ঢাকা ১১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কঙ্গোতে সংঘর্ষে এক সপ্তাহে নিহত ৭০০: জাতিসংঘ

  • আপডেট সময় : ০৮:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমায় গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে সংঘর্ষে অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এই সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৮০০ জন। গতকাল শনিবার (১ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজাররিক জানিয়েছেন, রুয়ান্ডার সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম-২৩ কঙ্গোর উত্তর কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমা দখল করেছে। বর্তমানে তারা দক্ষিণে দক্ষিণ কিভুর রাজধানী বুকাভুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পূর্ব কঙ্গোতে সংঘাতের সূত্রপাত ১৯৯০-এর দশকে হলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে তীব্র হয়েছে। জাতিগত তুতসিদের নিয়ে গঠিত এম-২৩ দাবি করছে, তারা সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তবে কঙ্গোর সরকার বলছে, রুয়ান্ডা-সমর্থিত এই বিদ্রোহীরা পূর্বাঞ্চলের বিপুল খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো কঙ্গোর সরকারের সঙ্গে মিলে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।

নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে দুজাররিক সতর্ক করেছেন। সংঘর্ষ ঠেকাতে কঙ্গোর সেনাবাহিনী গোমা ও বুকাভুর সংযোগ সড়কে প্রতিরক্ষা লাইন গঠন করেছে বলে এএফপি জানিয়েছে। একইসঙ্গে শত শত বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। দক্ষিণ কিভুর গভর্নর জঁ-জ্যাক পুরুসি সাদিকি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্ররা এম-২৩ বিদ্রোহীদের প্রতিহত করছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এম২৩ বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা রাজধানী কিনশাসা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে, যা পশ্চিমে প্রায় ২,৬০০’শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কাইকওয়াম্বা ওয়াগনার বিবিসিকে বলেছেন, ‘রুয়ান্ডা বেআইনিভাবে আমাদের ভূখণ্ড দখল করছে এবং সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র করছে।’

রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ওয়াগনার। তবে রুয়ান্ডার সরকারের মুখপাত্র ইওলান্ডে মাকোলো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, ভূখণ্ড দখলেও আগ্রহী নই, সরকার পরিবর্তনের চেষ্টাও করছি না।’ ২০২৪ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পূর্ব কঙ্গোতে এম-২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে রুয়ান্ডার ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জিম্বাবুয়েতে এক জরুরি বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) ঘোষণা দিয়েছে, তারা কঙ্গোকে সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন দেবে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রেরিত শান্তিরক্ষী বাহিনী ইতোমধ্যে এম-২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

গত এক সপ্তাহে সংঘাতে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তত ১৬ সেনা নিহত হয়েছেন। এদিকে, সংঘাতের ফলে পূর্ব কঙ্গোতে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) শেলি থাকরাল জানিয়েছেন, ‘গোমার বাসিন্দারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছেন।’ ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ডিআর কঙ্গো একসময় আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি সেই পুরনো সংঘাতের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কঙ্গোতে সংঘর্ষে এক সপ্তাহে নিহত ৭০০: জাতিসংঘ

আপডেট সময় : ০৮:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমায় গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে সংঘর্ষে অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এই সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৮০০ জন। গতকাল শনিবার (১ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজাররিক জানিয়েছেন, রুয়ান্ডার সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম-২৩ কঙ্গোর উত্তর কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমা দখল করেছে। বর্তমানে তারা দক্ষিণে দক্ষিণ কিভুর রাজধানী বুকাভুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পূর্ব কঙ্গোতে সংঘাতের সূত্রপাত ১৯৯০-এর দশকে হলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে তীব্র হয়েছে। জাতিগত তুতসিদের নিয়ে গঠিত এম-২৩ দাবি করছে, তারা সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তবে কঙ্গোর সরকার বলছে, রুয়ান্ডা-সমর্থিত এই বিদ্রোহীরা পূর্বাঞ্চলের বিপুল খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো কঙ্গোর সরকারের সঙ্গে মিলে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।

নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে দুজাররিক সতর্ক করেছেন। সংঘর্ষ ঠেকাতে কঙ্গোর সেনাবাহিনী গোমা ও বুকাভুর সংযোগ সড়কে প্রতিরক্ষা লাইন গঠন করেছে বলে এএফপি জানিয়েছে। একইসঙ্গে শত শত বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। দক্ষিণ কিভুর গভর্নর জঁ-জ্যাক পুরুসি সাদিকি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্ররা এম-২৩ বিদ্রোহীদের প্রতিহত করছে। তবে এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এম২৩ বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা রাজধানী কিনশাসা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে, যা পশ্চিমে প্রায় ২,৬০০’শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কাইকওয়াম্বা ওয়াগনার বিবিসিকে বলেছেন, ‘রুয়ান্ডা বেআইনিভাবে আমাদের ভূখণ্ড দখল করছে এবং সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র করছে।’

রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ওয়াগনার। তবে রুয়ান্ডার সরকারের মুখপাত্র ইওলান্ডে মাকোলো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, ভূখণ্ড দখলেও আগ্রহী নই, সরকার পরিবর্তনের চেষ্টাও করছি না।’ ২০২৪ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পূর্ব কঙ্গোতে এম-২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে রুয়ান্ডার ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জিম্বাবুয়েতে এক জরুরি বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) ঘোষণা দিয়েছে, তারা কঙ্গোকে সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন দেবে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রেরিত শান্তিরক্ষী বাহিনী ইতোমধ্যে এম-২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

গত এক সপ্তাহে সংঘাতে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তত ১৬ সেনা নিহত হয়েছেন। এদিকে, সংঘাতের ফলে পূর্ব কঙ্গোতে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) শেলি থাকরাল জানিয়েছেন, ‘গোমার বাসিন্দারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছেন।’ ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ডিআর কঙ্গো একসময় আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি সেই পুরনো সংঘাতের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।