ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

কথার চেয়ে মাথায় হাতের স্পর্শ বন্ধনকে করে শক্তিশালী

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ কেবল আনন্দের মুহূর্তই তৈরি করে না; বরং এটি মানসিক অস্থিরতা কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো নানা উপকারও করে।
শারীরিক স্নেহের পেছনে বিজ্ঞান: শারীরিক স্পর্শ দ্বারা স্নেহের প্রকাশ আমাদের মস্তিষ্কের এক বিশেষ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে, যাকে বলে ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’। এর ফলে অক্সিটোসিন নামের এক হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ‘কাডল কেমিক্যাল’ নামেও পরিচিত। এই হরমোন আমাদের একে অপরের প্রতি আস্থা ও মানসিক বন্ধন বাড়ায়। পাশাপাশি শারীরিক স্পর্শ সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মন ভালো করে দেয়। এ ছাড়া প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন মানসিক অবসাদের জন্য দায়ী হরমোন কর্টিসোল কমাতে সাহায্য করে। এসব রাসায়নিক বিক্রিয়া আমাদের মনে সৃষ্টি করে ইতিবাচক সব অনুভূতি।
স্পর্শের শারীরিক উপকারিতা-
রক্তচাপ কমায়: প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন বা তার হাত ধরা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
ব্যথা কমায়: কোমল স্পর্শ বা মালিশ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ব্যথা নিবারণকারী কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে ব্যথা কমাতে পারে।
ঘুমের মান উন্নত করে: প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো বা ঘুমানোর আগে আলিঙ্গন করা চাপ কমিয়ে বিশ্রাম ও আরামের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে।
স্পর্শের মানসিক উপকারিতা-
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা কমায়: আলিঙ্গন বা স্পর্শ মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে।
সম্পর্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে: সম্পর্কের মধ্যে সুখ ও মানসিক সংযোগ বাড়াতে প্রিয়জনকে কাছে টানুন। গবেষণা বলে, নিয়মিত শারীরিক স্পর্শ সম্পর্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
মানসিক অবস্থা উন্নত ও একাকিত্ব ঘোচায়: কাছের মানুষের আলিঙ্গন বা কোমল স্পর্শ কল্পনা করলেও মনে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা সুখানুভূতি জাগায় এবং একাকিত্ব দূর করে।
শারীরিক স্পর্শ সম্পর্কে যা জানা জরুরি: গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি নিয়মিত স্পর্শের মাধ্যমে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তাদের মানসিক চাপ কম থাকে এবং সামগ্রিকভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। ঘুমানোর আগে বা পরে হাত ধরা, গায়ে কোমল স্পর্শ বা আলিঙ্গন করা দাম্পত্য জীবনে সুখ ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। এমনকি সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়ার সময়ও শারীরিক স্পর্শ নেতিবাচক আবেগ কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে আদর বা স্নেহের প্রকাশ উপকারী। তবে সবার জন্য এটি সমান স্বস্তিদায়ক নয়। মনে রাখতে হবে, সব মানুষই শারীরিক স্পর্শ সমানভাবে পছন্দ করেন না, বিশেষ করে যারা কিছুটা অন্তর্মুখী বা যাদের এড়িয়ে চলার স্বভাব আছে। আবার অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সঙ্গ আশা করেন। মূলত পরস্পরের বোঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতার মিশেলেই সঙ্গীরা শারীরিক স্পর্শের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারেন, যাতে তাদের সম্পর্কের গভীরতা ও প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি পায়।
আলিঙ্গন, হাত ধরা বা কোমল স্পর্শ কেবল স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ নয়, এটি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। স্পর্শ আমাদের আবেগকে স্থিতিশীল রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং সামগ্রিকভাবে মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। রোমান্টিক সম্পর্ক হোক বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্পর্শের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কথার চেয়ে মাথায় হাতের স্পর্শ বন্ধনকে করে শক্তিশালী

আপডেট সময় : ০৪:৫৩:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ কেবল আনন্দের মুহূর্তই তৈরি করে না; বরং এটি মানসিক অস্থিরতা কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো নানা উপকারও করে।
শারীরিক স্নেহের পেছনে বিজ্ঞান: শারীরিক স্পর্শ দ্বারা স্নেহের প্রকাশ আমাদের মস্তিষ্কের এক বিশেষ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে, যাকে বলে ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’। এর ফলে অক্সিটোসিন নামের এক হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ‘কাডল কেমিক্যাল’ নামেও পরিচিত। এই হরমোন আমাদের একে অপরের প্রতি আস্থা ও মানসিক বন্ধন বাড়ায়। পাশাপাশি শারীরিক স্পর্শ সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মন ভালো করে দেয়। এ ছাড়া প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন মানসিক অবসাদের জন্য দায়ী হরমোন কর্টিসোল কমাতে সাহায্য করে। এসব রাসায়নিক বিক্রিয়া আমাদের মনে সৃষ্টি করে ইতিবাচক সব অনুভূতি।
স্পর্শের শারীরিক উপকারিতা-
রক্তচাপ কমায়: প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন বা তার হাত ধরা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
ব্যথা কমায়: কোমল স্পর্শ বা মালিশ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ব্যথা নিবারণকারী কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে ব্যথা কমাতে পারে।
ঘুমের মান উন্নত করে: প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো বা ঘুমানোর আগে আলিঙ্গন করা চাপ কমিয়ে বিশ্রাম ও আরামের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে।
স্পর্শের মানসিক উপকারিতা-
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা কমায়: আলিঙ্গন বা স্পর্শ মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে এবং মানসিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে।
সম্পর্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে: সম্পর্কের মধ্যে সুখ ও মানসিক সংযোগ বাড়াতে প্রিয়জনকে কাছে টানুন। গবেষণা বলে, নিয়মিত শারীরিক স্পর্শ সম্পর্কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে।
মানসিক অবস্থা উন্নত ও একাকিত্ব ঘোচায়: কাছের মানুষের আলিঙ্গন বা কোমল স্পর্শ কল্পনা করলেও মনে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা সুখানুভূতি জাগায় এবং একাকিত্ব দূর করে।
শারীরিক স্পর্শ সম্পর্কে যা জানা জরুরি: গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি নিয়মিত স্পর্শের মাধ্যমে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তাদের মানসিক চাপ কম থাকে এবং সামগ্রিকভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। ঘুমানোর আগে বা পরে হাত ধরা, গায়ে কোমল স্পর্শ বা আলিঙ্গন করা দাম্পত্য জীবনে সুখ ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। এমনকি সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়ার সময়ও শারীরিক স্পর্শ নেতিবাচক আবেগ কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে আদর বা স্নেহের প্রকাশ উপকারী। তবে সবার জন্য এটি সমান স্বস্তিদায়ক নয়। মনে রাখতে হবে, সব মানুষই শারীরিক স্পর্শ সমানভাবে পছন্দ করেন না, বিশেষ করে যারা কিছুটা অন্তর্মুখী বা যাদের এড়িয়ে চলার স্বভাব আছে। আবার অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সঙ্গ আশা করেন। মূলত পরস্পরের বোঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতার মিশেলেই সঙ্গীরা শারীরিক স্পর্শের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারেন, যাতে তাদের সম্পর্কের গভীরতা ও প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি পায়।
আলিঙ্গন, হাত ধরা বা কোমল স্পর্শ কেবল স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ নয়, এটি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। স্পর্শ আমাদের আবেগকে স্থিতিশীল রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং সামগ্রিকভাবে মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। রোমান্টিক সম্পর্ক হোক বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্পর্শের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট।