লাইফস্টাইল ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে দেশব্যাপী। এ মুহূর্তে সবারই ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। ঠিক তেমনই বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না বরং কমতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে বড় হাতিহার হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর মতে, সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে। তাই করোনা সংক্রমণ এড়াতে হলে বাড়াতে হবে শরীরের ইমিউনিটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ সময় সবার উচিত ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। করোনা সংক্রমণ এড়াতে ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখা উচিত, জেনে নিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এর গাইডলাই
পানি বেশি, চিনি কম: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে, প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া জরুরি এ সময়। এর ফলে দেহে পানির অভাব হবে না। সেইসঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মনে রাখবেন, এখন যেহেতু রোজার মাস তাই সারাদিন পানি খাওয়া হবে না। তাই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি খেতেই হবে।
পাশাপাশি বিভিন্ন পানীয়তে চিনির ব্যবহার বন্ধ করুন। ইফতারে সবাই কমবেশি মিষ্টিজাতীয় শরবত বা খাবার খেয়ে থাকেন। এ সময় অবশ্যই তা এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়াও চিনি মেশানো কোনো পানীয়, কোমল পানীয়, জুস বা খাবার একেবারেই পরিহার করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন : করোনা সংক্রমণ এড়াতে সবারই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করতে হবে। এজন্য নিয়মিত শরীরচর্চা, ধ্যান এবং পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। শক্তিশালী করবে।
মাংস কম, সবজি বেশি : করোনাকালে চর্বিজাতীয় খাবারের বদলে শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া গাইডলাইন অনুসারে, সপ্তাহে ১-২ বার লাল মাংস খেতে পারবেন; তবে এর বেশি নয়। এ ছাড়াও মাছ, ডিম এবং দুধ নিয়মিত খেতে পারেন।
শস্য এবং বাদাম খান : বিভিন্ন শস্য উপাদান এবং বাদাম ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ভুট্টা, ওটস, গম, বাদামি চাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পুষ্টিগুণ থাকে। দৈনিক ১৮০ গ্রাম শস্য খেলে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। একই সঙ্গে ডায়েটে এ সময় ফলসহ বাদাম, নারকেল, পেস্তা জাতীয় বাদামও রাখতে হবে।
ফল এবং সবজি খেতে হবে : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেশ ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণ এড়াতে পেয়ারা, আপেল, কলা, রুটবেরি, আঙুর, আনারস, পেঁপে, কমলা জাতীয় ফল প্রতিদিন দুই কাপ করে খাবেন। অন্যদিকে সবজির মধ্যে সবুজ ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ, রসুন, আদা, কলা, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, ব্রোকলি খেতে হবে। চিনি, লবণ এবং ফ্যাটযুক্ত খাবারের চেয়ে বেশি তাজা ফল এবং কাঁচা শাকসবজি খাওয়া উচিত। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
যেসব খাবার পরিহার করবেন : এ সময় অতিরিক্ত লবণ দেওয়া খাবার খেলে খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ না খাওয়াই ভালো। এবার জেনে নিন করোনা সংক্রমণ এড়াতে রান্নাঘরের যে বিষয়গুলো সবসময় অনুসরণ করবেন-
প্রতিবার খাওয়ার আগে পানি দিয়ে ফল ও সবজি ধুয়ে নিন।
ব্যবহারের আগে এবং পরে বাসনপত্র ধুয়ে রাখুন।
সবসময় রান্না করা এবং কাঁচা খাবার আলাদা করে রাখুন।
খুব বেশি গরম খাবার খোলা রাখবেন না বা পরিবেশন করবেন না। এতে সহজেই খাবারে জীবাণু জমতে পারে।
শাকসবজি বেশি রান্না করবেন না। এতে ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
আক্রান্ত হলে যেসব খাবার বেশি খাবেন : করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেন। বাড়িতে ঠিকঠাকভাবে খাওয়া-দাওয়া করলে লড়াই করা যাবে এই কঠিন ভাইরাসের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী গ্রহণ করতে হবে, এবং কী এড়িয়ে চলতে হবে তা জেনে নিন।
করোনাভাইরাসের কারণে পেটের সমস্যা দেখা দিলে লেবু অথবা ভিনিগারের মতো খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত এই সময়ে।
এমনিতে গরম তার উপর করোনার চোখ রাঙানির ফলে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সকলে। এই সময়ে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকেরা। তারা জানিয়েছে, করোনায় পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যার ফলে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, আদা মধু দিয়ে চা পান করা দরকার।
করোনার বড় উপসর্গ হচ্ছে স্বাদ কিংবা গন্ধ না মেলা। করোনার কারণে হঠাৎ করে স্বাদ চলে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার খেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে সংক্রমিত ব্যক্তির। সেই কারণে এই সময়ে তেল-ঝাল-মশলা যুক্ত খাবার না খাওয়া ভালো। অল্প মশলাজাত খাবার খেতে সমস্যা হলে সিদ্ধ রান্না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পাবার জন্য অনেকে নানা ধরণের ওষুধ খেয়ে চলেছেন। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ না নিয়ে ওষুধ খেলে হতে পারে নানা বিপদ। যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করে খাওয়া দরকার। করোনার সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরে ইমিউনিটি খুব দরকার বর্তমান সময়ে। অনেকে শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে নানা ধরনের ওষুধ খেয়েও চলেছে। তবে প্রতিদিন সকালে লেবু পানি খেলে বাড়তে পারে ইমিউনিটি। পাশাপাশি কারি পাতা, তুলসি পাতা এবং মধু মিশিয়ে খেলে বৃদ্ধি পেতে পারে শরীরে ইমিউনিটি পরিমাণ। সূত্র: এনবিটি