নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনার টেস্ট করা হচ্ছে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে প্রতারণায় নামে একটি চক্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া অনুমোদন দেখিয়ে টিকেএস গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান করোনা টেস্টের জন্য সারাদেশে বুথ স্থাপন ও লোক নিয়োগ শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী ডিলারশিপ ও লোক নিয়োগের নামে ২০০ কোটি টাকা আয় করা। তবে তাদের কাজ শুরুর আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলো চক্রের হোতারা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন টিকেএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিকেএস হেলথ সার্ভিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ আল-আমিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহিন মিয়া।
গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ এ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশিদ বলেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই টিকেএস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিকেএস হেলথ সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন করে। আবেদনে তারা দেশের আটটি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা এবং ৪৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা থাকা এবং তাদের মোট ৫১২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করে। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কথিত একটি আবেদন এসেছে। আর অনুমোদন পাওয়ার আগেই তারা সারাদেশে লোক নিয়োগ দিচ্ছিল। গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূল তিন হোতাকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশকে তারা জানিয়েছেন, তাদের এই ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। তারা আগে থেকেই জানতো অনুমোদন পাবে না। তাই তারা সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রশাসন অধিশাখা-১ এর একটি স্মারক জালিয়াতি করে। এছাড়া তারা একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর, সিল করে নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ এবং ক্যাম্পাস স্থাপনের ভুয়া অনুমোদন তৈরি করে। এরই মধ্যে চক্রটি ঝালকাঠি উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্নজনকে নিয়োগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে। হারুন অর রশিদ বলেন, চক্রের অন্যতম সদস্য ও পরিকল্পনাকারী আদুল্লাহ আল আমিন ও আবুল হোসেন তুষার অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তারা সে চাকরি ছেড়ে এই প্রতারণার কাজে নামেন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়া। আর এতে দুই লাখ করে ২০০টি ক্যাম্পাস থেকে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এছাড়া তারা বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের নামে ২৫০০ করে টাকা নিতেন। প্রোফাইল তৈরি, আইডি কার্ড ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা বলে এই টাকা হাতিয়ে নিতো। এভাবে এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
করোনা টেস্টের নামে চক্রটির টার্গেট ছিল ২০০ কোটি প্রতারণা!
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ