ঢাকা ১২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনায় কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ মানুষ : সিপিডি

  • আপডেট সময় : ০১:৪২:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মে ২০২১
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির কারণে গত একবছরে ৬২ শতাংশ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন। অনেকে পুনরায় কাজ শুরু করতে সক্ষম হলেও কমেছে অধিকাংশের আয়। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নি¤œআয়ের মানুষের।
গতকাল বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত অনলাইন সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
‘করোনাকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শীর্ষক খানা জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য-উপাত্ত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও অক্সফাম বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপ কাজটি পরিচালনা করে।
দেশের ১৬টি জেলা এবং শহর ও গ্রাম মিলিয়ে বাছাই করা ২ হাজার ৬শ’ পরিবারের তথ্য নিয়ে জরিপের কাজ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হয়।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপটি পরিচালনা করেন। সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান জরিপের ফলাফলের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ মানুষ করোনা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। যার বড় অংশ ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কর্মহীন হয়েছেন। পরে অনেকেই কাজে ফিরলেও আগের মতো আর চাকরি ফিরে পাননি। কর্মহীনদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ একমাসের বেশি বেকার ছিলেন। তবে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে— জরিপকালে দেখা গেছে, প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায়।’
জরিপে দেখা গেছে, কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এ খাতে ১৮.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সেবা খাতে ১.৫৪ শতাংশ কর্মসংস্থান কমেছে। আবার শিল্প খাতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৮৬ শতাংশ। তার মানে হচ্ছে— কর্মসংস্থান সেবা খাত থেকে কমে কৃষি খাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশই ছিল স্ব-প্রণোদিত। তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছেন। কেউ কেউ স্ব-উদ্যোগে কৃষিকাজ বেছে নিয়েছেন, কিংবা কৃষিকাজে পরিবারকে সহায়তা করছেন। আবার কিছু মানুষ ডে-লেবার হিসেবে কাজ করছেন। তবে তাদের কাজের কর্মঘণ্টা কমেছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, অধিক পরিমাণ কৃষি শ্রমিক হওয়ার কারণে তারা চাইলেও বেশি সময় কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ, কৃষি সেক্টরে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যার আধিক্য দেখা গেছে জরিপে।
সিপিডি বলছে, কর্মসংস্থান হলেও আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আয় কমেছে কৃষি খাতে। এই খাতে ১৬.৫০ শতাংশ আয় কমেছে, এরপরই উৎপাদন খাতে কমেছে ১২.৭৫ শতাংশ। পরিবহন ও নির্মাণসহ সব খাত মিলিয়ে ১১.৯২ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কারণ, তাদের মজুরি ও কর্মঘণ্টা দুটোই কমেছে। যে কারণে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ৬০ বছরের বশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর। তাদের আয় কমেছে ১৫.৩১ শতাংশ। এছাড়া ১৫ থেকে ২৯ বছরের ব্যক্তিদের আয় কমেছে ১০.২০, ৩০ থেকে ৬৪ বছরের মানুষের আয় কমেছে ১২.০২ শতাংশ।

করোনার প্রভাবে ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। ৫২ শতাংশ খরচ কমাতে গিয়ে খাদ্য অভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের ঋণের বোঝা বেড়েছে। ঋণ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
জরিপের তথ্য বলছে, কর্মসংস্থানে আছেন এমন ৪০ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রমণের আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। আর ৮৬ শতাংশ বলছেন, তারা যা আয় করছেন তাতে সন্তুষ্টির জায়গায় নেই। জরিপে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে— ছাত্ররা এখন কাজে যোগ দিচ্ছেন। যেহেতু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
করোনায় আয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নি¤œআয়ের মানুষের। ২৫০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকা আয়ের মানুষের আয় কমেছে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সিপিডি মনে করে। ক্যাটাগরিগুলো হলো— দারিদ্র্য, সমতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সামর্থ্য।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

করোনায় কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ মানুষ : সিপিডি

আপডেট সময় : ০১:৪২:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির কারণে গত একবছরে ৬২ শতাংশ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন। অনেকে পুনরায় কাজ শুরু করতে সক্ষম হলেও কমেছে অধিকাংশের আয়। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নি¤œআয়ের মানুষের।
গতকাল বুধবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত অনলাইন সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
‘করোনাকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ শীর্ষক খানা জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য-উপাত্ত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও অক্সফাম বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপ কাজটি পরিচালনা করে।
দেশের ১৬টি জেলা এবং শহর ও গ্রাম মিলিয়ে বাছাই করা ২ হাজার ৬শ’ পরিবারের তথ্য নিয়ে জরিপের কাজ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হয়।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপটি পরিচালনা করেন। সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান জরিপের ফলাফলের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ মানুষ করোনা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। যার বড় অংশ ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কর্মহীন হয়েছেন। পরে অনেকেই কাজে ফিরলেও আগের মতো আর চাকরি ফিরে পাননি। কর্মহীনদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ একমাসের বেশি বেকার ছিলেন। তবে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে— জরিপকালে দেখা গেছে, প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায়।’
জরিপে দেখা গেছে, কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এ খাতে ১৮.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সেবা খাতে ১.৫৪ শতাংশ কর্মসংস্থান কমেছে। আবার শিল্প খাতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৮৬ শতাংশ। তার মানে হচ্ছে— কর্মসংস্থান সেবা খাত থেকে কমে কৃষি খাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। যারা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশই ছিল স্ব-প্রণোদিত। তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছেন। কেউ কেউ স্ব-উদ্যোগে কৃষিকাজ বেছে নিয়েছেন, কিংবা কৃষিকাজে পরিবারকে সহায়তা করছেন। আবার কিছু মানুষ ডে-লেবার হিসেবে কাজ করছেন। তবে তাদের কাজের কর্মঘণ্টা কমেছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, অধিক পরিমাণ কৃষি শ্রমিক হওয়ার কারণে তারা চাইলেও বেশি সময় কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ, কৃষি সেক্টরে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যার আধিক্য দেখা গেছে জরিপে।
সিপিডি বলছে, কর্মসংস্থান হলেও আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আয় কমেছে কৃষি খাতে। এই খাতে ১৬.৫০ শতাংশ আয় কমেছে, এরপরই উৎপাদন খাতে কমেছে ১২.৭৫ শতাংশ। পরিবহন ও নির্মাণসহ সব খাত মিলিয়ে ১১.৯২ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কারণ, তাদের মজুরি ও কর্মঘণ্টা দুটোই কমেছে। যে কারণে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ৬০ বছরের বশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর। তাদের আয় কমেছে ১৫.৩১ শতাংশ। এছাড়া ১৫ থেকে ২৯ বছরের ব্যক্তিদের আয় কমেছে ১০.২০, ৩০ থেকে ৬৪ বছরের মানুষের আয় কমেছে ১২.০২ শতাংশ।

করোনার প্রভাবে ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। ৫২ শতাংশ খরচ কমাতে গিয়ে খাদ্য অভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের ঋণের বোঝা বেড়েছে। ঋণ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
জরিপের তথ্য বলছে, কর্মসংস্থানে আছেন এমন ৪০ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রমণের আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। আর ৮৬ শতাংশ বলছেন, তারা যা আয় করছেন তাতে সন্তুষ্টির জায়গায় নেই। জরিপে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে— ছাত্ররা এখন কাজে যোগ দিচ্ছেন। যেহেতু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
করোনায় আয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নি¤œআয়ের মানুষের। ২৫০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকা আয়ের মানুষের আয় কমেছে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সিপিডি মনে করে। ক্যাটাগরিগুলো হলো— দারিদ্র্য, সমতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সামর্থ্য।