ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কর অব্যাহতি কমাতে কাজ শুরু

  • আপডেট সময় : ০১:২৬:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী মাস থেকে কর অব্যাহতি নিয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু করবেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি নিয়ে পরিকল্পনা দিতে চায় এনবিআর। সেখানে কর অব্যাহতি দেওয়ার ফলে কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, তা জানানো হবে। এ ছাড়া কীভাবে কর অব্যাহতি কমানো যায়, এর সময়ভিত্তিক লক্ষ্য থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘কর অব্যাহতি দিলে সংসদে বসে হাততালি দেওয়া হয়। কিন্তু কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, সেই হিসাব দেওয়া হয় না। এ হিসাবও জানানো উচিত।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই গত অক্টোবর মাসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরকালে এনবিআরের শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে কোন কোন খাতকে কর অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়, তা নিয়ে পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছিল দাতা সংস্থাটি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেয় সংস্থাটি। বাংলাদেশ কর-জিডিপি অনুপাতে সারা বিশ্বের তলানির দেশগুলোর একটি। বর্তমানে কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের মতো। সম্প্রতি এনবিআরের এক সভায় কর অব্যাহতির বিষয়ে একটি পর্যালোচনা করতে একটি দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। শুল্ক, কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করবেন। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘকাল কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে কোন কোন খাত ভালো করেছে, কারা এগোতে পারেনি, তা দেখা হবে। যেসব খাত এগোতে পারেনি, তাদের কর অব্যাহতি কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। এনবিআরের আরেকটি সূত্র বলছে, বেশ কিছু খাতের অব্যাহতি সুবিধা ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। স্বাধীনতার পরপরই কর অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। সাধারণত বাজেটের সময় প্রজ্ঞাপন জারি করে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। বছরের মধ্যেও প্রজ্ঞাপন জারি করে অনেক সময় কর অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭২টি প্রজ্ঞাপন জারি করে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি কর অব্যাহতি আছে ভ্যাট খাতে। পুরো কৃষি খাতই ভ্যাটমুক্ত। এ ছাড়া স্বল্প হারে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেমন ভ্যাটে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে বেশ কিছু খাতে ১০, সাড়ে ৭ শতাংশসহ একাধিক ভ্যাট হার আছে। এ ছাড়া শুল্ক খাতেও কর অব্যাহতি আছে। এ কারণে বহু ভোগ্যপণ্যে শুল্ক নেই। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর অব্যাহতি দিলে সংসদে বসে হাততালি দেওয়া হয়। কিন্তু কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, সেই হিসাব দেওয়া হয় না। এ হিসাবও জানানো উচিত।’ তিনি আরও বলেন, আইএমএফের পরামর্শে এখন এনবিআর কর অব্যাহতি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে, এটা ভালো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তা বলে আসছিলাম। কর অব্যাহতির একটি সার্বিক পর্যালোচনা করে তা সংসদের সামনে তুলে ধরা উচিত। সংসদই সিদ্ধান্ত নিক কোথায় কর অব্যাহতি দেওয়া হবে। এখন তো আমরা জানতেই পারি না, কোন কোন খাতে কর অব্যাহতি আছে, আর তাতে কত রাজস্ব ক্ষতি হয়। ২০২০ সালে এনবিআরের তৈরি করা এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই বছর কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পণ্য আমদানির বিপরীতে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া আয়কর ও ভ্যাট খাতে আরও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এক নীতি বিবৃতি অনুযায়ী, বর্তমানে রপ্তানিকারক, দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রকল্পে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মোট আমদানির মধ্যে ৪৪ শতাংশ আমদানির ওপর কোনো শুল্ক-কর আদায় করা হয়নি। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমদানির (মোট আমদানির সাড়ে ২১ শতাংশ) ওপর কোনো শুল্ক-কর নেই। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনা শুল্কে আমদানির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শাহবাগে একই মঞ্চে ৩০ রাজনৈতিক দলের নেতারা

কর অব্যাহতি কমাতে কাজ শুরু

আপডেট সময় : ০১:২৬:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

অর্থনৈতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী মাস থেকে কর অব্যাহতি নিয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু করবেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি নিয়ে পরিকল্পনা দিতে চায় এনবিআর। সেখানে কর অব্যাহতি দেওয়ার ফলে কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, তা জানানো হবে। এ ছাড়া কীভাবে কর অব্যাহতি কমানো যায়, এর সময়ভিত্তিক লক্ষ্য থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘কর অব্যাহতি দিলে সংসদে বসে হাততালি দেওয়া হয়। কিন্তু কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, সেই হিসাব দেওয়া হয় না। এ হিসাবও জানানো উচিত।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই গত অক্টোবর মাসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরকালে এনবিআরের শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে কোন কোন খাতকে কর অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়, তা নিয়ে পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছিল দাতা সংস্থাটি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেয় সংস্থাটি। বাংলাদেশ কর-জিডিপি অনুপাতে সারা বিশ্বের তলানির দেশগুলোর একটি। বর্তমানে কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের মতো। সম্প্রতি এনবিআরের এক সভায় কর অব্যাহতির বিষয়ে একটি পর্যালোচনা করতে একটি দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। শুল্ক, কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করবেন। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘকাল কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে কোন কোন খাত ভালো করেছে, কারা এগোতে পারেনি, তা দেখা হবে। যেসব খাত এগোতে পারেনি, তাদের কর অব্যাহতি কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। এনবিআরের আরেকটি সূত্র বলছে, বেশ কিছু খাতের অব্যাহতি সুবিধা ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। স্বাধীনতার পরপরই কর অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। সাধারণত বাজেটের সময় প্রজ্ঞাপন জারি করে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। বছরের মধ্যেও প্রজ্ঞাপন জারি করে অনেক সময় কর অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭২টি প্রজ্ঞাপন জারি করে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি কর অব্যাহতি আছে ভ্যাট খাতে। পুরো কৃষি খাতই ভ্যাটমুক্ত। এ ছাড়া স্বল্প হারে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেমন ভ্যাটে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে বেশ কিছু খাতে ১০, সাড়ে ৭ শতাংশসহ একাধিক ভ্যাট হার আছে। এ ছাড়া শুল্ক খাতেও কর অব্যাহতি আছে। এ কারণে বহু ভোগ্যপণ্যে শুল্ক নেই। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর অব্যাহতি দিলে সংসদে বসে হাততালি দেওয়া হয়। কিন্তু কত রাজস্ব ক্ষতি হলো, সেই হিসাব দেওয়া হয় না। এ হিসাবও জানানো উচিত।’ তিনি আরও বলেন, আইএমএফের পরামর্শে এখন এনবিআর কর অব্যাহতি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে, এটা ভালো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তা বলে আসছিলাম। কর অব্যাহতির একটি সার্বিক পর্যালোচনা করে তা সংসদের সামনে তুলে ধরা উচিত। সংসদই সিদ্ধান্ত নিক কোথায় কর অব্যাহতি দেওয়া হবে। এখন তো আমরা জানতেই পারি না, কোন কোন খাতে কর অব্যাহতি আছে, আর তাতে কত রাজস্ব ক্ষতি হয়। ২০২০ সালে এনবিআরের তৈরি করা এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই বছর কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পণ্য আমদানির বিপরীতে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া আয়কর ও ভ্যাট খাতে আরও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এক নীতি বিবৃতি অনুযায়ী, বর্তমানে রপ্তানিকারক, দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রকল্পে কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মোট আমদানির মধ্যে ৪৪ শতাংশ আমদানির ওপর কোনো শুল্ক-কর আদায় করা হয়নি। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমদানির (মোট আমদানির সাড়ে ২১ শতাংশ) ওপর কোনো শুল্ক-কর নেই। শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিনা শুল্কে আমদানির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা।