প্রত্যাশা ডেস্ক : জ্যৈষ্ঠ এসেছে এক সপ্তাহ হলো। মধু মাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রসালো ফল আম কবে আসবে রাজধানীর বাজারে- এই অপেক্ষায় নগরবাসী। ‘মধুমাখা ফল মোর বিখ্যাত ভুবনে/তুমি কি তা জান না ললনে?’- রসনা প্রিয় বাঙালি যেন মনে মনে আওড়াচ্ছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই পঙক্তি।
মধু মাসের শুরুতেই সাধারণত বাঙলির প্রিয় মুখরোচক নানান স্বাদের আম পাকতে শুরু করে। তবে জ্যৈষ্ঠের বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও রাজধানীর বাজারে এখনো তেমন দেখা মিলছে না আমের। অপেক্ষা যেন আর শেষ হচ্ছে না। তাই ঘুরেফিরেই প্রশ্ন- কবে বাজারে আসছে পাকা আম?
ব্যবসায়িদের ভাষ্য, অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে খুব শিগগির। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে আমের জোগান বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, কিছু দোকানির কাছে আম থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। অধিকাংশ দোকানেই আম নেই। আর যেগুলো আছে চড়া দামের কারণে সেগুলোর পাশেও ভিড়তে পারছেন না ক্রেতারা। দাম বিবেচনায় পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। ফুটপাতে, ঝুড়িতে, ভ্যানে করেও কিছু স্থানে পাকা আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। তার পরিমাণও সীমিত। তবে দামে ভালো। প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের মাটিতে ফলা নির্দিষ্ট ধরনের আমের রয়েছে সুনির্দিষ্ট জীবনচক্র। ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনেই আম পরিপক্ব হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় আমের এ মওসুম। চলে আগস্ট পর্যন্ত। তাই গুটি আম দিয়ে শুরু হলেও গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ ভালো জাতের আমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০/১৫ দিন। কোন আম কবে পরিপক্ক হবে এবং চাষিরা কোন আম কবে নামাতে পারবেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যে তা জানিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে গত ১২ মে বিকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মলন করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম। তিনি বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে গাছ থেকে আম নামানোর সময়সূচি নির্ধারণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘১৩ মে থেকে শুরু হয়ে তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে আম নামানোর মৌসুম চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। ১৩ মে গুটি আম, ২০ মে গোপালভোগ, ২৫ মে লক্ষণভোগ, ২৫ মে রাণিপছন্দ, ২৮ মে খিরসাপাত/হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতি, ২০ আগস্ট ইলমতি আম নামাতে পারবেন চাষিরা।’
এর আগে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিম উদ্দিন জানিয়েছিলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজশাহীর জাত আম খ্যাত সুমিষ্ট গোপালভোগ চলতি মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যেই বাজারে আসবে।
রাজশাহীর বিশিষ্ট লেখক ও আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ‘আম’ নিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থে লিখেছেন, পোক্ত, পুষ্ট ও পরিপক্ব আম চাইলে আরও একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ভোক্তা সচেতনভাবে সঠিক সময়ে তার পছন্দের আমটি কিনতে পারলে বিষযুক্ত আমের প্রভাব থেকে নিজেকে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মুক্ত রাখতে সক্ষম হবেন। এই গবেষকের মতে, রাজশাহীতে গোবিন্দভোগ আমের ২৫ মের পর পরিপক্বতা আসে। গুলাবখাস জাতের আম ৩০ মের পর পরিপক্ব হবে। জাত আম গোপালভোগ পরিপক্ব হবে ১ জুনের পর। রাণীপছন্দ আমে পরিপক্বতা আসবে ৫ জুনের পর। হিমসাগর বা খিরসাপাত আমে পরিপক্বতা আসবে ১২ জুনের পর। ল্যাংড়া আমে ১৫ জুনের পর। লক্ষ্মণভোগ আমের পরিপক্বতা আসবে ২০ জুনের পর। হাঁড়িভাঙা আমের পরিপক্বতা আসবে ২০ জুনের পর। এছড়া আম্রপালি আমের পরিপক্বতা আসবে ১ জুলাই থেকে। মল্লিকা আমের পরিপক্বতা আসবে ১ জুলাই থেকে। ফজলি আমের পরিপক্বতা আসবে ৭ জুলাই থেকে এবং সর্বশেষ ২৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা আমের পরিপক্বতা আসবে।
এদিকে আমে যাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো না হয় সেজন্য হাইকোর্ট থেকে আগেভাগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে বাগান নজরদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই গত ১৫ মে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিন থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে কোনো আম আগে পাকলে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। তার পরিদর্শন শেষেই গাছ থেকে নামানো যাবে আম।
কবে খাবেন কোন জাতের কী আম
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ