নিজস্ব প্রতিবেদক : শুল্ক-কর না কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন। গতকাল শনিবার অনলাইনে ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে করা হচ্ছে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। আসলে কিন্তু তা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কাঁচামালের বহু কারখানা বিদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাসায়নিক কারখানা।’ তিনি আরও বলেন, এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা আগেই শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র রমজান, এখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার উদ্যোগ সম্পর্কে জসিম উদ্দিন বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন করা হচ্ছে? সরকারি বেশ কিছু প্ল্যান্ট ২৮-৩০ শতাংশ কার্যকারিতা (ইফিশিয়েন্সি) নিয়ে পরিচালিত হয়। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ, ২৮ শতাংশ কার্যকারিতা এবং সিস্টেম লসের কারণে ৬০ শতাংশ চলে যায়। যা আমাদের পকেট থেকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, কোভিড দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন ধরনের নীতি নিয়েছে । যা সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান। তিনি বলেন, করোনার সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া মসৃণ হতে হবে। বিশেষ করে, শিল্প খাত (ক্লাস্টার) ধরে ঋণ সুবিধা দিতে হবে যেন ওই খাতটি করোনার ধাক্কা সামলে ওঠে দাড়াতে পারে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটি সমীক্ষা করা দরকার। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা শিল্প খাতের খরচ বাড়াবে। যৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো উচিত। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআিই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি আরমান হক প্রমুখ।
বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইউরোপ-বাংলাদেশ চেম্বার হবে
এদিকে পৃথক অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিদেশে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশগুলোর মূল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দেশে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে বিনিয়োগের প্রস্তাবও দেন। গতকাল শনিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ দেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও বিনিয়োগ বান্ধব নীতিগুলো তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আয় দিন দিন বাড়ছে। বিপুল জনসংখ্যার কারণে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বিশাল। তাই এ দেশে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখতে পারেন। এফবিসিসিআই’র উদ্যোগে পিডব্লিউসি লন্ডনের বাজারের ওপর গবেষণা করছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ গবেষণার ফলাফল জানা যাবে। গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে এফবিসিসিআই। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের বাজারেও একই ধরণের গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
এসময় ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারকে ফ্রান্সে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার আহ্বান জানান মো. জসিম উদ্দিন। ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ইউরোপে তৈরি পোশাকের বাইরে আরো অনেক পণ্য রপ্তানি হলেও সেগুলোর ভোক্তা মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিরাই। মূল ধারার বাজারে এখনো সেসব পণ্য খুব একটা পরিচিত হয়নি। এ অবস্থার উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যেকটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে ইউরোপ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভার সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, বিদেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে ফ্রান্সের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এমইডিইএফ ইন্টারন্যাশনাল ও ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে এফবিসিসিআই। এসব কার্যক্রমের ফলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরো সুদৃঢ় হয়েছে। যা দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করবে। এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সব শিল্পই রয়েছে। কিন্তু অনেকগুলোই অনানুষ্ঠানিকভাবে হওয়ায়, সঠিক তথ্য উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন আমিন হেলালী। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. নজরুল ইসলাম, ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নির্বাহী পরিচালক রুবাবা নভেরা সায়ীদ, ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সহ-সভাপতি ফখরুল আকন সেলিম, এফবিসিসিআই’র উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী ও ড. ফেরদৌসী বেগম।
কর না কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে: এফবিসিসিআই সভাপতি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ