ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

করোনার কারণে শিশুশ্রমে শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় : ১১:১৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

ফুলবাড়ি প্রতিনিধি : এগার বছর বয়সী সোহান পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে শিশু শ্রমিকের কাজ করছে। এর কারণ একটাই পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা। আর্থিকভাবে বাবাকে কিছুটা সহায় দেয়ার লক্ষ্যেই অন্যের বাড়িতে কাজ করছে সোহান। দেশের উত্তরাঞ্চলের শিশুদের বেলায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
বিগত বছরগুলোতে এ সময় শিশু শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আসা ও খেলাধুলা করে ব্যস্ত সময় কাটালেও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে করোনার কারণে উপার্জন কমে যাওয়ায় ফুলবাড়ির হতদরিদ্র পারবিারগুলো তাদেরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করছেন। এতে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কম পারিশ্রমিকে তাদেরকে নানা কাজে যুক্ত করছেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়ার শিশুর সংখ্যা বাড়বে বলে অভিমত শিক্ষকসহ সচেতন মহলের।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। উপজেলার দাসিয়ারছড়ার বটতলা এলাকার দিন মজুর ই¯্রাফিল আলমের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিজানুর রহমান বড়। ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের আয় বাড়াতে তাকে কালিরহাট বাজারের একটি চায়ের দোকানে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে কাজে নিয়োজিত করেছেন। মিজানুর জানায়, আমি কালিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় গত একমাস ধরে চায়ের দোকানে কাজ করছি। এখানে মালিক দুই বেলা খাওয়া দেয়। এছাড়া মজুরি হিসেবে দৈনিক ১০০ টাকা দেয়। আমার উপার্জনের টাকা বাবার হাতে তুলে দেই। স্কুল খুললে স্কুুলে যাব। মিজানের বাবা ই¯্রাফিল আলম জানান,‘ বাহে আমরা খুবই গরীব মানুষ। করোনার কারণে আয় কমে গেছে। তাই ছেলেটাকে মানুষের দোকানে রেখে দিয়েছি। স্কুল খুললে স্কুলে পাঠানো হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী এরশাদুল বাদাম বিক্রি করছে। সে জানায়, সংসারে দিনমজুর বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সব সময় তার কাজ থাকেনা। তাই সে বাদাম বিক্রি করছে। দিনে গড়ে ১৫০-২০০টাকা আয় হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে যাবে কিনা- জানতে চাইলে সে জানায় যাবে। এরশাদুলের বাবা মজিবর রহমান জানান, একজনের আয়ে সংসার চলেনা। ছেলের স্কুল বন্ধ। তাই ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি।’
উপজেলার বালারহাট বাজারে দেখা গেছে, বাঁশের তৈরি কুলা বিক্রি করছে বালারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহাগ। বাবা ফজর আলীর মাছের দোকানে মাছ বিক্রি করছে নলডঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র রুবেল মিয়া। আর পাশেই মামা সাহেব আলীর মাছের দোকানে মাছ বিক্রি করছেন কাশিয়াবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র খাজা মইনউদ্দিন।
ফুলবাড়ী জছিমিয়া সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ায় নি¤œ আয়ের মানুষের উপার্জন কমে গেছে। এজন্য অনেকেই তাদের স্কুল পড়–য়া সন্তানদের বাড়তি আয়ের আশায় কাজে দিচ্ছে। এসব শিশুদের বিভিন্ন পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকসহ অভিভাবকদেরও বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে। না হলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, ‘করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী। স্কুল খোলার সাথে সাথে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সব ছাত্রছাত্রীকে আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে স্কুল শিক্ষক এবং অভিভাবকদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা আমাকে জানায়নি। কোন শিশু যদি শিশুশ্রমে নিয়োজিত থাকে তবে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের দ্বারা মনিটরিং করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

করোনার কারণে শিশুশ্রমে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় : ১১:১৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফুলবাড়ি প্রতিনিধি : এগার বছর বয়সী সোহান পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে শিশু শ্রমিকের কাজ করছে। এর কারণ একটাই পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা। আর্থিকভাবে বাবাকে কিছুটা সহায় দেয়ার লক্ষ্যেই অন্যের বাড়িতে কাজ করছে সোহান। দেশের উত্তরাঞ্চলের শিশুদের বেলায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
বিগত বছরগুলোতে এ সময় শিশু শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আসা ও খেলাধুলা করে ব্যস্ত সময় কাটালেও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে করোনার কারণে উপার্জন কমে যাওয়ায় ফুলবাড়ির হতদরিদ্র পারবিারগুলো তাদেরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করছেন। এতে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কম পারিশ্রমিকে তাদেরকে নানা কাজে যুক্ত করছেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়ার শিশুর সংখ্যা বাড়বে বলে অভিমত শিক্ষকসহ সচেতন মহলের।
তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। উপজেলার দাসিয়ারছড়ার বটতলা এলাকার দিন মজুর ই¯্রাফিল আলমের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিজানুর রহমান বড়। ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের আয় বাড়াতে তাকে কালিরহাট বাজারের একটি চায়ের দোকানে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে কাজে নিয়োজিত করেছেন। মিজানুর জানায়, আমি কালিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় গত একমাস ধরে চায়ের দোকানে কাজ করছি। এখানে মালিক দুই বেলা খাওয়া দেয়। এছাড়া মজুরি হিসেবে দৈনিক ১০০ টাকা দেয়। আমার উপার্জনের টাকা বাবার হাতে তুলে দেই। স্কুল খুললে স্কুুলে যাব। মিজানের বাবা ই¯্রাফিল আলম জানান,‘ বাহে আমরা খুবই গরীব মানুষ। করোনার কারণে আয় কমে গেছে। তাই ছেলেটাকে মানুষের দোকানে রেখে দিয়েছি। স্কুল খুললে স্কুলে পাঠানো হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী এরশাদুল বাদাম বিক্রি করছে। সে জানায়, সংসারে দিনমজুর বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সব সময় তার কাজ থাকেনা। তাই সে বাদাম বিক্রি করছে। দিনে গড়ে ১৫০-২০০টাকা আয় হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে যাবে কিনা- জানতে চাইলে সে জানায় যাবে। এরশাদুলের বাবা মজিবর রহমান জানান, একজনের আয়ে সংসার চলেনা। ছেলের স্কুল বন্ধ। তাই ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি।’
উপজেলার বালারহাট বাজারে দেখা গেছে, বাঁশের তৈরি কুলা বিক্রি করছে বালারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহাগ। বাবা ফজর আলীর মাছের দোকানে মাছ বিক্রি করছে নলডঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র রুবেল মিয়া। আর পাশেই মামা সাহেব আলীর মাছের দোকানে মাছ বিক্রি করছেন কাশিয়াবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র খাজা মইনউদ্দিন।
ফুলবাড়ী জছিমিয়া সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ায় নি¤œ আয়ের মানুষের উপার্জন কমে গেছে। এজন্য অনেকেই তাদের স্কুল পড়–য়া সন্তানদের বাড়তি আয়ের আশায় কাজে দিচ্ছে। এসব শিশুদের বিভিন্ন পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকসহ অভিভাবকদেরও বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে। না হলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, ‘করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী। স্কুল খোলার সাথে সাথে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সব ছাত্রছাত্রীকে আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে স্কুল শিক্ষক এবং অভিভাবকদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা আমাকে জানায়নি। কোন শিশু যদি শিশুশ্রমে নিয়োজিত থাকে তবে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের দ্বারা মনিটরিং করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।