নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ওয়াটা কেমিক্যালের সালফার অ্যাসিডের গ্যাসে ৫ গ্রামের ৫৪ নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে কয়েকজনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরাকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে কারখানার গ্যাসে এ ঘটনা ঘটে। গত প্রায় এক যুগ ধরে এ কারখানার গ্যাসের কারণে এখানকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। এ ঘটনায় এলাকাবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্রমেই ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদি, বলাইনগর, ফরিদআলীরটেক, মঙ্গলখালী ও মকিমনগর এলাকা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা। জনবহুল এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা করার বিধান না থাকলেও ওয়াটা কেমিক্যাল কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে গত এক যুগ ধরে এসব এলাকার প্রায় ৯ হাজার মানুষ নীরব যাতনা সহ্য করে আসছে। কারখানার গ্যাসের কারণে গত এক যুগে কয়েক হাজার লোক অসুস্থ হয়েছিলো বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, রবিবার (৭ আগস্ট) সকালে কারখানার গ্যাস নির্গমন করলে পথচারী ও স্থানীয় ৫৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ মাসুদা বেগম, ওসমান আলী, আমির আলী, মাহাথির (৬মাস), সামিয়া, মনু মিয়া, ইফসব আলী, মরিয়ম আক্তার, আরিফা (৫মাস), বিলাতন নেছা, জয়নব বেগম, ববি আক্তার, পারুল, হালিমা, জিসান, আমেনা, রাবেয়া জান্নাতী (৫মাস), শাহনা আক্তার, ওসমান আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মল্লিকা গেম নামে এক নারী বলেন, গত ৫ মাস আগে গ্যাসের কারণে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে আমেনা বিনতে রিনা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। দুইদিন চিকিৎসাধীন থেকে পর মারা যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গ্যাস ছাড়ার পর বুক জ্বালাপোড়া করে, মাথাব্যথা করে, শ্বাসকষ্ট হয়। গ্যাসের কারণে স্থানীয় এলাকাগুলোর গাছপালা জ্বলে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘরের টিন।
জামান মিয়া নামে একজন বলেন, তার ৮টি আম গাছ ছিল। গ্যাসের কারণে সেগুলো মরে গেছে। ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার মালিকপক্ষ হয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন স্থানীয় সালাম উদ্দিন ও আলী আকবর নামের দুই প্রভাবশালী। আর ওই দুই প্রভাবশালীর সেল্টারে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় নিরীহ মানুষকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। কারখানার গ্যাসের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে লাঠির আঘাতে আহত হতে হয়। এ ব্যপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বল্লে মালিকপক্ষ এলাকাবাসীকে বলেন, উপজেলা পুলিশ-প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করেই এই মরণঘাতি গ্যাস ছাড়ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে কারখানার কিছু যায় আসে না। অভিযোগের ভিক্তিতে কারখানার মালিকপক্ষের লোক হিসাবে পরিচিত সালামদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এসব জানি না। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, ওয়াটা কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস আগে কারখানা ফায়ার সেফটি প্ল্যানের জন্য আবেদন করেছে। নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ কারখানার ছাড়পত্র আছে। যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে তখন আবাসিক এলাকা ছিলোনা। তবে গ্যাসের কারণে যদি লোকজন অসুস্থ হয় তাহলে দেখবো। সোমবার পরিদর্শনে যাবো। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী বলেন, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা থাকা ঠিক নয়। কারখানার গ্যাস মানুষের চোখে-মুখে গেলে অনেক ক্ষতি হয়। মাথা ব্যথা করবে, শ্বাসকষ্ট হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ওয়াটা কেমিক্যালের গ্যাস নির্গমনের খবর পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু করতে দেওয়া হবে না।
ওয়াটা কেমিক্যালের সালফার এসিডের গ্যাসে ৫৪ জন অসুস্থ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ