ঢাকা ০৬:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫

কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে

বিমেষ সংবাদদাতা : নতুন নতুন শর্ত আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। গত আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে পাওয়া গেছে মাত্র ৮ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিলো ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার পরও একটি উচ্চাভিলাষী টার্গেট দিয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প খাতে নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সুদ ও আসল পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের স্কিমভিত্তিক এ সংক্রান্ত বিনিয়োগের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে এক পরিপত্রে বলা হয়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর অনুকূলে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে ৯০ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপ বন্ডের মাধ্যমে ৯৭৫ কোটি টাকা। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের উল্লিখিত বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিভাজন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ জানানো হয়। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এই সার্কুলার সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট হিসাব। অন্যদিকে, সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে তা নিট বিক্রিসহ সুদ ও আসল পরিশোধের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে এই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। এই কথার সত্যতা পাওয়া গেছে অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যানে। গেল ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় এই খাত থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট টার্গেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রির দৈন্যদশায় বছর শেষে বিক্রি ২০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ হ্রাস ও নানা শর্তারোপকে চিহ্নিত করেছেন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করাসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমিয়ে আনতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে থাকে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষের হাতে বর্তমানে সঞ্চয় করার মতো তেমন কোনো অর্থ থাকছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। এই ধারা আগামীতেও থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২

বিমেষ সংবাদদাতা : নতুন নতুন শর্ত আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। গত আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে পাওয়া গেছে মাত্র ৮ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিলো ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার পরও একটি উচ্চাভিলাষী টার্গেট দিয়েছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প খাতে নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সুদ ও আসল পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের স্কিমভিত্তিক এ সংক্রান্ত বিনিয়োগের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে এক পরিপত্রে বলা হয়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর অনুকূলে ৬৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে ৯০ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপ বন্ডের মাধ্যমে ৯৭৫ কোটি টাকা। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের উল্লিখিত বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিভাজন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ জানানো হয়। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এই সার্কুলার সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট হিসাব। অন্যদিকে, সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে তা নিট বিক্রিসহ সুদ ও আসল পরিশোধের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে এই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। এই কথার সত্যতা পাওয়া গেছে অর্থ বিভাগের এক পরিসংখ্যানে। গেল ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় এই খাত থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট টার্গেট ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রির দৈন্যদশায় বছর শেষে বিক্রি ২০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষের সঞ্চয় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ হ্রাস ও নানা শর্তারোপকে চিহ্নিত করেছেন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করাসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমিয়ে আনতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে থাকে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষের হাতে বর্তমানে সঞ্চয় করার মতো তেমন কোনো অর্থ থাকছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। এই ধারা আগামীতেও থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।