ঢাকা ০৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

করোনার চাপ মোকাবেলার মানসিক সক্ষমতা কি আছে স্বাস্থ্য প্রশাসনের?

  • আপডেট সময় : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১
  • ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

আব্দুন নূর তুষার : চট্টগ্রামে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য গণবদলির আদেশ জারি করা হয়েছে, যা দেখলে মনে হবে এটা কোনো মনোবৈকল্যের প্রকাশ। ২০ জন ডেন্টাল সার্জন তথা ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনকে কোভিড চিকিৎসা করার জন্য বদলি করা হয়েছে কোভিড হাসপাতালে। কোভিড চিকিৎসাতে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কি কাজ?
কোভিড রোগীদের দাঁত ফেলা হবে নাকি চোয়াল মেরামত করা হবে? চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়লজি তথা ল্যাব সায়েন্সের চিকিৎসক ও শিক্ষকদের পাঠানো হয়েছে কোভিড চিকিৎসায়। তাদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানসহ বদলি হয়ে গেছেন। বলা হয়েছে এটা ডেপুটেশনে পদায়ন। তারা বেতনভাতা পাবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পদ থেকেই, কাজ করবেন অন্যত্র। সহকারী অধ্যাপককে পাঠানো হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। বাকি তিনজন এমফিল করা লেকচারারদের একজনকে দাগনভূঁইয়ায়। আর একজনকে পাঠিয়েছে খাগড়াছড়িতে। একজনকে মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক কোভিড ইউনিটে কি চিকিৎসা দিতে পারবেন? যাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনোই ক্লিনিকাল রোগী দেখেন না তারা কি করবেন কোভিড রোগীর হাসপাতালে? এরা সরাসরি পিসিআর টেস্ট সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন। সে কাজ কে করবে? এরা অনলাইনে পড়াতেন। এখন পড়াবে কারা? পুরো কর্মকা-টাই তুঘলকি।

এটার কারণ কি জানেন? কারণ হলো মানুষকে বুঝ দেয়া হবে করোনা চিকিৎসাতে পোস্ট গ্রাজুয়েট করা বিশেষজ্ঞ পাঠানো হয়েছে উপজেলায়। আসলে পাঠিয়েছে ডেন্টিস্ট আর মাইক্রোবায়োলজিস্ট। যখন উচ্চ স্থানকে অবহিত করা হবে, বলা হবে সব জায়গায় বিশেষজ্ঞ দিয়েছি স্যার। কিন্তু দিয়েছে বিশজন দন্তবিশেষজ্ঞ। এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা পদে পদে অব্যবস্থাপনায় আর উদ্ভট সিদ্ধান্তে একটি চরম অরাজক অবস্থায় উপনীত হয়েছে।

দয়া করে একজন ব্যাখ্যা করুক যে যার টাইফয়েড চিকিৎসা করার কথা না, সেই ডেন্টাল সার্জনরা কোভিড রোগীদের কি চিকিৎসা দেবেন? এসব এই চিকিৎসকদের প্রতি অন্যায়। একই সঙ্গে রোগীদের প্রতিও অবিচার।

এই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাথে আগেও অন্যায় করা হয়েছে। সারাবছর কোভিড ভাইরাসের পরীক্ষা করার পরে প্রণোদনার সময় তাদের কথা ভাবা হয় নাই। তাদের আগে প্রণোদনা পেয়েছে চট্টগ্রাম এ বি আই টি আই ডি ও জেনারেল হাসপাতাল। এখন এসব করা হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসকদের ওপর মানুষকে খেপিয়ে তোলার জন্য। যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের কা-কারখানার কথা কেউ টের না পায়।

এই ডাক্তাররা যখন আপত্তি করবেন, বলা হবে- দ্যাখেন দ্যাখেন, কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিতে যেতে চায় না। বলা হবে আমরা তো সব নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সবখানে আছে। অন্তত বিশটি জায়গায় কিন্তু দিয়েছে দাঁতের আর চোয়ালের বিশেষজ্ঞ।

খুলনাতেও একই কাজ করেছে। সিরাজগঞ্জে, কুষ্টিয়ায়…এভাবে সবখানে করবে। এদের মাথায় কোভিড হয়েছে কিনা সন্দেহ। যার কাজ তাকে দিন। এসব হাস্যকর কাজকর্ম বন্ধ করে প্রয়োজনে মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিশ্চিত করেন। এসব উদ্ভট সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। আর সম্ভব হলে অবিলম্বে অধ্যাপক মোহিত কামাল, ডা. হেলালুদ্দিন আহমেদ ও ডা.রশিদুল হক রানার কাছ থেকে মনোসহায়তা নিন।

বি: দ্র: এই মাত্র জানলাম মৃত ডাক্তারও নাকি বদলির নির্দেশ পেয়েছেন। আমাদের প্রশাসন এখন বেহেশতেও নির্দেশ জারি করতে পারছে। (আল্লাহ আমাদের এদের হাত থেকে রক্ষা করুন, এদের সুবুদ্ধি দিন। এদের তো কোনো অভিভাবক নাই। এসব তুঘলকের তো মাথার লক খুলে গেছে।)
লেখক: চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

করোনার চাপ মোকাবেলার মানসিক সক্ষমতা কি আছে স্বাস্থ্য প্রশাসনের?

আপডেট সময় : ১০:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১

আব্দুন নূর তুষার : চট্টগ্রামে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য গণবদলির আদেশ জারি করা হয়েছে, যা দেখলে মনে হবে এটা কোনো মনোবৈকল্যের প্রকাশ। ২০ জন ডেন্টাল সার্জন তথা ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনকে কোভিড চিকিৎসা করার জন্য বদলি করা হয়েছে কোভিড হাসপাতালে। কোভিড চিকিৎসাতে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কি কাজ?
কোভিড রোগীদের দাঁত ফেলা হবে নাকি চোয়াল মেরামত করা হবে? চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়লজি তথা ল্যাব সায়েন্সের চিকিৎসক ও শিক্ষকদের পাঠানো হয়েছে কোভিড চিকিৎসায়। তাদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধানসহ বদলি হয়ে গেছেন। বলা হয়েছে এটা ডেপুটেশনে পদায়ন। তারা বেতনভাতা পাবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পদ থেকেই, কাজ করবেন অন্যত্র। সহকারী অধ্যাপককে পাঠানো হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। বাকি তিনজন এমফিল করা লেকচারারদের একজনকে দাগনভূঁইয়ায়। আর একজনকে পাঠিয়েছে খাগড়াছড়িতে। একজনকে মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক কোভিড ইউনিটে কি চিকিৎসা দিতে পারবেন? যাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনোই ক্লিনিকাল রোগী দেখেন না তারা কি করবেন কোভিড রোগীর হাসপাতালে? এরা সরাসরি পিসিআর টেস্ট সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিলেন। সে কাজ কে করবে? এরা অনলাইনে পড়াতেন। এখন পড়াবে কারা? পুরো কর্মকা-টাই তুঘলকি।

এটার কারণ কি জানেন? কারণ হলো মানুষকে বুঝ দেয়া হবে করোনা চিকিৎসাতে পোস্ট গ্রাজুয়েট করা বিশেষজ্ঞ পাঠানো হয়েছে উপজেলায়। আসলে পাঠিয়েছে ডেন্টিস্ট আর মাইক্রোবায়োলজিস্ট। যখন উচ্চ স্থানকে অবহিত করা হবে, বলা হবে সব জায়গায় বিশেষজ্ঞ দিয়েছি স্যার। কিন্তু দিয়েছে বিশজন দন্তবিশেষজ্ঞ। এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা পদে পদে অব্যবস্থাপনায় আর উদ্ভট সিদ্ধান্তে একটি চরম অরাজক অবস্থায় উপনীত হয়েছে।

দয়া করে একজন ব্যাখ্যা করুক যে যার টাইফয়েড চিকিৎসা করার কথা না, সেই ডেন্টাল সার্জনরা কোভিড রোগীদের কি চিকিৎসা দেবেন? এসব এই চিকিৎসকদের প্রতি অন্যায়। একই সঙ্গে রোগীদের প্রতিও অবিচার।

এই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাথে আগেও অন্যায় করা হয়েছে। সারাবছর কোভিড ভাইরাসের পরীক্ষা করার পরে প্রণোদনার সময় তাদের কথা ভাবা হয় নাই। তাদের আগে প্রণোদনা পেয়েছে চট্টগ্রাম এ বি আই টি আই ডি ও জেনারেল হাসপাতাল। এখন এসব করা হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসকদের ওপর মানুষকে খেপিয়ে তোলার জন্য। যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের কা-কারখানার কথা কেউ টের না পায়।

এই ডাক্তাররা যখন আপত্তি করবেন, বলা হবে- দ্যাখেন দ্যাখেন, কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিতে যেতে চায় না। বলা হবে আমরা তো সব নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সবখানে আছে। অন্তত বিশটি জায়গায় কিন্তু দিয়েছে দাঁতের আর চোয়ালের বিশেষজ্ঞ।

খুলনাতেও একই কাজ করেছে। সিরাজগঞ্জে, কুষ্টিয়ায়…এভাবে সবখানে করবে। এদের মাথায় কোভিড হয়েছে কিনা সন্দেহ। যার কাজ তাকে দিন। এসব হাস্যকর কাজকর্ম বন্ধ করে প্রয়োজনে মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল নিশ্চিত করেন। এসব উদ্ভট সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। আর সম্ভব হলে অবিলম্বে অধ্যাপক মোহিত কামাল, ডা. হেলালুদ্দিন আহমেদ ও ডা.রশিদুল হক রানার কাছ থেকে মনোসহায়তা নিন।

বি: দ্র: এই মাত্র জানলাম মৃত ডাক্তারও নাকি বদলির নির্দেশ পেয়েছেন। আমাদের প্রশাসন এখন বেহেশতেও নির্দেশ জারি করতে পারছে। (আল্লাহ আমাদের এদের হাত থেকে রক্ষা করুন, এদের সুবুদ্ধি দিন। এদের তো কোনো অভিভাবক নাই। এসব তুঘলকের তো মাথার লক খুলে গেছে।)
লেখক: চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব