প্রত্যাশা ডেস্ক: বন্য পাখি, খামারের পোলট্রি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু ভাইরাস যদি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর মতো অভিযোজিত হয়, তাহলে এটি কোভিড মহামারির চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের শ্বাসতন্ত্র-সংক্রান্ত সংক্রমণ কেন্দ্রের প্রধান এমনটাই সতর্ক করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
পাস্তুর ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল ডিরেক্টর মেরি-অ্যান রামেক্স-ভেলতি বলেন, আমাদের আশঙ্কা হলো—ভাইরাসটি স্তন্যপায়ীদের, বিশেষ করে মানুষের দেহে অভিযোজিত হয়ে মানুষে-মানুষে সংক্রমণ সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এমনটা হলে সেটি মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসে পরিণত হবে। তিনি বলেন, একটি বার্ড ফ্লু মহামারি সম্ভবত বেশ গুরুতর হবে। সম্ভবত আমরা যে কোভিড মহামারি দেখেছি তার চেয়েও বেশি।
উচ্চ মাত্রায় সংক্রামক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর কারণে গত কয়েক বছরে কোটি কোটি পাখি নিধন করা হয়েছে, যা খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে এবং মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে।
রামেক্স-ভেলতি বলেন, মানুষের শরীরে এইচ১ ও এইচ৩ ফ্লুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি থাকলেও বর্তমানে ছড়াচ্ছে যে এইচ৫ টাইপ বার্ড ফ্লু, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই—যেমনটি কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও ছিল না। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ মূলত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সুস্থ ও শিশুদেরও প্রাণঘাতীভাবে আক্রান্ত করতে পারে।
অতীতে মানুষের মধ্যে এইচ৫ টাইপ বার্ড ফ্লু সংক্রমণের বহু ঘটনা ঘটেছে। এসব সংক্রমণ সাধারণত আক্রান্ত প্রাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে আসতো। চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে প্রথমবারের মতো এইচ৫এন৫ আক্রান্ত একজন মানুষের খবর পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভোগা ওই ব্যক্তি গত সপ্তাহে মারা যান।
ডব্লিউএইচও’র সাম্প্রতিক বার্ড ফ্লু প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় এক হাজার মানবসংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে—মূলত মিসর, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে রয়টার্সকে প্রাণী স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্ব সংস্থার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান গ্রেগরিও টরেস বলেন, মানুষের মধ্যে মহামারি শুরুর ঝুঁকি এখনও কম। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু আপাতত আপনারা নিশ্চিন্তে বনভূমিতে হাঁটতে পারেন, মুরগি-ডিম খেতে পারেন, জীবন উপভোগ করতে পারেন। মহামারির ঝুঁকি একটি সম্ভাবনা বটে—কিন্তু এর সম্ভাব্যতা এখনও খুবই কম।
এদিকে, রামেক্স-ভেলতি বলেন, যদি বার্ডফ্লু মানুষের মধ্যে ছড়ানোর মতো রূপান্তরিত হয়ও, তবু বিশ্ব বর্তমানে কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় অনেক বেশি প্রস্তুত। তিনি বলেন, ফ্লুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হলো আমাদের নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরি আছে এবং দ্রুত ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরালের মজুদও আছে, যা এই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।
সানা/ওআ/আপ্র/২৮/১১/২০২৫






















