নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার নতুন ধরন বিএফ-৭ পূর্ববর্তী ওমিক্রন ধরনের চেয়ে চার গুণ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে যেকোনও মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে বলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার করোনার নতুন এই ধরন সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, চীনে বিএফ-৫ এর নতুন ধরন বিএফ-৭ শনাক্ত হয়েছে। রোববার আমাদের দেশেও একজন চীনফেরত নাগরিকের দেহে বিএফ-৭ ধরনটি পাওয়া গেছে। এটি ওমিক্রনের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। বিএফ-৭ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে অতি অল্প সময়েই বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ভারতে করোনার এই নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। ভারত এবং আমাদের অনেকগুলো বর্ডার দিয়ে যেহেতু নিয়মিত মানুষজনের আসা যাওয়া রয়েছে, তাই আমরা দেশের সব বন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কারও শরীরে বিএফ-৭ ভাইরাস রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য আইইডিসিআর,বি—কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরার পাশাপাশি আরও সচেতন হতে হবে। যারা এখনও পরিপূর্ণভাবে করোনার টিকা গ্রহণ করেননি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে। তবে টিকার মেয়াদ বাড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুযায়ী এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই টিকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: করোনার নতুন ধরন বিএফ-৭ এর প্রভাবে বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে এ নতুন ধরন মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষ করে রোববার (১ জানুয়ারি) কোয়ারেন্টাইনে থাকা তিন চীনা নাগরিকের একজনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যাওয়ায় নতুন করে ভাবছেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের টিকা নিশ্চিতের পাশাপাশি বুস্টার ডোজের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। দেশে একজন চীনা নাগরিকের দেহে ওমিক্রন নতুন ধরন বিএফ-৭ শনাক্ত হলেও কোভিড পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হারও এক শতাংশের ঘরে। কোভিড হাসপাতালগুলোতেও নেই তেমন কোনো রোগীর চাপ। এ বিষয়ে কোনো শঙ্কাই উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে কোভিডের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিএফ-৭ দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওমিক্রনের আগের উপধরনের থেকে চার গুণ বেশি সংক্রামক বিএফ-৭। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সম্ভাব্য সব ধরনের ঝুঁকি মাথায় রেখেই সাজাতে হবে কর্মকৌশল। জোর দিতে হবে টিকার ওপর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, চীনে কড়া নিয়ম-কানুনের মধ্যেও যদি সংক্রমণ ছড়ায়, তাহলে আমাদেরকে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের ঝুঁকির কারণ হচ্ছে, কিছু লোক একেবারেই টিকা নেয়নি। অনেক লোক দুই ডোজ টিকা নিলেও বুস্টার ডোজ নেয়নি। এছাড়া শিশুদের অনেকেরও দুই ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের টিকার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। টিকা না পাওয়াদের দ্রুত টিকার আওতায় আনা দরকার। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ওমিক্রনের নতুন ধরন বিষয়ে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের সতর্কতামূলক প্রস্তুতি। তবে কেবল প্রস্তুতি নয়, এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, আমরা হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করেছি। সবগুলোকে অন বোর্ড রেখেছি। সমস্যা মনে হলেই অন করে দেওয়া হবে। বুস্টার ডোজের ব্যাপারে সারা দেশে অধিদপ্তর থেকে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছে। সবাইকে আবারও মাস্ক পরতে হবে। তবে এসব সতর্কতা যেন আতঙ্কে রূপ না নেয়, সে বিষয়টিও মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
করোনার বিএফ-৭ ধরন চার গুণ বেশি সংক্রামক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ