ডুবে গেল। বন্যা হয়ে গেল। পানির স্রোতে নেকড়ে ভেসে যেতে লাগল।
এবার নেকড়ে ভেসে যেতে যেতে পা রাখার জন্য একটি খাঁড়ি (উপকূলের স্থলভাগ) চাই বলে মনোভাব পেশ করল। পাশেই একটি খাঁড়ি দেখতে পেল। নেকড়ে খাড়িতে উঠে বসল। মনে মনে বলল- কী এমন পানি হলো, খাঁড়ি তো ডুবল না। মেঘের সেই শক্তি কোথায়? মেঘের যা বেগ সেই হিসেবে পানির বেগ আরও গভীর ও স্রোতস্বিনী হওয়া উচিত ছিল।
নেকড়ের মুখে আবারও তাচ্ছিল্য শুনে মুহূর্তের মধ্যে খাঁড়িটি একটি বিশাল ঘূর্ণায়মান নদীতে পরিণত হয়ে গেল। প্রচণ্ড বেগে বইতে লাগল স্রোত। এবার নেকড়ে আবার ভেসে গেল।
অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেল। স্রোতে ভেসে ভেসে মৃতপ্রায় নেকড়ে গিয়ে ঠেকল এক তীরে। সে তখন অজ্ঞান ছিল। যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন দেখল একদল বাজপাখি তাকে ঠোকরাতে আসছে। সে মারা গেছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে।
বাজপাখির থাবা থেকে বাঁচতে কাঁপা কাঁপা গলায় নেকড়ে বলল- আমি মৃত নই। চরম সীমালঙ্ঘনের দায়ে আমার এই পরিণতি। যদি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতাম তবে আমাকে এই মৃত্যু দশায় তোমাদের দেখতে হতো না। আমি তাচ্ছিল্য করার কারণে মেঘ এমনভাবে বর্ষণ হয়েছে যে একটা নদীর উদ্ভব ঘটে গেছে! কলকল করে যে নদী বয়ে যাচ্ছে কলম্বিয়ার বুক চিরে।
বাজপাখিরা নেকড়ের মুখে এসব কথা শুনে উড়ে গেল।
* (এসই শ্লোসার-এর ইংরেজি গল্প কোয়োট অ্যান্ড কলম্বিয়া অবলম্বনে লেখা)

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কলম্বিয়া নদীর গল্প

আপডেট সময় : ০১:৪০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অনেক অনেক বছর আগের কথা। তখন পৃথিবীর প্রায় অংশই জনমানবহীন ছিল। পশুপাখির বিচরণ ছিল পৃথিবীজুড়ে। বাঘ, ভালুক, সিংহ, শেয়াল ও নেকড়েরা বসবাস করত বনে, জঙ্গলে এবং কি সমতলের সব জায়গায়। সেই সময় নেকড়ের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। তার ভয়ে সবাই পালিয়ে বেড়াত। যা মনে চায় সে তাই করে বেড়াত।
এক গ্রীষ্মের দুপুর। সূর্য উজ্জ্বলভাবে জ্বলছিল। এই তীব্র দাবদাহের দুপুর বেলায় একটি নেকড়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এইসময় সে খুব গরম অনুভব করছিল। প্রচণ্ড দাবদাহে বিরক্ত হয়ে নেকড়ে মনে মনে সৃষ্টি কর্তাকে ডেকে বলল- আমার মাথার উপরে একখণ্ড মেঘ চাই।
সৃষ্টিকর্তার আদেশে একখণ্ড মেঘ এসে নেকড়ের মাথার উপর ছায়া তৈরি করল। কিন্তু নেকড়ে এটাতে সন্তুষ্ট হলো না।
সে বলল, আমি আরো মেঘ চাই। তার আবেদনে আরও মেঘ এসে গেল। সূর্যটা ঢেকে গেল। কোথাও সামান্য রোদ নেই। আলো থেমে গিয়ে নেমে এল আঁধার। আকাশ খুব ঝড়ো দেখাতে লাগল। কালো মেঘের আড়ালে ডোবে গেল আকাশের রঙ। চারদিক ঠান্ডা হলেও নেকড়ের না কি তখনও গরম লাগছিল। গরমে সে হাসফাঁস করছিল।
মেঘমালাদের ঝড়ের বেগে এমন জড়ো হতে দেখেও নেকড়ে তাচ্ছিল্য মনোভাব পোষণ করল। বলল, জানা আছেÑ কেমন বৃষ্টি হবে? কত দেখেছি- যত গর্জে তত বর্ষে না। মেঘের ক্ষমতা থাকলে বৃষ্টি নামিয়ে দিক। জানা আছে কেমন পারবে। নেকড়ের এমন তাচ্ছিল্যের সুর শুনে মেঘমালারা নেকড়ের উপর বৃষ্টি ছিটাতে শুরু করল।
-আরো বৃষ্টি চাই, আরো বৃষ্টি চাই বলে নেকড়ে একের পর এক দাবি জানাতে লাগল। ফলে সৃষ্টি কর্তা মেঘ হতে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়ে দিল। এমন বৃষ্টি হল যে চারদিকে পানিতে ডুবে গেল। বন্যা হয়ে গেল। পানির স্রোতে নেকড়ে ভেসে যেতে লাগল।
এবার নেকড়ে ভেসে যেতে যেতে পা রাখার জন্য একটি খাঁড়ি (উপকূলের স্থলভাগ) চাই বলে মনোভাব পেশ করল। পাশেই একটি খাঁড়ি দেখতে পেল। নেকড়ে খাড়িতে উঠে বসল। মনে মনে বলল- কী এমন পানি হলো, খাঁড়ি তো ডুবল না। মেঘের সেই শক্তি কোথায়? মেঘের যা বেগ সেই হিসেবে পানির বেগ আরও গভীর ও স্রোতস্বিনী হওয়া উচিত ছিল।
নেকড়ের মুখে আবারও তাচ্ছিল্য শুনে মুহূর্তের মধ্যে খাঁড়িটি একটি বিশাল ঘূর্ণায়মান নদীতে পরিণত হয়ে গেল। প্রচণ্ড বেগে বইতে লাগল স্রোত। এবার নেকড়ে আবার ভেসে গেল।
অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেল। স্রোতে ভেসে ভেসে মৃতপ্রায় নেকড়ে গিয়ে ঠেকল এক তীরে। সে তখন অজ্ঞান ছিল। যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন দেখল একদল বাজপাখি তাকে ঠোকরাতে আসছে। সে মারা গেছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে।
বাজপাখির থাবা থেকে বাঁচতে কাঁপা কাঁপা গলায় নেকড়ে বলল- আমি মৃত নই। চরম সীমালঙ্ঘনের দায়ে আমার এই পরিণতি। যদি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতাম তবে আমাকে এই মৃত্যু দশায় তোমাদের দেখতে হতো না। আমি তাচ্ছিল্য করার কারণে মেঘ এমনভাবে বর্ষণ হয়েছে যে একটা নদীর উদ্ভব ঘটে গেছে! কলকল করে যে নদী বয়ে যাচ্ছে কলম্বিয়ার বুক চিরে।
বাজপাখিরা নেকড়ের মুখে এসব কথা শুনে উড়ে গেল।
* (এসই শ্লোসার-এর ইংরেজি গল্প কোয়োট অ্যান্ড কলম্বিয়া অবলম্বনে লেখা)