ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ওহে বিশ্বমোড়ল, গাজার হত্যাযজ্ঞ থামাও

  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

আলী রেজা : গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে। এই সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরোধিতার ফলে সংকটের সমাধান হয়নি। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র শর্ত দিয়েছে যে, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের মুক্তি দিলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব। হামাস এই শর্তযুক্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানেনি। এদিকে ইসরাইল গাজার সবচেয়ে বড়ো শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। স্থলপথে হামলাও চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালিয়েছে। এতে চলমান যুদ্ধের একটি নতুন গতিপথ সৃষ্টি হলো বলা যায়।
গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে চরম বিক্ষোভ চলছে। এ বিক্ষোভ সামাল দিতে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসন মৃদুভাবে ইসরাইলি তৎপরতার বিরোধিতা করলেও সেটি লোক দেখানো বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। অন্যদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের শক্ত অবস্থান হামাসের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ^জুড়ে সমর্থনও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আকাশ ও স্থলপথে একযোগে হামলা বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করে তুললো বলে মনে হয়। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, ইসরাইল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে। সেখানে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে ইসরাইলি বাহিনীর। এই সংঘর্ষের কারণে এরই মধ্যে রাফা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি। ইসরাইল যদি এ হামলা চলমান রাখে তাহলে রাফা, জাবালিয়া ও নুসেইরাতে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা ও জাবালিয়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলীয় উপশহর আল-জেইতুন ও আল-সাবরাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় বহুতল আবাসিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গাজার হাজার হাজার নারী, শিশু ও বেসামারিক মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট প্রায় সাত দশকের। এই দীর্ঘ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বার বার। মাঝে মাঝে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসরাইল বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইহুদি শরণার্থীরা জেরুজালেমে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। সে সময় ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের আন্তরিকভাবেই গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী ইতিহাস বড়োই নির্মম। প্রায় সাত দশক ধরে সারাবিশ্ব ধারাবাহিকভাবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট তথা যুদ্ধ দেখে আসছে। বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও সংকট সমাধানে কোনো পরাশক্তি এখন পর্যন্ত আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসছে না। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের দায়সারা দায়িত্ব পালন করলেও কাউকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘের অসহায়ত্ব চোখে পড়ার মতো। বারবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রদানের ফলে পাস হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র যুক্তরাজ্য স্পষ্টতই ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার হত্যাযজ্ঞ বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোই নয়; ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখন সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বাইডেন প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাইডেন প্রশাসন এখন কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে- সেটাই দেখার বিষয়।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধে বর্তমানে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশু মৃত্যুবরণ করছে। আহত হয়ে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শুধু তাই নয়, বর্তমানে গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ক্রমশ নির্মম ও ভয়াবহ হচ্ছে। অতর্কিত হামলার আশঙ্কায় সেখানে নিরাপদে কোনো মেডিকেল টিম পৌঁছতে পারছে না। ত্রাণবাহী গাড়ি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকেরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় প্রভৃতি বেসামরিক স্থাপনা অতর্কিত বোমা হামলা করে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জীবিতরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। প্রতিপক্ষের কাছে আটকে পড়া লোকেরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা।
গাজা ভূখণ্ডে এখন কোনো নিরাপদ স্থান নেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হলেও বাস্তবে যুদ্ধবিরতিসহ সংকট সমাধানের কোনো পথ খুঁজে বের করতে পারছে না জাতিসংঘ। এদিকে ইসরাইলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ দুই পরাশক্তির সমর্থনের কারণেই জাতিসংঘের কোনো নিরপেক্ষ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে ধারণা করা হয়। আর একটি দুঃখজনক বিষয় হলো একমাত্র ইরান ছাড়া এ পর্যন্ত কোনো মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ মুসলিম দেশ কৌশলগত আচরণ করছে এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর পালটাপালটি আক্রমণে দিন দিন ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ হত্যা বেড়েই চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধান সমর্থক ও পৃষ্টপোষক বাইডেন প্রশাসনকে সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছুটা অনমনীয় হতে দেখা গেছে। গাজার নিরপরাধ নারী, শিশু ও বেসামারিক মানুষ হত্যার ইস্যুতে ইসরাইল সংযত না হলে অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার আভাস দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বিষয়টি লোক দেখানো না কি এর কোনো বাস্তবতা আছে- সেটা বোঝা যাবে বাইডেন প্রশাসনের পরবর্তী ভূমিকা পালনের নিরিখে।
যুদ্ধে প্রাণহানির সঠিক হিসাব কখনোই জানা যায় না। তবে এই লেখা চলাকালে ফিলিস্তিনি পক্ষে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সবচেয়ে নির্মম বিষয় হলো এই মৃতদের প্রায় ৭০% নারী ও শিশু। মারা গেছেন শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। ইসরাইল বাহিনীতেও মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। মানবিক সাহায্য কর্মীও নিহত হয়েছে দুই শতাধিক। আহত অবস্থায় আছে অসংখ্য মানুষ। এ হত্যাযজ্ঞ ও আহতদের আহাজারিতে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এলেও বিশ্বমোড়লরা সংকট সমাধানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। তাহলে কি যুদ্ধ চলবেই? মানবতাবাদী বিশ্ব কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে? শান্তি চাইলে পরাশক্তিগুলো নিজেদের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আবার তারা ইচ্ছে করলে যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করে রাখতে পারে। সামরিক ও অর্থনৈতিক- উভয় দিক দিয়ে পরাশক্তি হয়ে ওঠার এই এক সুবিধা। তবে এই সুবিধার বলে কেউ যদি মানবাধিকার প্রশ্নে নীরব থাকে তবে তাকে নিন্দা না করে পারা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কেন ভেটো দিয়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা পিছিয়ে দিচ্ছে? তবে কি যুক্তরাষ্ট্রই ইসরাইল বাহিনীর হাত দিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে? ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, চলমান পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। গণহত্যা ও ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে হামাস ঘোষণা দিয়েছে গাজায় কোনো ইসরাইলি সৈন্যকে তারা জীবিত রাখবে না। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসহায়তা বন্ধের আভাসকেও ইসরাইল গুরুত্ব দিচ্ছে না। তার মানে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির বদলে যুদ্ধের নতুন গতিপথ তৈরি হচ্ছে।
গাজা উপত্যকার যুদ্ধ তথা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে কার লাভ? কার ক্ষতি? ক্ষতির বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, যুদ্ধরত দু’পক্ষেরই ক্ষতি। যুদ্ধে দু’পক্ষেই হতাহত হয়। স্থাপনা ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। বাকিদেরও প্রকারান্তরে কোনো লাভ নেই। তবে যারা যুদ্ধের রসদ বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলটিতে অস্ত্র বিক্রি করে যারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে আসছে তারা শান্তির বদলে যুদ্ধকেই চলমান রাখতে চাইবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতির সঙ্গে জাতিগত বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠা মানে জাতিগতভাবে ইহুদিরা শক্তিশালী হয়ে ওঠা। ইহুদিরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমরা দুর্বল হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র এটা চায় বলেই কি অন্ধভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে যাচ্ছে? তাছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে? সারাবিশ্ব যেখানে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলছে সেখানে আমেরিকার ভিন্ন অবস্থান দুঃখজনক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে ইসরাইল পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে গেছে। ইসরাইল এখন বলছে- হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তারা ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকদের উপরও নির্বিচারে হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করছে। ফলে এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের দায় ইসরাইলকে যেমন নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরও নিতে হবে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান সংকটে বাংলাদেশ সরকার তার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ফিলিস্তিনের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় রাজনৈতিকভাবে কোনো পক্ষাবলম্বনের বিষয় নেই। এ ব্যাপারে মানবিক দিকটিই প্রাধান্য পেয়েছে। বিশকে প্রকৃত অর্থে মানবতাবাদী বিশ্বে পরিণত করতে হলে সর্বাগ্রে পরাশক্তিগুলোকে জাতি-ধর্ম নয়, মানবিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে বর্তমান বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর দিকেই তাকিয়ে আছে। গাজায় আর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে চায় না বিশ্ববাসী। অনেক হয়েছে। একদিকে গণহত্যা ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস অন্যদিকে ত্রাণ ও মেডিকেল সামগ্রী পরিবহণে প্রতিবন্ধকতার ফলে গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে তুলনীয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল সম্প্রতি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে হামলার ফলে গাজার কোনো স্থানই এখন আর নিরাপদ নেই।
লেখক: কলামিস্ট ও পিএইচডি গবেষক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ওহে বিশ্বমোড়ল, গাজার হত্যাযজ্ঞ থামাও

আপডেট সময় : ১১:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

আলী রেজা : গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে। এই সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরোধিতার ফলে সংকটের সমাধান হয়নি। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র শর্ত দিয়েছে যে, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের মুক্তি দিলেই কেবল যুদ্ধবিরতি সম্ভব। হামাস এই শর্তযুক্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানেনি। এদিকে ইসরাইল গাজার সবচেয়ে বড়ো শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। স্থলপথে হামলাও চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালিয়েছে। এতে চলমান যুদ্ধের একটি নতুন গতিপথ সৃষ্টি হলো বলা যায়।
গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে চরম বিক্ষোভ চলছে। এ বিক্ষোভ সামাল দিতে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসন মৃদুভাবে ইসরাইলি তৎপরতার বিরোধিতা করলেও সেটি লোক দেখানো বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। অন্যদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের শক্ত অবস্থান হামাসের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ^জুড়ে সমর্থনও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আকাশ ও স্থলপথে একযোগে হামলা বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করে তুললো বলে মনে হয়। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, ইসরাইল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে। সেখানে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে ইসরাইলি বাহিনীর। এই সংঘর্ষের কারণে এরই মধ্যে রাফা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি। ইসরাইল যদি এ হামলা চলমান রাখে তাহলে রাফা, জাবালিয়া ও নুসেইরাতে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা ও জাবালিয়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলীয় উপশহর আল-জেইতুন ও আল-সাবরাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় বহুতল আবাসিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গাজার হাজার হাজার নারী, শিশু ও বেসামারিক মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট প্রায় সাত দশকের। এই দীর্ঘ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বার বার। মাঝে মাঝে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসরাইল বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইহুদি শরণার্থীরা জেরুজালেমে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। সে সময় ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের আন্তরিকভাবেই গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী ইতিহাস বড়োই নির্মম। প্রায় সাত দশক ধরে সারাবিশ্ব ধারাবাহিকভাবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট তথা যুদ্ধ দেখে আসছে। বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও সংকট সমাধানে কোনো পরাশক্তি এখন পর্যন্ত আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসছে না। বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের দায়সারা দায়িত্ব পালন করলেও কাউকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘের অসহায়ত্ব চোখে পড়ার মতো। বারবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রদানের ফলে পাস হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র যুক্তরাজ্য স্পষ্টতই ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার হত্যাযজ্ঞ বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোই নয়; ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখন সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বাইডেন প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাইডেন প্রশাসন এখন কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে- সেটাই দেখার বিষয়।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধে বর্তমানে গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশু মৃত্যুবরণ করছে। আহত হয়ে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শুধু তাই নয়, বর্তমানে গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে। গাজার ধ্বংসযজ্ঞ ক্রমশ নির্মম ও ভয়াবহ হচ্ছে। অতর্কিত হামলার আশঙ্কায় সেখানে নিরাপদে কোনো মেডিকেল টিম পৌঁছতে পারছে না। ত্রাণবাহী গাড়ি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকেরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় প্রভৃতি বেসামরিক স্থাপনা অতর্কিত বোমা হামলা করে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জীবিতরা ক্ষুধা-তৃষ্ণায়, বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। প্রতিপক্ষের কাছে আটকে পড়া লোকেরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা।
গাজা ভূখণ্ডে এখন কোনো নিরাপদ স্থান নেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস হলেও বাস্তবে যুদ্ধবিরতিসহ সংকট সমাধানের কোনো পথ খুঁজে বের করতে পারছে না জাতিসংঘ। এদিকে ইসরাইলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ দুই পরাশক্তির সমর্থনের কারণেই জাতিসংঘের কোনো নিরপেক্ষ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলে ধারণা করা হয়। আর একটি দুঃখজনক বিষয় হলো একমাত্র ইরান ছাড়া এ পর্যন্ত কোনো মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ মুসলিম দেশ কৌশলগত আচরণ করছে এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর পালটাপালটি আক্রমণে দিন দিন ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষ হত্যা বেড়েই চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধান সমর্থক ও পৃষ্টপোষক বাইডেন প্রশাসনকে সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছুটা অনমনীয় হতে দেখা গেছে। গাজার নিরপরাধ নারী, শিশু ও বেসামারিক মানুষ হত্যার ইস্যুতে ইসরাইল সংযত না হলে অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার আভাস দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বিষয়টি লোক দেখানো না কি এর কোনো বাস্তবতা আছে- সেটা বোঝা যাবে বাইডেন প্রশাসনের পরবর্তী ভূমিকা পালনের নিরিখে।
যুদ্ধে প্রাণহানির সঠিক হিসাব কখনোই জানা যায় না। তবে এই লেখা চলাকালে ফিলিস্তিনি পক্ষে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সবচেয়ে নির্মম বিষয় হলো এই মৃতদের প্রায় ৭০% নারী ও শিশু। মারা গেছেন শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। ইসরাইল বাহিনীতেও মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। মানবিক সাহায্য কর্মীও নিহত হয়েছে দুই শতাধিক। আহত অবস্থায় আছে অসংখ্য মানুষ। এ হত্যাযজ্ঞ ও আহতদের আহাজারিতে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এলেও বিশ্বমোড়লরা সংকট সমাধানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। তাহলে কি যুদ্ধ চলবেই? মানবতাবাদী বিশ্ব কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে? শান্তি চাইলে পরাশক্তিগুলো নিজেদের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আবার তারা ইচ্ছে করলে যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করে রাখতে পারে। সামরিক ও অর্থনৈতিক- উভয় দিক দিয়ে পরাশক্তি হয়ে ওঠার এই এক সুবিধা। তবে এই সুবিধার বলে কেউ যদি মানবাধিকার প্রশ্নে নীরব থাকে তবে তাকে নিন্দা না করে পারা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কেন ভেটো দিয়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা পিছিয়ে দিচ্ছে? তবে কি যুক্তরাষ্ট্রই ইসরাইল বাহিনীর হাত দিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে? ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, চলমান পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। গণহত্যা ও ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে হামাস ঘোষণা দিয়েছে গাজায় কোনো ইসরাইলি সৈন্যকে তারা জীবিত রাখবে না। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রসহায়তা বন্ধের আভাসকেও ইসরাইল গুরুত্ব দিচ্ছে না। তার মানে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির বদলে যুদ্ধের নতুন গতিপথ তৈরি হচ্ছে।
গাজা উপত্যকার যুদ্ধ তথা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে কার লাভ? কার ক্ষতি? ক্ষতির বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, যুদ্ধরত দু’পক্ষেরই ক্ষতি। যুদ্ধে দু’পক্ষেই হতাহত হয়। স্থাপনা ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়। বাকিদেরও প্রকারান্তরে কোনো লাভ নেই। তবে যারা যুদ্ধের রসদ বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলটিতে অস্ত্র বিক্রি করে যারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে আসছে তারা শান্তির বদলে যুদ্ধকেই চলমান রাখতে চাইবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতির সঙ্গে জাতিগত বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠা মানে জাতিগতভাবে ইহুদিরা শক্তিশালী হয়ে ওঠা। ইহুদিরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমরা দুর্বল হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র এটা চায় বলেই কি অন্ধভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে যাচ্ছে? তাছাড়া আর কী কারণ থাকতে পারে? সারাবিশ্ব যেখানে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলছে সেখানে আমেরিকার ভিন্ন অবস্থান দুঃখজনক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে ইসরাইল পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে গেছে। ইসরাইল এখন বলছে- হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তারা ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকদের উপরও নির্বিচারে হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করছে। ফলে এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের দায় ইসরাইলকে যেমন নিতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরও নিতে হবে।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন চলমান সংকটে বাংলাদেশ সরকার তার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ফিলিস্তিনের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় রাজনৈতিকভাবে কোনো পক্ষাবলম্বনের বিষয় নেই। এ ব্যাপারে মানবিক দিকটিই প্রাধান্য পেয়েছে। বিশকে প্রকৃত অর্থে মানবতাবাদী বিশ্বে পরিণত করতে হলে সর্বাগ্রে পরাশক্তিগুলোকে জাতি-ধর্ম নয়, মানবিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে বর্তমান বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর দিকেই তাকিয়ে আছে। গাজায় আর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে চায় না বিশ্ববাসী। অনেক হয়েছে। একদিকে গণহত্যা ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস অন্যদিকে ত্রাণ ও মেডিকেল সামগ্রী পরিবহণে প্রতিবন্ধকতার ফলে গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে তুলনীয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল সম্প্রতি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে হামলার ফলে গাজার কোনো স্থানই এখন আর নিরাপদ নেই।
লেখক: কলামিস্ট ও পিএইচডি গবেষক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়