প্রত্যাশা ডেস্ক : ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের দাপট। জনজীবনেও ফিরছে স্বাভাবিকতা। রাজধানীসহ সারাদেশে গত এক সপ্তাহে ভাইরাসটি শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা এবং মৃত্যুর সব সূচকে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এসময় নমুনা পরীক্ষা ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, শনাক্ত ৬০ দশমিক ৩ শতাংশ, সুস্থতা ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মৃত্যু কমেছে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এপিডেমিওলজিক্যাল অষ্টম সপ্তাহে (২১ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি) ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্ত হয় ৯ হাজার ৩৮৯। একই সময়ে ৫২ হাজার ১০৫ জন সুস্থ এবং মারা যান ৬৮ জন।
আগের এক সপ্তাহে এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তম সপ্তাহে (১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি) ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৩ হাজার ৬২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। একই সময়ে ৭৫ হাজার ৯২৯ জন সুস্থ এবং ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ দুজন ও নারী দুজন। মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন এবং বেসরকারি হাসপাতালে একজন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৩৭ জনে। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে নতুন আরও ৮৯৭ জন শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ জনে। দৈনিক শনাক্তের হার ৩ দশমিক শূন্য ৬৫ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে মোট রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৮৭৬টি ল্যাবরেটরিতে ২৪ হাজার ৮৩৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ২৪ হাজার ৬০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট এক কোটি ৩৪ লাখ এক হাজার ৩৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশে গত একদিনে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন সাত হাজার ৯৭৬ জন। এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৫। সুস্থতার হার ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন এবং ষাটোর্ধ্ব একজন।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুজন, চট্টগ্রামে একজন ও খুলনায় একজন। রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালে এসময় করোনায় কেউ মারা যাননি। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত এবং এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ১০ আগস্ট দেশে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৬৪ এবং একই বছরের ২৮ জুলাই দৈনিক সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ১৬ হাজার ২৩০ জন।
বিশ্বে একদিনে শনাক্ত কমেছে ২ লাখ : করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে চার হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে শনাক্ত হয়েছে ১০ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪ জন। একদিনে মৃত্যু কমেছে প্রায় দুই হাজার। শনাক্ত কমেছে দুই লাখের বেশি। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৭৭ জন।
গতকাল সোমবার সকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায়। দেশটিতে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৭৬৯ জনের এবং সংক্রমিত হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৯৩ জন। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ায় মোট আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ ৯১ হাজার ১৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৫০ হাজার ৯২৭ জনের।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ও প্রাণহানি কমেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে সাত হাজার ৪৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮৯ জনের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে আট কোটি পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৭ জন। মৃত্যু নয় লাখ ৭৩ হাজার ১১৯। করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, মৃত্যুর দিকে থেকে যার অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছে ৫৬ জন এবং সংক্রমিত হয়েছে সাত হাজার ৯৮৫ জন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে চার কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ১০২ জন এবং মারা গেছে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৮১২ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনার দাপট কমছে, সব সূচক নি¤œমুখী
ট্যাগস :
করোনার দাপট কমছে
জনপ্রিয় সংবাদ