ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা নিম্মমুখী হলেও নিয়ন্ত্রণে নয়

  • আপডেট সময় : ০৮:৪২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ ধরা হয়। সেই হিসেবে দেশে করোনা সংক্রমণ এখন নি¤œমুখী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের আগে-পরে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে গত কয়েকদিনে শনাক্তের হার ও মৃত্যু কমেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এতে আত্মতুষ্টিতে থাকা যাবে না। বরং, মানুষ এখন যে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাতে সংক্রমণের হার ফের বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
দুই মাসের মধ্যে করোনায় সর্বনি¤œ মৃত্যু হলো গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময় ১০২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওইদিনের খবরে শেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৬৯৮ জন। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তার আগেরদিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ শতাংশের নিচে। টানা ৭০ দিন পর দেশে শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের কম ছিল বৃহস্পতিবার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ২৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা গত দশ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে। সেদিন মোট ৩ হাজার ৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ; আগের দিন বৃহস্পতিবার এই হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল। আর সর্বশেষ এরচেয়ে কম শনাক্তের হার ছিল ৯ জুন, সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।
‘এখন সংক্রমণ কমছে, মৃত্যুও কমছে।’ এমনটা জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের আগে-পরে যে বিধিনিষেধ ছিল, ১০ আগস্ট পর্যন্ত তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।
‘মৃত্যু আরও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কমতে পারে। তবে এরপর সংক্রমণ বাড়তে পারে। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে বাড়বে নাকি দ্রুত বাড়বে তা নির্ভর করছে সংক্রমণের ক্লাস্টারগুলো ভেঙে দেওয়া গেছে কিনা তার ওপর।’ বলেন মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। ‘ক্লাস্টার (একই জায়গায় কম দূরত্বে একাধিক রোগী) যদি ভেঙে যায়, তবে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়বে। এক-দুই মাস সময় নেবে বিপজ্জনক মাত্রায় উঠতে। আর যদি ক্লাস্টার থাকে, তবে গত ঈদের পর যেভাবে বেড়েছিল সেভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ বলেন তিনি।
ডা. মুশতাক বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে প্রতিটি শনাক্ত রোগীকে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সহায়তা করা। কমিউনিটিরও এ দায়িত্ব আছে। টিকাদান কর্মসূচিতেও সবার অংশগ্রহণে সহায়তা করতে হবে। তবেই সংক্রমণ কমবে।’ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারকে ‘কঠোর’ হওয়া উচিত কিনা প্রশ্নে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কঠোর শব্দটির সঙ্গে একমত নই। সরকারকে সহায়তা দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যেসব উপকরণ দরকার তাতেও যেন ঘাটতি না থাকে।’ এদিকে সারা বিশ্বে ডেলটার দাপট চলছে এখনও। অন্তত ১৪২টি দেশে করোনার অতিসংক্রামক এ ধরন ছড়িয়েছে। ডেল্টার দাপটে ২৫ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দেশে দুই শ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৫ ও ১০ আগস্টে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে দেশে। এদিকে ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিনে করোনায় দেশে মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ২৩ হাজার। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হন। ঈদের পরে কঠিন বিধিনিষেধের কারণে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শনাক্তের সংখ্যা। গত ১৩ আগস্টে দৈনিক শনাক্ত ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে।
দেশে দশ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤œ শনাক্ত : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার ধারায় দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এবং পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার নেমে এসেছে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর্যায়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ২৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা গত দশ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে। সেদিন মোট ৩ হাজার ৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ; আগের দিন বৃহস্পতিবার এই হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল। আর সর্বশেষ এরচেয়ে কম শনাক্তের হার ছিল ৯ জুন, সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪ হাজার ৬৯৮ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ১০২ জনের। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৫৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৮৪৬ জনের। গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ১ হাজার ৬১৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ২ হাজার ৬০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। যে ১১৭ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া ১১৭ জনের মধ্যে ৫৬ জন ছিল পুরুষ এবং ৬১ জন নারী। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মত দৈনিক মৃত্যুতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হল। মহামারীর দেড় বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যত পুরুষ মারা গেছে, নারী মারা গেছে তার অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের পর অগাস্ট মাসেই নারীর মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন আরও ৬ হাজার ৪৮৫ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৪ হাজার ৩৭০ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ অগাস্ট তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ৪৭ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৫৭৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৮৬৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জে ১৯৪ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২৬৯ জন এবং কুমিল্লায় ১১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আর সিলেটে ১১৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২৫ জন, অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশিই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ৬ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে ১১ জন, সিলেট বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১১৭ জনের মধ্যে ৬৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জন করে ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর এবং ১০ বছরের কম ছিল। মৃতদের মধ্যে ৯২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৭ জন বাসায় মারা যান।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

করোনা নিম্মমুখী হলেও নিয়ন্ত্রণে নয়

আপডেট সময় : ০৮:৪২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ ধরা হয়। সেই হিসেবে দেশে করোনা সংক্রমণ এখন নি¤œমুখী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের আগে-পরে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে গত কয়েকদিনে শনাক্তের হার ও মৃত্যু কমেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এতে আত্মতুষ্টিতে থাকা যাবে না। বরং, মানুষ এখন যে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, তাতে সংক্রমণের হার ফের বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
দুই মাসের মধ্যে করোনায় সর্বনি¤œ মৃত্যু হলো গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময় ১০২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওইদিনের খবরে শেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৬৯৮ জন। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তার আগেরদিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ শতাংশের নিচে। টানা ৭০ দিন পর দেশে শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের কম ছিল বৃহস্পতিবার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ২৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা গত দশ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে। সেদিন মোট ৩ হাজার ৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ; আগের দিন বৃহস্পতিবার এই হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল। আর সর্বশেষ এরচেয়ে কম শনাক্তের হার ছিল ৯ জুন, সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।
‘এখন সংক্রমণ কমছে, মৃত্যুও কমছে।’ এমনটা জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের আগে-পরে যে বিধিনিষেধ ছিল, ১০ আগস্ট পর্যন্ত তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।
‘মৃত্যু আরও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কমতে পারে। তবে এরপর সংক্রমণ বাড়তে পারে। কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে বাড়বে নাকি দ্রুত বাড়বে তা নির্ভর করছে সংক্রমণের ক্লাস্টারগুলো ভেঙে দেওয়া গেছে কিনা তার ওপর।’ বলেন মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। ‘ক্লাস্টার (একই জায়গায় কম দূরত্বে একাধিক রোগী) যদি ভেঙে যায়, তবে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়বে। এক-দুই মাস সময় নেবে বিপজ্জনক মাত্রায় উঠতে। আর যদি ক্লাস্টার থাকে, তবে গত ঈদের পর যেভাবে বেড়েছিল সেভাবে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ বলেন তিনি।
ডা. মুশতাক বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে প্রতিটি শনাক্ত রোগীকে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সহায়তা করা। কমিউনিটিরও এ দায়িত্ব আছে। টিকাদান কর্মসূচিতেও সবার অংশগ্রহণে সহায়তা করতে হবে। তবেই সংক্রমণ কমবে।’ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারকে ‘কঠোর’ হওয়া উচিত কিনা প্রশ্নে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘কঠোর শব্দটির সঙ্গে একমত নই। সরকারকে সহায়তা দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যেসব উপকরণ দরকার তাতেও যেন ঘাটতি না থাকে।’ এদিকে সারা বিশ্বে ডেলটার দাপট চলছে এখনও। অন্তত ১৪২টি দেশে করোনার অতিসংক্রামক এ ধরন ছড়িয়েছে। ডেল্টার দাপটে ২৫ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দেশে দুই শ’রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৫ ও ১০ আগস্টে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে দেশে। এদিকে ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিনে করোনায় দেশে মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ২৩ হাজার। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হন। ঈদের পরে কঠিন বিধিনিষেধের কারণে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শনাক্তের সংখ্যা। গত ১৩ আগস্টে দৈনিক শনাক্ত ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে।
দেশে দশ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনি¤œ শনাক্ত : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার ধারায় দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এবং পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার নেমে এসেছে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর্যায়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ২৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা গত দশ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে। সেদিন মোট ৩ হাজার ৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ; আগের দিন বৃহস্পতিবার এই হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল। আর সর্বশেষ এরচেয়ে কম শনাক্তের হার ছিল ৯ জুন, সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। দেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে, যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪ হাজার ৬৯৮ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ১০২ জনের। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৫৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হল; তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৫ হাজার ৮৪৬ জনের। গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ১ হাজার ৬১৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিন এ বিভাগে ২ হাজার ৬০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। যে ১১৭ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া ১১৭ জনের মধ্যে ৫৬ জন ছিল পুরুষ এবং ৬১ জন নারী। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মত দৈনিক মৃত্যুতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হল। মহামারীর দেড় বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে যত পুরুষ মারা গেছে, নারী মারা গেছে তার অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের পর অগাস্ট মাসেই নারীর মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন আরও ৬ হাজার ৪৮৫ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৪ হাজার ৩৭০ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২০ অগাস্ট তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ৪৭ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৫৭৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৮, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৮৬৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জে ১৯৪ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ২৬৯ জন এবং কুমিল্লায় ১১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আর সিলেটে ১১৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২৫ জন, অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশিই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ৬ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে ১১ জন, সিলেট বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১১৭ জনের মধ্যে ৬৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জন করে ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর এবং ১০ বছরের কম ছিল। মৃতদের মধ্যে ৯২ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৭ জন বাসায় মারা যান।