প্রত্যাশা ডেস্ক : গোটা বিশ্বকে স্থবির করে দেওয়া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উৎসস্থল চিহ্নিত করতে পরিচালিত দুটি গবেষণায় একই ফলাফল এসেছে। চীনের উহানের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে এতে ইঙ্গিত মিলেছে। খবর সিনএনএনের।
গবেষণাগার থেকে ছড়ানোসহ কোভিড-১৯ মহামারির সম্ভাব্য উৎসস্থল নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অব্যাহত রাখতে গত জুনে পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এ নিয়ে এবার সম্পূর্ণ পৃথক পদ্ধতিতে চালানো দুটি গবেষণায় একই ফলাফল এসেছে। প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়, চীনের উহানের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজারই খুব সম্ভবত করোনাভাইরাসের উৎসস্থল।
গবেষণাটি প্রাথমিকভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। এরপর পিয়ার রিভিউ সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার সায়েন্স জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। স্থানিক ও পরিবেশগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি গবেষণায় মানচিত্রের সরঞ্জাম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিবেদন ব্যবহার করেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, যদিও ‘একেবারে সঠিক কারণ অস্পষ্ট’, তারপরও বলা যায়, ভাইরাসটি সম্ভবত ২০১৯ সালের শেষের দিকে বাজারে বিক্রি হওয়া জীবন্ত প্রাণীগুলোতে উপস্থিত ছিল।
এসব প্রাণী পাশাপাশি রাখা ছিল এবং সহজেই একটি থেকে আরেকটিতে জীবাণু ছড়িয়েছে। তবে কোন প্রাণী অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়টি গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়নি।
গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, শুরুর দিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই বাজারের দোকানিরা, যাঁরা জীবন্ত প্রাণী বিক্রি করেছিলেন কিংবা সেসব মানুষ, যাঁরা সেখানে কেনাকাটা করতে গেছেন। গবেষণায় বলা হয়, ‘২০ ডিসেম্বরের (২০১৯) আগে শনাক্ত হওয়া আটজন কোডিভ-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সবাই ছিলেন ওই বাজারের পশ্চিম পাশের। সেখানে স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী বিক্রি হতো।’ জীবিত বা সম্প্রতি জবাইকৃত প্রাণী বিক্রি করা পাঁচটি স্টলের সংস্পর্শে আসায় মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আভাস মেলে।
মঙ্গলবার এ গবেষণার সহলেখক স্ক্রিপস রিসার্চের ইমিউনোলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টেইন অ্যান্ডারসেন বলেন, ‘নির্দিষ্ট এলাকার মানচিত্রায়ণ খুব, খুবই সুনির্দিষ্ট।’
আরেকজন সহলেখক ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশনারি বায়োলজি বিভাগের প্রধান মাইকেল ওরোবে বলেন, শনাক্ত রোগীদের অবস্থান মানচিত্রায়ণের ক্ষেত্রে ‘ভিন্ন ধরনের’ যে বিন্যাসটি উঠে এসেছে, তা খুবই স্পষ্ট।
গবেষকেরা দেখেন, শুরুর দিকে আক্রান্ত কারও কারও ওই বাজারের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এ বিষয়ে ওরোবে বলেন, এসব লোকজন ওই বাজারের কাছাকাছি বসবাস করতেন কিংবা কর্মরত ছিলেন। মাইকেল ওরোবে আরও বলেন, ‘ওই বাজারে কর্মরতদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করার এটি একটি ইঙ্গিত। কিন্তু এরপর বিক্রেতারা যখন স্থানীয় দোকানপাটে যান, তখন ওই সব দোকানে কর্মরত ব্যক্তিরাও সংক্রমিত হন। তখন আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও এটি ছড়াতে শুরু করে।’
অপর গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, কখন প্রাণী থেকে মানবশরীরে ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণ হয়, তা নিশ্চিত হওয়া। গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের শুরুর ধরন সম্ভবত দুটি পৃথক গঠন থেকে এসেছে। বিজ্ঞানীরা সেগুলোকে ‘এ’ এবং ‘বি’ নাম দিয়েছেন।
গবেষকদের মতে, প্রাণী থেকে মানবশরীরে প্রথম সংক্রমণটা হয়েছিল সম্ভবত ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বরের আশপাশের কোনো সময়ে। এটা এসেছিল ‘বি’ থেকে। ‘বি’ পাওয়া যায় সেসব মানুষের মধ্যে, হুয়ানান বাজারের সঙ্গে যাদের সরাসরি সম্পর্ক ছিল। গবেষণার লেখকেরা মনে করছেন, ‘বি’ থেকে সংক্রমিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক দিনের মধ্যে একটি প্রাণী থেকে মানবশরীরে ‘এ’ সংক্রমিত হয়। যাঁরা ওই বাজারের নিকটবর্তী স্থানে বসবাস কিংবা অবস্থান করেছিলেন, তাঁদের নমুনায় ‘এ’ পাওয়া।
গবেষণায় বলা হয়, ‘এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের আগে সার্স-কোভ-২ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। কখন ভাইরাসটি মানবশরীরে ঢোকে এবং প্রথম রোগী শনাক্তের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে—এই দুইয়ের মধ্যে সংকীর্ণ যোগসূত্রটাও এই ফলাফলে। অন্য করোনাভাইরাসগুলোর মতো সার্স-কভ-২ সম্ভবত একাধিক “জুনোটিক ইভেন্টের” কারণেই হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) সংজ্ঞা অনুযায়ী, রোগটি প্রাণী ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে।
২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরে তা মহামারির আকার ধারণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভাইরাসটির উৎস কী ছিল, তার নিশ্চিত জবাব এখনো মেলেনি। করোনা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এসেছে নাকি উহানের গবেষণাগারের দুর্ঘটনা থেকে ছড়িয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও গবেষণাগার থেকে করোনা ছড়ানোর বিষয়টি প্রথম থেকেই নাকচ করে এসেছে চীন।
করোনার উৎস উহানের সেই সামুদ্রিক খাদ্যের বাজার

Members of staff of the Wuhan Hygiene Emergency Response Team drive their vehicle as they leave the closed Huanan Seafood Wholesale Market in the city of Wuhan, in Hubei, Province on January 11, 2020, where the Wuhan health commission said that the man who died from a respiratory illness had purchased goods. - China said on January 11, 2020 that a 61-year-old man had become the first person to die from a respiratory illness believed to be caused by a new virus from the same family as SARS (Sudden Acute Respiratory Syndrome), which claimed hundreds of lives more than a decade ago. Forty-one people with pneumonia-like symptoms have so far been diagnosed with the new virus in Wuhan, with one of the victims dying on January 8, 2020, the central Chinese city's health commission said on its website. (Photo by NOEL CELIS / AFP) (Photo by NOEL CELIS/AFP via Getty Images)
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ