ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
প্রেস বিফ্রিংয়ে জানালেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা

করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি, প্রয়োজনও নাই

  • আপডেট সময় : ০৯:২২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস বিফ্রিংয়ে কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘের করিডর দেওয়া নিয়ে যে গুজব উঠেছে, আমি দ্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হবে না।

বুধবার (২১ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমারজেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু আরাকানে সাহায্য সহযোগিতা অন্যান্য সাপ্লাই রুট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না, জাতিসংঘ আমাদের এইটুকুই বললো যে, কাছেই যেহেতু বর্ডার, তাদের সাহায্য করতে, যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ রাখাইনে তার নিজস্ব সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাবে। আপনারা জাতিসংঘকে জিজ্ঞেস করেন, প্রমাণ পাবেন। আমরা করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলি নাই এবং বলবো না। আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডরের কোনো প্রয়োজন নাই।

তিনি বলেন, যে প্রয়োজনীয়তা আছে সেটা হচ্ছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার। যখন মিয়ানমারে ভূমিকম্প হলো আমরা কিন্তু তাদের আবেদনের অপেক্ষা করি নাই। আমরা ত্রাণ পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা একটা মানবিক অবস্থান। আমাদের ধারণা এই কাজটি করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং আমরা সেই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। যতদিন আরাকান অস্থিতিশীল থাকবে আমরা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারবো না। আর তাহলে তো প্রত্যাবাসন কৌশল নিয়েও কথা বলতে পারবো না। অনেকেই বলছেন করিডর নিয়ে আলাপ করছেন, আমাদের জানান নাই। অস্তিত্ববিহীন জিনিস নিয়ে কী করে আলাপ করবো, যার অস্তিত্ব নাই সেই বিষয়ে আলাপ কী করে হয়।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তারপর থেকে এই ইস্যুটিকে আমরা আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় পুনরায় তুলে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এর আগে সাত বছর এই ইস্যুটি প্রায় অপসৃত হয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক গাজা এবং ইউক্রেন ইস্যুতে রোহিঙ্গা ইস্যু আরো পেছনে পড়ে গিয়েছিল। আপনাদের হয়তো মনে আছে, গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন এবং জাতিসংঘকে এই ইস্যুতে একটি সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন, একটি জাতি নিয়ে জাতিসংঘের এমন সম্মেলন আয়োজন বিরল উদাহরণ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সচিবালয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় যে বিষয় আমরা দেখছি, এই সমস্যার সমাধান কী? আমরা প্রথম থেকেই ভেবেছি এই সমস্যার সমাধান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করা। এটিই সমাধান। এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমি আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব এসেছিলেন গত মার্চে। তিনি দ্যর্থহীনভাবে বলেছেন এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। তৃতীয় যে কাজটি ছিল আমাদের সেটা হচ্ছে প্রত্যাবাসনের প্রথম পদক্ষেপ, কারা ফেরত যাবেন সেই বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা। ২০১৭ সাল থেকে কয়েক দফায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার তথ্য মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয় ভেরিফিকেশনের জন্য। গত ৮ বছর ধরে এই ভেরিফিকেশনের কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পারিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিশেষ দূতের সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তাতে তারা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত করেন এই ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজারকে তারা প্রত্যাবাসনযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছেন। আর বাকি ৭০ হাজারের সমস্যা ছিল ছবি এবং কিছু তথ্য নিয়ে। সেগুলো তারা আমাদের সঙ্গে বসে নিরসন করবেন। এর ফলে আমরা প্রত্যাবাসনযোগ্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা লাভ করি। এগুলো ছিল প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি কাজ, যা বিগত সময়ে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া কী হবে, সেটা দেখতে গিয়ে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি সেটা হচ্ছে মিয়ানামার সরকারের দখলে ৯০ ভাগ রাখাইন নেই। এটার দখল নিয়ে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আরকান আর্মি এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। সেই আলোচনা আমরা একই সমান্তরালে চালু করেছি। আমাদের আরাকান আর্মি সুস্পষ্টভাবে বলেছে , রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া তাদের একটি প্রিন্সিপ্যাল পজিশন, একই কথা আমদের মিয়ানমার সরকার উল্লেখ করেছে। আরাকান আর্মি বলেছে, পরিস্থিতি অনুকূলে হলে তারা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবে। আরাকানে যুদ্ধাবস্থা এখনও নিরসন হয়নি।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইন অঞ্চলে ব্যাপক খাবার, ওষুধের অভাব। ইউএনডিপি রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে খাবার ওষুধ না পেয়ে আমাদের দেশে চলে আসতে পারে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদেরই আমাদের দেশে চলে আসার প্রবণতা বেশি হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছি প্রায় ৮ বছর ধরে। আমরা ভার ধারণের সীমার বাইরে চলে এসেছি। অতিরিক্ত শরণার্থী গ্রহণ করা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় রাখাইন সম্প্রদায় আমাদের সীমান্তে এসে খাদ্য এবং ওষুধের সহায়তা চেয়েছেন। তারা যদি আসা শুরু করেন তাহলে আমাদের নতুন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা সেটা এড়াতে চাচ্ছি। জাতিসংঘের কার্যক্রম যেটা মিয়ানমারে চলছে, সেটা রাখাইনে আর চালানো সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক যেকোনও ধরনের ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব গত মার্চে এসে আমাদের বললেন যে আমরা রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা দিতে পারি কিনা? আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যিকতা আছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে যে এই সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কাউকে এর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, এটা কোনো যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের মধ্যে শঙ্কা হচ্ছে আরাকানে যে নতুন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আমরা তাতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কোনো চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরকান আর্মিকে সরাসরি বলে দিয়েছি কোনো প্রকার জাতিগত নিধন আমরা সহ্য করবো না। তারা যদি শুধু রাখাইন দিয়ে পরিচালনা করতে চায় সেটাও আমরা মেনে নিতে পারবো না। আমরা আশা করছি তারা এর সদুত্তর দেবে। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার সব অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমার আমাদের সব কূটনীতিক সক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবো।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রেস বিফ্রিংয়ে জানালেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা

করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি, প্রয়োজনও নাই

আপডেট সময় : ০৯:২২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘের করিডর দেওয়া নিয়ে যে গুজব উঠেছে, আমি দ্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হবে না।

বুধবার (২১ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, করিডরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমারজেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু আরাকানে সাহায্য সহযোগিতা অন্যান্য সাপ্লাই রুট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না, জাতিসংঘ আমাদের এইটুকুই বললো যে, কাছেই যেহেতু বর্ডার, তাদের সাহায্য করতে, যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ রাখাইনে তার নিজস্ব সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাবে। আপনারা জাতিসংঘকে জিজ্ঞেস করেন, প্রমাণ পাবেন। আমরা করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলি নাই এবং বলবো না। আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডরের কোনো প্রয়োজন নাই।

তিনি বলেন, যে প্রয়োজনীয়তা আছে সেটা হচ্ছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার। যখন মিয়ানমারে ভূমিকম্প হলো আমরা কিন্তু তাদের আবেদনের অপেক্ষা করি নাই। আমরা ত্রাণ পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা একটা মানবিক অবস্থান। আমাদের ধারণা এই কাজটি করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং আমরা সেই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। যতদিন আরাকান অস্থিতিশীল থাকবে আমরা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারবো না। আর তাহলে তো প্রত্যাবাসন কৌশল নিয়েও কথা বলতে পারবো না। অনেকেই বলছেন করিডর নিয়ে আলাপ করছেন, আমাদের জানান নাই। অস্তিত্ববিহীন জিনিস নিয়ে কী করে আলাপ করবো, যার অস্তিত্ব নাই সেই বিষয়ে আলাপ কী করে হয়।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তারপর থেকে এই ইস্যুটিকে আমরা আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় পুনরায় তুলে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এর আগে সাত বছর এই ইস্যুটি প্রায় অপসৃত হয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক গাজা এবং ইউক্রেন ইস্যুতে রোহিঙ্গা ইস্যু আরো পেছনে পড়ে গিয়েছিল। আপনাদের হয়তো মনে আছে, গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন এবং জাতিসংঘকে এই ইস্যুতে একটি সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন, একটি জাতি নিয়ে জাতিসংঘের এমন সম্মেলন আয়োজন বিরল উদাহরণ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সচিবালয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় যে বিষয় আমরা দেখছি, এই সমস্যার সমাধান কী? আমরা প্রথম থেকেই ভেবেছি এই সমস্যার সমাধান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করা। এটিই সমাধান। এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমি আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব এসেছিলেন গত মার্চে। তিনি দ্যর্থহীনভাবে বলেছেন এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। তৃতীয় যে কাজটি ছিল আমাদের সেটা হচ্ছে প্রত্যাবাসনের প্রথম পদক্ষেপ, কারা ফেরত যাবেন সেই বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা। ২০১৭ সাল থেকে কয়েক দফায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার তথ্য মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয় ভেরিফিকেশনের জন্য। গত ৮ বছর ধরে এই ভেরিফিকেশনের কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পারিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিশেষ দূতের সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তাতে তারা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত করেন এই ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজারকে তারা প্রত্যাবাসনযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছেন। আর বাকি ৭০ হাজারের সমস্যা ছিল ছবি এবং কিছু তথ্য নিয়ে। সেগুলো তারা আমাদের সঙ্গে বসে নিরসন করবেন। এর ফলে আমরা প্রত্যাবাসনযোগ্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা লাভ করি। এগুলো ছিল প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি কাজ, যা বিগত সময়ে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া কী হবে, সেটা দেখতে গিয়ে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি সেটা হচ্ছে মিয়ানামার সরকারের দখলে ৯০ ভাগ রাখাইন নেই। এটার দখল নিয়ে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আরকান আর্মি এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। সেই আলোচনা আমরা একই সমান্তরালে চালু করেছি। আমাদের আরাকান আর্মি সুস্পষ্টভাবে বলেছে , রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া তাদের একটি প্রিন্সিপ্যাল পজিশন, একই কথা আমদের মিয়ানমার সরকার উল্লেখ করেছে। আরাকান আর্মি বলেছে, পরিস্থিতি অনুকূলে হলে তারা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেবে। আরাকানে যুদ্ধাবস্থা এখনও নিরসন হয়নি।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইন অঞ্চলে ব্যাপক খাবার, ওষুধের অভাব। ইউএনডিপি রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে এক ধরনের ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে খাবার ওষুধ না পেয়ে আমাদের দেশে চলে আসতে পারে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদেরই আমাদের দেশে চলে আসার প্রবণতা বেশি হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করছি প্রায় ৮ বছর ধরে। আমরা ভার ধারণের সীমার বাইরে চলে এসেছি। অতিরিক্ত শরণার্থী গ্রহণ করা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় রাখাইন সম্প্রদায় আমাদের সীমান্তে এসে খাদ্য এবং ওষুধের সহায়তা চেয়েছেন। তারা যদি আসা শুরু করেন তাহলে আমাদের নতুন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা সেটা এড়াতে চাচ্ছি। জাতিসংঘের কার্যক্রম যেটা মিয়ানমারে চলছে, সেটা রাখাইনে আর চালানো সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক যেকোনও ধরনের ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব গত মার্চে এসে আমাদের বললেন যে আমরা রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা দিতে পারি কিনা? আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যিকতা আছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে যে এই সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কাউকে এর থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, এটা কোনো যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের মধ্যে শঙ্কা হচ্ছে আরাকানে যে নতুন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আমরা তাতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কোনো চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরকান আর্মিকে সরাসরি বলে দিয়েছি কোনো প্রকার জাতিগত নিধন আমরা সহ্য করবো না। তারা যদি শুধু রাখাইন দিয়ে পরিচালনা করতে চায় সেটাও আমরা মেনে নিতে পারবো না। আমরা আশা করছি তারা এর সদুত্তর দেবে। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার সব অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমার আমাদের সব কূটনীতিক সক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবো।