ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : করোনাকালের দীর্ঘ বন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রুটিন সব ওলট–পালট হয়ে গেছে। পড়ালেখা শেষ করে যাঁরা দ্রুত পেশাজীবনে পা রাখার কথা ভাবছিলেন, সেশনজটের দুর্ভাবনা নিশ্চয়ই তাঁদের ভোগাচ্ছে। তবে এই দুর্যোগেও হাল ছাড়েননি অনেক তরুণ। পড়ালেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি সেরে রাখছেন তাঁরা।
টানাপোড়েনের সংসারে চার ভাই-ই পড়াশোনা করেন। বাবা করেন কৃষিকাজ। বাবাকে সাহায্য করতে কাজ শুরু করেছিলেন মামুন আহমেদ। কিন্তু তাতে অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছিল না। সে সময় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডেটা এন্ট্রির কাজ শুরু করেন। ৪৯ ডলার আয় দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন মাসে গড় আয় প্রায় ৬০০ ডলার, অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকার বেশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গুজিয়াখাইগ গ্রামের মো. আবদুল্লাহর বড় ছেলে মামুন। পড়ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে। ডেটা এন্ট্রির কাজ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। মামা রাসেল আহমেদের সহায়তা নিয়ে, ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে মামুন নিজে নিজেই শিখেছেন। এখন শুধু ডেটা এন্ট্রি নয়, ইংরেজিতে কনটেন্ট রাইটিংয়ের কাজও করছেন তিনি।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওয়েবসাইট আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কাজের সন্ধান শুরু করেছিলেন। শুরুটা সহজ ছিল না। প্রায় ২০-২৫টি ভিনদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজের প্রস্তাবনা পাঠানোর পর একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান তাঁকে সুযোগ দেয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ জমা দিয়ে সেবার ৪৯ ডলার আয় করেছিলেন এই তরুণ।
মামুন আহমেদ বলেন, ‘কাজ পেতে দেরি হচ্ছিল। হতাশা কাজ করছিল। কিন্তু ২০ দিন পর একটা কাজ পেলাম। প্রথম দিকে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা করে কাজ করেছি। রাতে জেগে থাকতাম। কারণ, বাংলাদেশের সময় রাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো কাজ করে। ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য অনলাইনে সক্রিয় থাকতে হতো। আর দিনের বেলায় পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কাজ করতাম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতি মাসে এক-দুটি কোম্পানির কাজ পেয়ে যেতাম। পরে অ্যাকাউন্ট আরও উন্নত করেছি। কর্মঘণ্টা বাড়িয়েছি।’
করোনার কারণে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মামুন। এখন ছোট ভাই সুমন আহমেদকেও তাঁর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। মামুন বলেন, ‘করোনার সময়ে, মানে ২০২০ সালে এক মাসে সর্বোচ্চ ২ হাজার ডলার (১ লাখ ৭০ হাজার টাকা) আয় করেছি। এখন প্রতি মাসেই ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাজ পাচ্ছি। প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানের কাজ পাচ্ছি, এটাই আনন্দ।’
করোনাকালে আয় বেড়েছে ফ্রিল্যান্সার মামুনের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ