লাইফস্টাইল ডেস্ক: ছোটবেলায় মেয়েশিশুরা ছেলেদের তুলনায় সব কিছুতে এগিয়ে থাকে। হোক তা কথা বলা কিংবা হাঁটতে শিখা কিংবা পড়াশোনা- সবকিছুতেই তারা টপার থাকে। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলের ধাপ পেরোনোর পর তাদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসা শুরু করে। এটি তাদের অনেকটায় পিছিয়ে রাখে। এর কারণ যে কোনো কিছুই হতে পারে। সমাজ ও পরিবার- উভয়ই আমাদের কন্যাসন্তানের বিপরীতে থাকে।
সামাজিকভাবে এখনো মনে করা হয় মেয়েরা ছেলেদের সমান নয়, ছেলেদের সমান স্বাধীনতা মেয়েদের প্রাপ্য নয়। যদিও মেয়েরা সব ক্ষেত্রেই নিজেদের প্রমাণ করে চলেছে, তবুও তাদের এই যাত্রাটা সহজ নয়। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে তাদের অনেক রকম বাঁধা পেরোতে হবে। এ জন্য সব থেকে বেশি যা দরকার, তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আর সন্তানকে কনফিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে শিশুকাল থেকেই। কীভাবে কন্যসন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে, তা হলো-
তার ক্ষমতা ও পছন্দকে সম্মান করা: কন্যাশিশুর পছন্দ এবং ক্ষমতাকে সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিন, যাতে সে বুঝতে পারে যে তার মতামতও মূল্যবান। পছন্দের অধিকার ও স্বতন্ত্র মতামত গড়ে তোলার সুযোগ তাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে।
ইতিবাচক কথা বলা: শিশুকে প্রশংসা করার মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ান। তার ছোট ছোট সাফল্যকে স্বীকৃতি দিন। নেতিবাচক সমালোচনার পরিবর্তে উৎসাহমূলক কথা বলুন। ‘তুমি পারবে’ বা ‘তুমি দারুণ কাজ করেছ’- এমন মন্তব্য তার মনোবল বাড়াবে।
ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার: জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু কিভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হয় তা শেখানো দরকার। শিশুকে ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার না করে তাকে দেখান, কীভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এটি তাকে কঠিন পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী থাকতে সাহায্য করবে।
তাকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা: প্রশ্ন করা এবং কৌতূহল প্রকাশ করা একজন শিশুর বিকাশের অন্যতম প্রধান ধাপ। কন্যা শিশুকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করুন, যাতে সে নিজের চারপাশের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারে। প্রশ্ন করার মাধ্যমে তার মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে এবং নতুন বিষয় শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
সৃজনশীলতার চর্চা করানো: কন্যাশিশুকে সৃজনশীল হতে দিন। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, নাচ শেখা বা যে কোনো ধরনের সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করা দরকার। সৃজনশীলতার মাধ্যমে সে নিজের দক্ষতা প্রকাশ করতে পারবে এবং এটি তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
সমাজের লিঙ্গভেদমূলক মানসিকতা থেকে দূরে রাখা: অনেক সময় সমাজে মেয়েদের কাজ এবং দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মানসিকতা তৈরি হয়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। কন্যা শিশুকে শেখান যে সে যা করতে চায়, সেটাই সঠিক। লিঙ্গভেদের ভিত্তিতে কোনো কাজের মূল্যায়ন করা উচিত নয়। এটি তাকে নিজের পরিচয় নিয়ে গর্বিত হতে শিখাবে।
উদাহরণ দেওয়া: আপনি নিজে যদি আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করেন, তাহলে শিশুও তা অনুসরণ করবে। শিশুরা সবসময় তাদের আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে শেখে। তাই আপনি নিজেই যদি সঠিক উদাহরণ স্থাপন করেন, শিশুও সেই গুণগুলো অর্জন করবে।
কন্যাশিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া; যা ধৈর্য, সমর্থন ও ইতিবাচক পরিবেশের মাধ্যমে সম্ভব। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহানুভূতিশীল মানসিকতা শিশুর ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে। আত্মবিশ্বাসী কন্যাশিশুরা একদিন সমাজের নেতৃত্ব দেবে এবং পরিবর্তনের স্রোতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।