প্রত্যাশা ডেস্ক: হজযাত্রীদের মত ওমরাহ যাত্রীদের জন্যও মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি আরব সরকার, যা কার্যকর হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা ওমরাহ বা হজ করতে যাবেন, কিম্বা ভিজিট ভিসায় মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও তাইফে যাবেন, সবার জন্যই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
সৌদি আরবে ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নিতে হবে। ভ্রমণের সময় সেই টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সৌদি সরকার অনুমোদিত কোয়াড্রাইভ্যালেন্ট পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন অথবা কোয়াড্রাইভ্যালেন্ট কনজুগেটেড ধরনের টিকা নিতে হবে।
এর মধ্যে পলিস্যাকারাইড টিকার কার্যকারিতা ৩ বছর আর কনজুগেটেড টিকার কার্যকারিতা ৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে কেউ এই দুই ধরনের টিকা নিয়ে থাকলে তার আর নতুন করে টিকা নিতে হবে না।
দুই বছরের কম বয়সী ভ্রমণকারীর জন্য মেনিনজাইটিসের টিকার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরবের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর ইতোমধ্যে সব এয়ারলাইন্সকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী বহনে যুক্ত ‘সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স’ও এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশের ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোতে পাঠিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, মেনিনজাইটিস হচ্ছে এক ধরনের সংক্রামক রোগ। মানুষের মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের চারদিকে যে সূক্ষ্ম টিস্যুস্তরের আবরণ রয়েছে, তাকে মেনিনজেস বলে। এ টিস্যু স্তরের আবরণে সংক্রমণের ফলে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলে মেনিনজাইটিস। সাধারণত অণুজীবের সংক্রমণে এমনটি হয়।
এটি হলে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। তীব্র জ্বর ওঠে। এবং ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে মানুষ মারাও যেতে পারে। যেহেতু এটি সংক্রামক রোগ, সে কারণে পৃথিবীর অনেক দেশে, যেখানে অনেক লোক জড়ো হয়, সেখানে মেনিনজাইটিস টিকার ওপর জোর দেওয়া হয়।
মেনিনজাইটিস নানা রকমের হয়, যেমন ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস, নিসেরিয়া মেনিনজাইটিস, ভাইরাল মেনিনজাইটিস ইত্যাদি। হাঁচি, কাশি ও অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যবিধির মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হজের সময় আগেও এ টিকা দিতে হত। এখন ওমরাহর জন্যও লাগবে। হজের সময় বাংলাদেশে সরকার মেনিনজাইটিসের টিকা ইমপোর্ট করে হজযাত্রীদের দিত। প্রাইভেটে এই টিকা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর হলে টিকা দিতে হবে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। নিতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টিকা। ওমরাহযাত্রীদের জন্য টিকার কী ব্যবস্থা হবে, সেটা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক বুধবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। সৌদি সরকার সম্ভবত তাদের হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নির্দেশনাটা দিয়েছে। তবে সে দেশের সরকার বা দূতাবাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, যারা হজ করতে যান, তাদের বাধ্যতামূলক মেনিনজাইটিস টিকা নিতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই টিকা হজযাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে। টিকাটি ব্যয়বহুল। এখন যদি ওমরাহ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য সেটি বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে সেটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমানকে ফোন করলে ব্যস্ততার কথা জানিয়ে পরে কথা বলতে বলেন।
এই টিকা ছাড়াও কয়েকটি দেশের ওমরাহ যাত্রীদের করোনাভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পীতজ্বর এবং পোলিওর টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তানের যাত্রীদের জন্য পোলিও এবং অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো, ব্রাজিল ও নাইজেরিয়ার যাত্রীদের জন্য পীত জ্বরের টিকা বিশেষভাবে বাধ্যতামূলক।