ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

কম ভোটের ছয় উপ নির্বাচন যে বার্তা দিয়ে গেল

  • আপডেট সময় : ০১:৫২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির পদত্যাগী উকিল আব্দুস সাত্তার ও হিরো আলম নিয়ে যতটা সরব ছিল ভোটের আলোচনা, ততটাই নিরুত্তাপ ছিল ছয় উপ নির্বাচনের বাকি সবকিছু; ভোটাররাও ছিলেন অনেকটাই নীরব যে কারণে ভোটও পড়েছে কম।
গাইবান্ধা- ৫ উপ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে বাতিলের পর বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের আমলে ভোটের দিকে কিছুটা নজর ফিরলেও সবশেষ ছয় আসনের নির্বাচনে তার অনেকটাই মিলিয়ে গেছে।
অনেকেই বলছেন, ১১ মাসের মধ্যে কুমিল্লা, রংপুর সিটি করপোরেশন ও গাইবান্ধা- ৫ উপ নির্বাচন করে বর্তমান কমিশন আস্থা-গ্রহণযোগ্যতায় যেভাবে এগোচ্ছিল, এবার ভোটারদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় তা অনেকটাই ফিকে হতে শুরু করেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) সাবেক পরিচালক আব্দুল আলীমও বলছেন তেমনটিই।
এই নির্বাচন বিশ্লেষকের মতে, “মোটাদাগে এ কমিশনের অধীনে কুমিল্লা ও রংপুর সিটির ভোট ভালো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। গাইবান্ধা উপ নির্বাচন অনিয়মের কারণে বন্ধের পর কঠোর অবস্থানে ভালো হয়েছে। যদি তুলনা করি, ছয় উপ নির্বাচনের পর ইসির অগ্রসরমান অবস্থান কিছুটা হলে পিছিয়েছে।”
কমিশনের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সব দলকে ভোটে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ইভিএম ও সিসি ক্যামেরায় ভোটের মধ্যে আগের নির্বাচনগুলোতে কঠোর অবস্থান দৃষ্টি কেড়েছিল। অন্যদিকে সমাবেশ থেকে নাটকীয়তা তৈরি করে সংসদ ছাড়ার ঘোষণার পর বিএনপির সাংসদদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয় উপ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের প্রার্থীদের সমঝোতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আবহ ছিল কম। ভোটারদের তুলনামুলক কম উপস্থিতিতে নির্বাচনও হয়েছে অনেকটা ঢিলেঢালা। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোটের পরিবেশের দিকে এবার দৃষ্টি সরাচ্ছেন সবাই।
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থাকবে। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। ছয় উপ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার তুলনামুলক কম ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ভোটের পরিবেশও ছিল ভিন্ন। বিশেষ করে বাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ভিন্ন আঙ্গিকে বা ভিন্ন চরিত্রের নির্বাচন হয়েছে। স্বতন্ত্র এক প্রার্থী ‘নিখোঁজ’ এবং বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ক্ষমতাসীনদের পরোক্ষ সমর্থনের ঘটনা আলোচনায় রাখে এ আসনের উপ নির্বাচনকে।
“বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ নির্বাচনে স্বভাবতই দলটি থাকছে না। সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক ভোটও হয়নি। ছয় আসনে সমঝোতা হয়েছে, সব আসনে ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী দেয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনও হয়নি। এতে জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহও ছিল না। সব মিলিয়ে এটাকে লেজিটিমেট ইলেকশন বলতে পারি না। লেজিটেমেসি না থাকলেও লিগ্যাল; কিন্তু গ্রহণযোগ্য একথা বলা যাচ্ছে না,” যোগ করেন তিনি। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এর আগে পাঁচ সিটির নির্বাচন হবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাবি: দলের ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি বলেন, “এই উপ নির্বাচনগুলোতে ভোটারের সংখ্যা কোথাও তাদের (ইসি) হিসাব মতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। আর আমাদের (বিএনপি) হিসাব মতে- এটা ৫ শতাংশের বেশি হয় নাই।“
অপরদিকে এ উপ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গত বুধবার তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাকি মাগুরার দাদা হয়েছে, দাদা হবে। দাদাও হয়নি, নানাও হয়নি, মাগুরাও হয়নি, নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটু হাতাহাতি হয়েছে। এছাড়া সব কয়টি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।“

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কম ভোটের ছয় উপ নির্বাচন যে বার্তা দিয়ে গেল

আপডেট সময় : ০১:৫২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির পদত্যাগী উকিল আব্দুস সাত্তার ও হিরো আলম নিয়ে যতটা সরব ছিল ভোটের আলোচনা, ততটাই নিরুত্তাপ ছিল ছয় উপ নির্বাচনের বাকি সবকিছু; ভোটাররাও ছিলেন অনেকটাই নীরব যে কারণে ভোটও পড়েছে কম।
গাইবান্ধা- ৫ উপ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে বাতিলের পর বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের আমলে ভোটের দিকে কিছুটা নজর ফিরলেও সবশেষ ছয় আসনের নির্বাচনে তার অনেকটাই মিলিয়ে গেছে।
অনেকেই বলছেন, ১১ মাসের মধ্যে কুমিল্লা, রংপুর সিটি করপোরেশন ও গাইবান্ধা- ৫ উপ নির্বাচন করে বর্তমান কমিশন আস্থা-গ্রহণযোগ্যতায় যেভাবে এগোচ্ছিল, এবার ভোটারদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় তা অনেকটাই ফিকে হতে শুরু করেছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) সাবেক পরিচালক আব্দুল আলীমও বলছেন তেমনটিই।
এই নির্বাচন বিশ্লেষকের মতে, “মোটাদাগে এ কমিশনের অধীনে কুমিল্লা ও রংপুর সিটির ভোট ভালো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। গাইবান্ধা উপ নির্বাচন অনিয়মের কারণে বন্ধের পর কঠোর অবস্থানে ভালো হয়েছে। যদি তুলনা করি, ছয় উপ নির্বাচনের পর ইসির অগ্রসরমান অবস্থান কিছুটা হলে পিছিয়েছে।”
কমিশনের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সব দলকে ভোটে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ইভিএম ও সিসি ক্যামেরায় ভোটের মধ্যে আগের নির্বাচনগুলোতে কঠোর অবস্থান দৃষ্টি কেড়েছিল। অন্যদিকে সমাবেশ থেকে নাটকীয়তা তৈরি করে সংসদ ছাড়ার ঘোষণার পর বিএনপির সাংসদদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয় উপ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের প্রার্থীদের সমঝোতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আবহ ছিল কম। ভোটারদের তুলনামুলক কম উপস্থিতিতে নির্বাচনও হয়েছে অনেকটা ঢিলেঢালা। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোটের পরিবেশের দিকে এবার দৃষ্টি সরাচ্ছেন সবাই।
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থাকবে। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। ছয় উপ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার তুলনামুলক কম ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ভোটের পরিবেশও ছিল ভিন্ন। বিশেষ করে বাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ভিন্ন আঙ্গিকে বা ভিন্ন চরিত্রের নির্বাচন হয়েছে। স্বতন্ত্র এক প্রার্থী ‘নিখোঁজ’ এবং বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ক্ষমতাসীনদের পরোক্ষ সমর্থনের ঘটনা আলোচনায় রাখে এ আসনের উপ নির্বাচনকে।
“বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ নির্বাচনে স্বভাবতই দলটি থাকছে না। সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক ভোটও হয়নি। ছয় আসনে সমঝোতা হয়েছে, সব আসনে ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী দেয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনও হয়নি। এতে জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহও ছিল না। সব মিলিয়ে এটাকে লেজিটিমেট ইলেকশন বলতে পারি না। লেজিটেমেসি না থাকলেও লিগ্যাল; কিন্তু গ্রহণযোগ্য একথা বলা যাচ্ছে না,” যোগ করেন তিনি। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এর আগে পাঁচ সিটির নির্বাচন হবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির দাবি: দলের ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি বলেন, “এই উপ নির্বাচনগুলোতে ভোটারের সংখ্যা কোথাও তাদের (ইসি) হিসাব মতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয় নাই। আর আমাদের (বিএনপি) হিসাব মতে- এটা ৫ শতাংশের বেশি হয় নাই।“
অপরদিকে এ উপ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গত বুধবার তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাকি মাগুরার দাদা হয়েছে, দাদা হবে। দাদাও হয়নি, নানাও হয়নি, মাগুরাও হয়নি, নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটু হাতাহাতি হয়েছে। এছাড়া সব কয়টি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।“