প্রত্যাশা ডেস্ক: কনকনে শীতে কাঁপছে দেশ, জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই প্রকট যে কাছের কোনও কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুর বিভাগের নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এ ছাড়াও রংপুরে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১২ ডিগ্রি ঠাকুরগাঁয়ে ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১২ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এদিকে প্রচণ্ড শীত, সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া সূত্রে জানা গেছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার তীব্রতাও বাড়ছে যা সকাল ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে। গত ৩ দিন ধরে সূর্যের মুখ অল্প সময়ের জন্য দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাসে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। রাত যত গভীর হয় তাপমাত্রা ততই কমতে থাকে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ জানান, তাপমাত্রা এখন প্রতিদিনই কমবে। বছরের শেষ কয়েকটা দিনে শীতের তীব্রতা আরও কমবে। সেই সঙ্গে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রশাসকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৮ জেলায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণের জন্য শীতবস্ত্র এসেছে এবং বিতরণ শুরু হয়েছে।
ঢাকায়ও শীত আরো জোরালো হচ্ছে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বইছে ঠান্ডা বাতাস, যার ফলে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আজ সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আজ (শুক্রবার) আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। একইসাথে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৫ শতাংশ। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে।
অন্যদিকে, গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারাদেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হতে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এতে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসাথে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় দৃশ্যমানতা কমে যেতে পারে এবং শীতের অনুভূতিও বাড়তে পারে বলে।
এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া সর্দি, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন শত শত শিশু শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম জানান, এবার শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরিয়ে রাখা, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করা ও ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সানা/আপ্র/২৬/১২/২০২৫




















