নিজস্ব প্রতিবেদক: বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাবনা চাপিয়ে দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সাইফুল হক বলেন, ‘যেসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারবে, সেই ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা করে তারা (সরকার) চেষ্টা করবে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করার। সেই সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে জাতীয় নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ বিবেচনা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ বিষয়ভিত্তিক কোনো আলোচনা হবে না। এটি একটি উদ্বোধনী সভা। তারা বলেছেন, এই সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দল, জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন রয়েছে।’
ভারতের বিষয়ে বৈঠকে আলাপ হয়েছে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ভারতের বাংলাদেশবিরোধী নীতি, যা বিপর্যয়ে ফেলছে; সর্বশেষ টাম্পের কাছে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী দৌড়ঝাপ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে অভ্যুত্থান ও জনগণের বিরুদ্ধে তাদের নালিশ আমলে নেয়নি-সেই কথা স্পষ্ট করে বলেছেন।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই না: পার্থ: জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা গত ছয় মাসের বর্ণনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন,সারা বাংলাদেশসহ আমরা নেতা কর্মীরা এ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি, আন্তর্জাতিক সমাজ দাঁড়িয়েছে, জাতিসংঘ দাঁড়িয়েছে, ফ্যাসিস্ট গভর্মেন্ট এই সরকারের নিয়ে যে পাঁয়তারা ছিল, বিভিন্ন মিথ্যে ফুলঝুরি ছিল আমাদের অবস্থানকে নিয়ে, জাতিসংঘের রিপোর্ট আসার পর অনেকটাই ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ছাত্রজনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের আত্মত্যাগকে আমাদের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবেই যেন অপমানিত না করে। তিনি বলেন, আগামী ৬ মাস কীভাবে সবাই একসঙ্গে কাজ করব, যে কমিশন গুলো কাজ হয়েছে, তারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, আমাদের কি কি প্রস্তাব আছে সেগুলো আর কীভাবে বিস্তর আলোচনা করব, এই ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেছেন। কোনো কোনো দল নির্বাচন কবে হবে? নির্বাচন তাড়াতাড়ি চায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান বলেন, স্থানীয় নির্বাচন দিলে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে মারামারির একটা সম্ভাবনা আছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনেক বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। গ্রাউন্ড রিয়েলিটি আলাদা। আওয়ামী লীগ গ্রাউন্ড রিয়েলিটি মেনে নেবে না। এই সন্ত্রাস কোনোভাবে যাতে না হয়, পরিবেশ যেন স্থিতিশীল থাকে। কোনো সংস্কার যাতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না করে। আবার অনেক রাজনৈতিক দল বলেছে যে, স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে ভালো হবে। আমরা পাশে ছিলাম এবং সামনে পাশে থাকব। এতগুলো আত্মত্যাগ এটা যেন কোনোভাবে নষ্ট না হয়। এই অর্জনটা কোনো সাধারণ অর্জন না। আমাদের নিজেদের স্বার্থে ওটাকে যেন কোনোভাবে আন্ডারমেন্ট না করি। আগামীতে সিরিজ মিটিং হবে, সেটিও আমাদের জানানো হবে।
বর্তমান সরকারের ছয় মাসের কর্মকাণ্ডে আপনার সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্ন জবাবে তিনি বলেন, আমরা সন্তুষ্ট, আমরা সরকারের পাশে আছি। সরকারের কি ভুল হচ্ছে আবার কি হচ্ছে না, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমি মনে করি এটা জনগণের সরকার।
আ.লীগকে সরকারিভাবে টেরোরিস্ট ঘোষণার দাবি জানিয়েছি: ববি হাজ্জাজ: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার কারণে আওয়ামী লীগকে সরকারিভাবে টেররিস্ট ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আজকের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। জাতীয় নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে তা তুলে ধরেছি। তবে তার আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা দেখতে চাই বলে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তারা গত সবকটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে। বিশেষ করে তারা গত জুলাই-আগস্টে নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছে। তাই দলটি এখন দেশের মানুষের কাছে টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি যেন সরকারিভাবে আওয়ামী লীগকে টেরোরিস্ট ঘোষণা করা হয়, সেইসঙ্গে তাদের রাজনীতি যেন নিষিদ্ধ করা হয়।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শক্তভাবে জানিয়েছি জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচন নয়। আমরা মনে করি, স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রচুর দাঙ্গা-কোন্দল শুরু হতে পারে। পুলিশ বাহিনী এখনই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তখনও পারবে না। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই যেন স্থানীয় নির্বাচন না হয়, সে কথা আমরা বলেছি।
ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচিত সরকারের বাইরে বড় কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। তাই শিগগিরই একটা নির্বাচন দরকার। আমরা বলেছি ২০২৫ সালেই দিতে হবে এমন নয়, তবে অতি শিগগিরই যেন দেওয়া হয়। এর আগে প্রতিটি সংস্কার কমিশন যেন প্রতিটি দলের সঙ্গে বসে এবং সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে। সংস্কার নিয়ে যদি ঐকমত্যে না আসা যায়, তাহলে সেই সংস্কার রাজনৈতিক সরকার করবে।
সরকার ক্ষমতায় আছে ঠিকই কিন্তু কর্তৃত্ব সুস্পষ্ট হয়নি: মঞ্জু: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে ঠিকই কিন্তু তাদের কর্তৃত্ব এখনো সুস্পষ্ট হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেছেন, এমন অবস্থায় যেকোনো নির্বাচন আমাদের জন্য হবে বিপজ্জনক। আপনারা আপনাদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত না করে যদি নির্বাচনের দিকে যান তাহলে এ নির্বাচন হতে পারে অত্যন্ত খারাপ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক জায়গা থেকে আশ্বাস পেয়েছি। আমরা যদি সেই সহযোগিতা পাই তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। জাতিসংঘ যে সহযোগিতার কথা বলেছে, সেটি আমাদের জন্য বিরাট মাইলফলক। কিন্তু বিদেশিরা বলেছেন আমরা তোমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারব কিন্তু তোমাদের যে সংস্কার সেটি আমরা করতে পারব না। তাই তিনি বলেছেন, এই সংস্কারের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
তিনি বলেন, এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলেছি প্রথম যেদিন আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তখন আমরা বলেছিলাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ঐক্যের ভিত্তিতে টিম তৈরি করে দেন। কিন্তু আপনি সেটা করেননি, দেরি করে করেছেন। আমরা আরেকটা বিষয় বলেছি এই সরকারের সঠিক কর্তৃত্ব এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে এমন ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবেন? আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি জাতীয় নির্বাচন আগে করেন। কিন্তু আপনার প্রশাসনিক কর্তৃত্বটা লাগবেই।
পরামর্শের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি আপনাদের একজন উপদেষ্টা ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হন। ছিনতাইকারী কবলে পড়লে পুলিশের পক্ষ থেকে কী সহযোগিতা পাওয়া যায়, সেটা আপনারা দেখেন।