ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

করোনায় মৃত্যুভয় ও জীবনের হিসাব-নিকাশ

  • আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম : সাম্প্রতিককালে করোনায় বাংলাদেশ সর্ব্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে। রোগী মৃত্যুহার, শনাক্ত এবং সংক্রমণ সব কিছুই এখন ঊর্ধ্বমুখী। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার যত ধরন রয়েছে সেগুলোর সব ধরন আমাদের দেশে ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন দেরিতে হলেও আবার রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় কিছুটা আশা দেখছি। অক্সিজেন সংকটে এখনও পড়তে হয়নি। তবে এখনই প্রস্তুতি না নিলে অক্সিজেনের সংকটও দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লকডাউনে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মানুষ আগের থেকে মাস্কপরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে তৎপর তা কিছুটা হলেও প্রতীয়মান। যারা মাস্ক পরছে না তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যেই আবার খবর আসছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের ঘর উপহার দেয়া ও তাতে দুর্নীতির খবর প্রকাশ এবং কর্তা ব্যক্তিদের ওসডি করাসহ নানা অনিয়মের খবরাখবরও আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। করোনাভাইরাসে যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব নাকাল তখন দুর্নীতির সংবাদ সত্যিই বেদনার ও জাতি হিসেবে অবশ্যই কলঙ্কের। যদিও ব্যক্তির দায় অন্য কেউ বহন করবে না। সংসদে আমলা নির্ভরতার কথাও স্বয়ং সরকারি দলের রাজনীতিবিদরাই আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছে। যাই হোক আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো আমরা আর কবে শোধরাবো। চোখের সামনে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে তা দেখেও আমরা শিখছি না কেন? আমার প্রশ্ন এখানেই।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ সাহেব ও তার হাসপাতাল বিজনেস করার কথা এখন কমবেশি সবাই জানে। উনি যে হাসপাতালের বিজনেস করতেন তা এখন সবার কাছে পরিস্কার। করোনা স্যাম্পল নিয়ে নেগেটিভ পজেটিভ রেজাল্ট দিতে ব্যবসা করেছেন। যে রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারি আতঙ্করুপ নিলো সেই রোগ নির্ণয়ের জন্য সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপ নিলেন। প্রথম দিকে এরকম সাহসী উদ্যোগ নেয়ার কেউ সাহসই দেখাতে চাইলেন না।
খুব সংক্ষেপে বললে উনি ব্যবসা ভালো বুঝেন তা জানা গেল। কারণ সময়ে ব্যবসা করতে না পারলে গেইন করা যায় না তা তিনি ভালো করে উপলিব্ধি করেছেন। তবে তিনি মানুষের দুর্বলতার ও সরলতার সুযোগ নিয়ে জীবন নিয়ে খেলা করেছেন। একদিকে যেমন তাকে ভালো ও বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী বলবো অন্যদিকে জীবন নিয়ে খেলা করায় তার শাস্তি দাবী করবো। এখন তার স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা সকলেই তার খারাপ কাজের শাস্তি দাবী করছে। তারা কিছুই জানেনা বলে দাবী করেছিল।যা সত্য-না মিথ্যা তা তদন্তে সব বেরিয়ে এসছে। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য শাহেদ সাহেবকে নিয়ে নয়। আসলে করোনা কি শিক্ষা দিয়ে গেলো তা নিরুপণ করার চেষ্টা করা।
করোনার সময় কিছু জিনিষের ব্যবসা ভালো হয়েছে। যেমন ধরুন, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, করোনা পরীক্ষা করা ইত্যাদি। চীনে শুরু হয়েছে তা সবাই জানি। পরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। প্রায় ৫০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি এসব তথ্য ও সকলেই জানি। কিন্তু করোনা নিয়ে যত দূর্নীতি বাংলাদেশে হয়েছে বা হচ্ছে তা অন্য কোন দেশে হয়েছে কিনা তা প্রশ্ন রয়ে গেছে। প্রথমে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারী, এরপর দেখা গেলো যত ধরণের জীবানুনাশক আগে পাওয়া যেত সবই নকল করে বানান শুরু হয়ে গেল এই বাংলাদেশে।
পৃথিবীর অন্য কোন দেশে করোনার মতো রোগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার স্বপ্ন আমাদের দেশের এক শ্রেণীর কুচক্রী ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ দেখানোর সাহস দেখায়নি। সেখানেও আমরা ও বিশ্বব্যাপী করোনা পন্য জালিয়াতি ও ভেজাল দিতে এমন কি করোনা টেস্ট নেগেটিভ/পজেটিভ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকলাম। যা সত্যিই মনে অনেক চিন্তার খোরাক যোগায়। আর মনে মনে ভয় লাগে ইস যদি এখনই মরে যায় তাহলে এতো এতো টাকা পয়সা দিয়ে কি লাভ। কি হবে সেই সব স্ত্রী, সন্তান যারা এখন স্বামী বা পিতা কি ব্যবসা করতো তা মোটেও জানত বলে মিডিয়ায় জানা যাচ্ছে। সত্যি বড়ই বিচিত্র এই দুনিয়া। বিপদের দিনে নিজ স্ত্রী সন্তানকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। দুনিয়ার রীতি এটাই যাদের জন্য আপনি আমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করছি তারা বিপদের দিনে আজ আমাকে আপনাকে চিনছে না। আমার মনে হয় শাহেদ সাহেব অর্থ্যাৎ পলাতক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ জেলখানায় বসে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি। কোন মনীষী এই কথা বলেছেন তা মনে নেই তবে এটার অর্থ ভালো করেই বুঝেছিলাম। একদিন আপনি আমি অবশ্যম্ভাবী মারা যাব জেনেও হন্যে হয়ে মিথ্যা আশায় মরীচিকার পিছনে ছুটছি তো ছুটছি। মৃত্যু জেনওে দুর্নীতি করছি। এই ছুটাছুটির যে শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। করোনায় আপনি বা আমি আজ মরে গেলে কবরে লাশ নিয়ে যাওয়ার আপনজন খুঁজে পাইছি না। শুধু তাই না পিতা সন্তানকে ছেড়ে যাচ্ছে এবং সন্তান পিতা-মাতাকে। এই তো জীবন। ক্ষমতার মোহে ন্যায়-অন্যায় বিসর্জন দিয়ে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের পিছনে ছুটছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ভালো পদের বসার যে প্রতিযোগিতা এতো মৃত্যু পর্যন্তই। করোনা ভাইরাসে ধনী-গরিব সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে। কোন ভেদাভেদ করছে না এবং কাউকেই ছাড়ছে না। সবশেষে একটা ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে হবে। জীবনকে সঠিকপথে চালিত করতে হবে।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারা পৃথিবী তটস্থ সেখানে নতুন করে এই ভাইরাসটি আস্থা সংকট তৈরিতে সারা পৃথিবীতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে কি চিন্তিত হয়ে গেলেন। না চিন্তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে আস্থা ধরে রাখতে হবে শেষ অবধি। যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে। কিভাবে আস্থা বিনষ্টকারী ভাইরাস হলো পাঠক নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে। আমি সেই কথাই বলব যে কিভাবে ডাক্তার-রোগীর, ছাত্র-শিক্ষকের, মানুষে মানুষে, পিতা-পুত্রের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, এক দেশ আরেক দেশের মধ্যে, এক রাজা আরেক রাজার মধ্যে আস্থা বিনস্টকারী এক নম্বর স্থানটি করোনা ভাইরাস দখল করেছে। বিষয়টি একদিকে আতঙ্কের তেমনি অপরদিকে শিহরণ জাগানোর মতো ব্যাপার। আমি ভয় সৃস্টি করতে এই লেখা লিখছি না। সতর্ক হতে হবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব থিওরি মানতে হবে। বেশি বেশি করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে যেটা এই বিশ্বে এখন ভালোবাসা ও আস্থা সংকটে রুপ নিয়েছে। সন্তান তার মাকে বন জঙ্গলে ফেলে রেখে আসছে। করোনা শুনে স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৩০/৪০ বছরের সংসার ভেঙে চলে যাচ্ছে। একে অপরের মধ্যে ডিভোর্স নিচ্ছে। আরো কত কি?

করোনা কাউকে ছাড় দিতে আসেনি, কে ধনী, কে গরিব না বাছ বিচার করে সবাইকে স্পর্শ করে যাচ্ছে নির্মমভাবে। একবার যদি করোনা ধরে ফেলে আমাকে আপনাকে তবে শোধরানোর সময় পাব কিনা সন্দেহ আছে। যদি সময় না পায় তাহলে সব আতœঅহমিকা মূহুর্তের মধ্যে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। পড়ে থাকবে শুধু কর্ম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের কাজে সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ, রিজেন্ট হাপাতালের মালিক বা নকল মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ এই বিষয়ে সচেতন কিনা সেটিই প্রশ্ন। এমনিতেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে অতি আপনজনও কাছে আসছে না। তেমনি আপনি আমি যদি করোনার সাথে চাল চোরের গালি নিয়ে মৃত্যুবরণ করি তবে সারাজীবন বিশ্বাস হারিয়ে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশ্বাস নিশ্বাসেরও চেয়ে গুরুত্ব বহন করে।বিশ্বাস না থাকলে বেঁচে থেকেও মৃত।সামনে পবিত্র হজ্ব ও কুরবাণির সময় ঘনিয়ে আসছে।

একারনে করোনার কঠিন শিক্ষা বাদেও সামনে কুরবানী ও হজ্বের যে শিক্ষা আমরা মুসলমানরা কুরআন হাদীসের আলোকে জানি তা কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের বাস্তব জীবনে কুরবানী ও হয়রত ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর শিক্ষা নিয়ে ও ধারণ করে করোনা সংকট হতে রেহাই পেতে হলেও এ যাত্রায় অন্তত তওবা এস্তেগফার পড়ে ভালো হওয়ার অঙ্গিকার করি। আর তাতে যদি করোনা মহামারি কেটে যাই তাহলে সেটাই মঙ্গল। তবে করোনা ভাইরাসের শিক্ষা শুধু প্রজারা নিবে তা নয় রাজা-বাদশাদের ও গ্রহণ করে ন্যায়ের আলোকে দেশ ও রাজ্য পরিচালনার শিক্ষায় ব্রতী হয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাশিয়ায় ড্রোন হামলা চালিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করল ইউক্রেন

করোনায় মৃত্যুভয় ও জীবনের হিসাব-নিকাশ

আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম : সাম্প্রতিককালে করোনায় বাংলাদেশ সর্ব্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে। রোগী মৃত্যুহার, শনাক্ত এবং সংক্রমণ সব কিছুই এখন ঊর্ধ্বমুখী। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার যত ধরন রয়েছে সেগুলোর সব ধরন আমাদের দেশে ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন দেরিতে হলেও আবার রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় কিছুটা আশা দেখছি। অক্সিজেন সংকটে এখনও পড়তে হয়নি। তবে এখনই প্রস্তুতি না নিলে অক্সিজেনের সংকটও দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লকডাউনে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মানুষ আগের থেকে মাস্কপরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে তৎপর তা কিছুটা হলেও প্রতীয়মান। যারা মাস্ক পরছে না তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যেই আবার খবর আসছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের ঘর উপহার দেয়া ও তাতে দুর্নীতির খবর প্রকাশ এবং কর্তা ব্যক্তিদের ওসডি করাসহ নানা অনিয়মের খবরাখবরও আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। করোনাভাইরাসে যখন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব নাকাল তখন দুর্নীতির সংবাদ সত্যিই বেদনার ও জাতি হিসেবে অবশ্যই কলঙ্কের। যদিও ব্যক্তির দায় অন্য কেউ বহন করবে না। সংসদে আমলা নির্ভরতার কথাও স্বয়ং সরকারি দলের রাজনীতিবিদরাই আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছে। যাই হোক আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো আমরা আর কবে শোধরাবো। চোখের সামনে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে তা দেখেও আমরা শিখছি না কেন? আমার প্রশ্ন এখানেই।
করোনার প্রথম ঢেউয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ সাহেব ও তার হাসপাতাল বিজনেস করার কথা এখন কমবেশি সবাই জানে। উনি যে হাসপাতালের বিজনেস করতেন তা এখন সবার কাছে পরিস্কার। করোনা স্যাম্পল নিয়ে নেগেটিভ পজেটিভ রেজাল্ট দিতে ব্যবসা করেছেন। যে রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারি আতঙ্করুপ নিলো সেই রোগ নির্ণয়ের জন্য সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপ নিলেন। প্রথম দিকে এরকম সাহসী উদ্যোগ নেয়ার কেউ সাহসই দেখাতে চাইলেন না।
খুব সংক্ষেপে বললে উনি ব্যবসা ভালো বুঝেন তা জানা গেল। কারণ সময়ে ব্যবসা করতে না পারলে গেইন করা যায় না তা তিনি ভালো করে উপলিব্ধি করেছেন। তবে তিনি মানুষের দুর্বলতার ও সরলতার সুযোগ নিয়ে জীবন নিয়ে খেলা করেছেন। একদিকে যেমন তাকে ভালো ও বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী বলবো অন্যদিকে জীবন নিয়ে খেলা করায় তার শাস্তি দাবী করবো। এখন তার স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা সকলেই তার খারাপ কাজের শাস্তি দাবী করছে। তারা কিছুই জানেনা বলে দাবী করেছিল।যা সত্য-না মিথ্যা তা তদন্তে সব বেরিয়ে এসছে। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য শাহেদ সাহেবকে নিয়ে নয়। আসলে করোনা কি শিক্ষা দিয়ে গেলো তা নিরুপণ করার চেষ্টা করা।
করোনার সময় কিছু জিনিষের ব্যবসা ভালো হয়েছে। যেমন ধরুন, মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, করোনা পরীক্ষা করা ইত্যাদি। চীনে শুরু হয়েছে তা সবাই জানি। পরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। প্রায় ৫০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি এসব তথ্য ও সকলেই জানি। কিন্তু করোনা নিয়ে যত দূর্নীতি বাংলাদেশে হয়েছে বা হচ্ছে তা অন্য কোন দেশে হয়েছে কিনা তা প্রশ্ন রয়ে গেছে। প্রথমে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারী, এরপর দেখা গেলো যত ধরণের জীবানুনাশক আগে পাওয়া যেত সবই নকল করে বানান শুরু হয়ে গেল এই বাংলাদেশে।
পৃথিবীর অন্য কোন দেশে করোনার মতো রোগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার স্বপ্ন আমাদের দেশের এক শ্রেণীর কুচক্রী ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ দেখানোর সাহস দেখায়নি। সেখানেও আমরা ও বিশ্বব্যাপী করোনা পন্য জালিয়াতি ও ভেজাল দিতে এমন কি করোনা টেস্ট নেগেটিভ/পজেটিভ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকলাম। যা সত্যিই মনে অনেক চিন্তার খোরাক যোগায়। আর মনে মনে ভয় লাগে ইস যদি এখনই মরে যায় তাহলে এতো এতো টাকা পয়সা দিয়ে কি লাভ। কি হবে সেই সব স্ত্রী, সন্তান যারা এখন স্বামী বা পিতা কি ব্যবসা করতো তা মোটেও জানত বলে মিডিয়ায় জানা যাচ্ছে। সত্যি বড়ই বিচিত্র এই দুনিয়া। বিপদের দিনে নিজ স্ত্রী সন্তানকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। দুনিয়ার রীতি এটাই যাদের জন্য আপনি আমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করছি তারা বিপদের দিনে আজ আমাকে আপনাকে চিনছে না। আমার মনে হয় শাহেদ সাহেব অর্থ্যাৎ পলাতক রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ জেলখানায় বসে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি। কোন মনীষী এই কথা বলেছেন তা মনে নেই তবে এটার অর্থ ভালো করেই বুঝেছিলাম। একদিন আপনি আমি অবশ্যম্ভাবী মারা যাব জেনেও হন্যে হয়ে মিথ্যা আশায় মরীচিকার পিছনে ছুটছি তো ছুটছি। মৃত্যু জেনওে দুর্নীতি করছি। এই ছুটাছুটির যে শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। করোনায় আপনি বা আমি আজ মরে গেলে কবরে লাশ নিয়ে যাওয়ার আপনজন খুঁজে পাইছি না। শুধু তাই না পিতা সন্তানকে ছেড়ে যাচ্ছে এবং সন্তান পিতা-মাতাকে। এই তো জীবন। ক্ষমতার মোহে ন্যায়-অন্যায় বিসর্জন দিয়ে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের পিছনে ছুটছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ভালো পদের বসার যে প্রতিযোগিতা এতো মৃত্যু পর্যন্তই। করোনা ভাইরাসে ধনী-গরিব সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে। কোন ভেদাভেদ করছে না এবং কাউকেই ছাড়ছে না। সবশেষে একটা ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে হবে। জীবনকে সঠিকপথে চালিত করতে হবে।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারা পৃথিবী তটস্থ সেখানে নতুন করে এই ভাইরাসটি আস্থা সংকট তৈরিতে সারা পৃথিবীতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে কি চিন্তিত হয়ে গেলেন। না চিন্তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে আস্থা ধরে রাখতে হবে শেষ অবধি। যতদিন এই দেহে প্রাণ আছে। কিভাবে আস্থা বিনষ্টকারী ভাইরাস হলো পাঠক নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে। আমি সেই কথাই বলব যে কিভাবে ডাক্তার-রোগীর, ছাত্র-শিক্ষকের, মানুষে মানুষে, পিতা-পুত্রের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, এক দেশ আরেক দেশের মধ্যে, এক রাজা আরেক রাজার মধ্যে আস্থা বিনস্টকারী এক নম্বর স্থানটি করোনা ভাইরাস দখল করেছে। বিষয়টি একদিকে আতঙ্কের তেমনি অপরদিকে শিহরণ জাগানোর মতো ব্যাপার। আমি ভয় সৃস্টি করতে এই লেখা লিখছি না। সতর্ক হতে হবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব থিওরি মানতে হবে। বেশি বেশি করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে যেটা এই বিশ্বে এখন ভালোবাসা ও আস্থা সংকটে রুপ নিয়েছে। সন্তান তার মাকে বন জঙ্গলে ফেলে রেখে আসছে। করোনা শুনে স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৩০/৪০ বছরের সংসার ভেঙে চলে যাচ্ছে। একে অপরের মধ্যে ডিভোর্স নিচ্ছে। আরো কত কি?

করোনা কাউকে ছাড় দিতে আসেনি, কে ধনী, কে গরিব না বাছ বিচার করে সবাইকে স্পর্শ করে যাচ্ছে নির্মমভাবে। একবার যদি করোনা ধরে ফেলে আমাকে আপনাকে তবে শোধরানোর সময় পাব কিনা সন্দেহ আছে। যদি সময় না পায় তাহলে সব আতœঅহমিকা মূহুর্তের মধ্যে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। পড়ে থাকবে শুধু কর্ম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের কাজে সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ, রিজেন্ট হাপাতালের মালিক বা নকল মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ এই বিষয়ে সচেতন কিনা সেটিই প্রশ্ন। এমনিতেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে অতি আপনজনও কাছে আসছে না। তেমনি আপনি আমি যদি করোনার সাথে চাল চোরের গালি নিয়ে মৃত্যুবরণ করি তবে সারাজীবন বিশ্বাস হারিয়ে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশ্বাস নিশ্বাসেরও চেয়ে গুরুত্ব বহন করে।বিশ্বাস না থাকলে বেঁচে থেকেও মৃত।সামনে পবিত্র হজ্ব ও কুরবাণির সময় ঘনিয়ে আসছে।

একারনে করোনার কঠিন শিক্ষা বাদেও সামনে কুরবানী ও হজ্বের যে শিক্ষা আমরা মুসলমানরা কুরআন হাদীসের আলোকে জানি তা কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের বাস্তব জীবনে কুরবানী ও হয়রত ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর শিক্ষা নিয়ে ও ধারণ করে করোনা সংকট হতে রেহাই পেতে হলেও এ যাত্রায় অন্তত তওবা এস্তেগফার পড়ে ভালো হওয়ার অঙ্গিকার করি। আর তাতে যদি করোনা মহামারি কেটে যাই তাহলে সেটাই মঙ্গল। তবে করোনা ভাইরাসের শিক্ষা শুধু প্রজারা নিবে তা নয় রাজা-বাদশাদের ও গ্রহণ করে ন্যায়ের আলোকে দেশ ও রাজ্য পরিচালনার শিক্ষায় ব্রতী হয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট