ঢাকা ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

ওভেনে রান্না খাবারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

  • আপডেট সময় : ১২:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্যস্ত জীবনযাপনে আধুনিকতার ছোঁয়া হলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন। প্রতিদিন মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এই ওভেন না থাকলে অনেক গৃহিণীর মনই ভরে না। একদিকে বাইরে থেকে আনা খাবার গরম করা, অন্যদিকে অল্প তেলে অথবা তেল ছাড়া রান্নার জন্য অনেকেই মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু জানেন কি, নিয়মিত মাইক্রোওয়েভে রান্না খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নায় সমস্যা থাকলেও অনেকেই ব্যস্ত জীবনে ঝটপট রান্নার জন্য এর বিকল্প কোনো উপায় খুঁজে না-ও পেতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ওভেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক জীবনে মাইক্রোওয়েভ অন্যতম নির্ভরতা হলেও মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ টানা উচিত। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে মাছ, মাংস, ডাল, যাই রান্না করা হোক না কেন, ডি-নেচারড হয়ে যায়। খাবারের কোন কোন খাদ্যগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আবার একনাগাড়ে মাইক্রোওয়েভে রান্না খাবার খেলে ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যা ডেকে আনে।
পুষ্টিবিদদের মতে, মাইক্রোওয়েভে রান্না করাই হোক বা খাবার গরম করাই হোক- এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় রেডিয়েশন। এটি আমাদের শরীরসহ পরিবেশেরও নানা ক্ষতি করে। অনেক সময় আমরা রেস্তোরাঁর খাবার এনে মাইক্রোওয়েভে গরম করে খাই। ডিপ ফ্রাই করা খাবার রেডিয়েশন দিয়ে গরম করলে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা খাবার খেয়ে অনেকেরই রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে ছিল প্রচ- মাথার যন্ত্রণা, চোখে ব্যথা, অনিদ্রা, সারাদিন ধরে ঘুম ঘুম ভাব। একই সঙ্গে পেটে ব্যথা, টেনশন, অ্যাংজাইটি, মনঃসংযোগের অভাব, হজমের গোলমালসহ নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করার ফলে স্বাস্থ্যের যেসব ক্ষতি হতে পারে জেনে নিন : বিশেষত শুকনো খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে তাতেই বেশি পরিমাণে কার্সিনোজেনিক উপাদান ‘অ্যাক্রেলামাইড’ উৎপন্ন হয়। বিশেষত, দানাশস্য জাতীয় খাবার শুকনো গরম করলে তাতেই এই উপাদান উৎপন্ন হয়। যেমন, ভাত, বিভিন্ন শুকনো ডাল, রুটি, ডালিয়া, চিঁড়ে ইত্যাদি উচ্চমাত্রায় গরম করলে ক্ষতি। এমনকী, উচ্চ তাপমাত্রায় ২-৩ মিনিট খাবার গরম করলেও তা থেকে এই ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেল্টসভিল হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকের দাবি, সবজি, বিশেষত তরকারি বা রান্না করা সবজি মাইক্রোওভেনে গরম করলে, সবজিতে উপস্থিত উপকারী উপাদান ‘ফ্লোভোনয়েড’-এর মাত্রা কমতে থাকে, প্রায় বিনষ্ট হয়ে যায়। সবজির এই পুষ্টিগুণ হৃদপি- ভাল রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মাইক্রোওভেনে গরম করে খেলে খাবারের এই গুণ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এমনকী, মাইক্রোওভেনে পানিতে সিদ্ধ করলেও সবজির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
তবে ফ্যাটি খাবার যেমন, দুধ, ডিম, মাখন-ঘি যুক্ত খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে এই খাবারে উপস্থিত গুড ফ্যাটগুলি নষ্ট হয় রেডিয়েশনের প্রভাবে। অনেক সময় দেখা যায় মাইক্রোওভেনে গরম করলেও পুরো খাবার ভিতর পর্যন্ত গরম হয় না। বিশেষত, মাংস (রেডমিট), মিষ্টি, কোনও ভাজা খাবার গরমের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়। এতে করে খাবারের মধ্যে অনেক মাইক্রোঅর্গাজমের বৃদ্ধি ঘটে ও ক্ষতিকারক মাইক্রো টক্সিন তৈরি করে। যা শরীরে গিয়ে নানা রোগের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। ডিএনএ-র ড্যামেজও করতে পারে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দুধ ফোটাবেন না। কারণ এতে দুধের মধ্যে থাকা কিছু প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি দুধে থাকা উপকারি অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তিত হয়ে বিষাক্ত রাসায়ানিকে রূপ নেয়। যা ক্যানসার ডেকে আনে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে চিকেন বা মাটন রান্না সহজ ও সময় কম লাগার ফলে অনেকে মাইক্রোওয়েভ কুকিং পছন্দ করেন। কিন্তু মাংসে থাকা বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড ওভেনের পাল্লায় পড়ে ডি-নাইট্রোসোডিএন্থানল অ্যামিনস নামে বিষাক্ত যৌগ উৎপাদন করে, যা ক্যানসারের শঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। ডিপ ফ্রিজে রাখা রান্না করা সবজি এই ম্যাজিক মেশিনে গরম করলে উপকারী প্ল্যান্ট অ্যালকালয়েড বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়। এটিও আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ ডেকে আনে। বিট, গাজর, মুলার মত রুট ভেজিটেবলস মাইক্রোওয়েভে ওভেনে গরম করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়, তেমনি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয় যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। খাবারে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই-সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ফলে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য তাতে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। মাইক্রোওয়েভে সেই খাবার গরম করলে কোলেস্টেরল অক্সিডেশন যৌগ উৎপন্ন হয়। এই যৌগ শরীরে গেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের শাকে প্রচুর মাত্রায় নাইট্রেট থাকে, যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে শাক গরম করলে উপকারী এই উপাদানটিই নাইট্রোসামাইন নামক যৌগ উৎপন্ন করে, যা শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলস্টোন, বন্ধ্যাত্ব, ছানি এবং ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের প্রবণতা বাড়ে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নার ফলে করোনারি আর্টারিতে (হার্টের রক্তবাহী ধমনি) চর্বির প্রলেপ পড়ার গতি বেড়ে যায় হু হু করে। ফলে হার্টের অসুখ এবং আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
হজমক্ষমতা একেবারে কমে যায়, লাগাতার বদহজম চলতেই থাকে। নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেলে লসিকাগ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যায়। লসিকা আমাদের শরীরকে কয়েকটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই এই যন্ত্রের ব্যবহার লসিকার কার্যক্ষমতা কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মাইক্রোওয়েভের খাবার খেলে অন্ত্র এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রবণতাও বাড়ে। লাগাতার মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারে আমাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গকে ওলটপালট করে দেয়। এতে নার্ভ ও মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয়। আর এর প্রভাবে মানসিক স্থিতাবস্থা নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, স্থিরতা, ধৈর্য কমতে শুরু করে। শুরু হয় ডিপ্রেশন। অনেকেই খাওয়ার আগে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ভাত গরম করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস মোটেও ভালো নয়। মাইক্রোওয়েভে ভাত গরম করে খেলে পেটে বিষক্রিয়া হতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ভাত গরম করলে তাতে ব্যাসিলাস সেরেসাস নামক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে গিয়ে টক্সিন উৎপন্ন করে, যা ডায়রিয়াসহ পেটের নানান সমস্যার জন্য দায়ী। সবসময় কাচের পাত্রে খাবার গরম করুন। খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখতে খাবার গরম করার জন্য খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম না করে গ্যাসের চুলায় করতে পারেন। পাশাপাশি চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব রান্না করা খাবার সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলতে। কেননা, রান্না করার পর খাবার যতবার গরম করা হবে, ততই খাবারের গুণগতমান কমতে শুরু করবে।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ওভেনে রান্না খাবারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

আপডেট সময় : ১২:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২

লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্যস্ত জীবনযাপনে আধুনিকতার ছোঁয়া হলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন। প্রতিদিন মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এই ওভেন না থাকলে অনেক গৃহিণীর মনই ভরে না। একদিকে বাইরে থেকে আনা খাবার গরম করা, অন্যদিকে অল্প তেলে অথবা তেল ছাড়া রান্নার জন্য অনেকেই মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু জানেন কি, নিয়মিত মাইক্রোওয়েভে রান্না খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নায় সমস্যা থাকলেও অনেকেই ব্যস্ত জীবনে ঝটপট রান্নার জন্য এর বিকল্প কোনো উপায় খুঁজে না-ও পেতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ওভেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক জীবনে মাইক্রোওয়েভ অন্যতম নির্ভরতা হলেও মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ টানা উচিত। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে মাছ, মাংস, ডাল, যাই রান্না করা হোক না কেন, ডি-নেচারড হয়ে যায়। খাবারের কোন কোন খাদ্যগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আবার একনাগাড়ে মাইক্রোওয়েভে রান্না খাবার খেলে ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যা ডেকে আনে।
পুষ্টিবিদদের মতে, মাইক্রোওয়েভে রান্না করাই হোক বা খাবার গরম করাই হোক- এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় রেডিয়েশন। এটি আমাদের শরীরসহ পরিবেশেরও নানা ক্ষতি করে। অনেক সময় আমরা রেস্তোরাঁর খাবার এনে মাইক্রোওয়েভে গরম করে খাই। ডিপ ফ্রাই করা খাবার রেডিয়েশন দিয়ে গরম করলে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা খাবার খেয়ে অনেকেরই রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে ছিল প্রচ- মাথার যন্ত্রণা, চোখে ব্যথা, অনিদ্রা, সারাদিন ধরে ঘুম ঘুম ভাব। একই সঙ্গে পেটে ব্যথা, টেনশন, অ্যাংজাইটি, মনঃসংযোগের অভাব, হজমের গোলমালসহ নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করার ফলে স্বাস্থ্যের যেসব ক্ষতি হতে পারে জেনে নিন : বিশেষত শুকনো খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে তাতেই বেশি পরিমাণে কার্সিনোজেনিক উপাদান ‘অ্যাক্রেলামাইড’ উৎপন্ন হয়। বিশেষত, দানাশস্য জাতীয় খাবার শুকনো গরম করলে তাতেই এই উপাদান উৎপন্ন হয়। যেমন, ভাত, বিভিন্ন শুকনো ডাল, রুটি, ডালিয়া, চিঁড়ে ইত্যাদি উচ্চমাত্রায় গরম করলে ক্ষতি। এমনকী, উচ্চ তাপমাত্রায় ২-৩ মিনিট খাবার গরম করলেও তা থেকে এই ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেল্টসভিল হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকের দাবি, সবজি, বিশেষত তরকারি বা রান্না করা সবজি মাইক্রোওভেনে গরম করলে, সবজিতে উপস্থিত উপকারী উপাদান ‘ফ্লোভোনয়েড’-এর মাত্রা কমতে থাকে, প্রায় বিনষ্ট হয়ে যায়। সবজির এই পুষ্টিগুণ হৃদপি- ভাল রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মাইক্রোওভেনে গরম করে খেলে খাবারের এই গুণ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এমনকী, মাইক্রোওভেনে পানিতে সিদ্ধ করলেও সবজির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
তবে ফ্যাটি খাবার যেমন, দুধ, ডিম, মাখন-ঘি যুক্ত খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করলে এই খাবারে উপস্থিত গুড ফ্যাটগুলি নষ্ট হয় রেডিয়েশনের প্রভাবে। অনেক সময় দেখা যায় মাইক্রোওভেনে গরম করলেও পুরো খাবার ভিতর পর্যন্ত গরম হয় না। বিশেষত, মাংস (রেডমিট), মিষ্টি, কোনও ভাজা খাবার গরমের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়। এতে করে খাবারের মধ্যে অনেক মাইক্রোঅর্গাজমের বৃদ্ধি ঘটে ও ক্ষতিকারক মাইক্রো টক্সিন তৈরি করে। যা শরীরে গিয়ে নানা রোগের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। ডিএনএ-র ড্যামেজও করতে পারে।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দুধ ফোটাবেন না। কারণ এতে দুধের মধ্যে থাকা কিছু প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি দুধে থাকা উপকারি অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তিত হয়ে বিষাক্ত রাসায়ানিকে রূপ নেয়। যা ক্যানসার ডেকে আনে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে চিকেন বা মাটন রান্না সহজ ও সময় কম লাগার ফলে অনেকে মাইক্রোওয়েভ কুকিং পছন্দ করেন। কিন্তু মাংসে থাকা বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড ওভেনের পাল্লায় পড়ে ডি-নাইট্রোসোডিএন্থানল অ্যামিনস নামে বিষাক্ত যৌগ উৎপাদন করে, যা ক্যানসারের শঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। ডিপ ফ্রিজে রাখা রান্না করা সবজি এই ম্যাজিক মেশিনে গরম করলে উপকারী প্ল্যান্ট অ্যালকালয়েড বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়। এটিও আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ ডেকে আনে। বিট, গাজর, মুলার মত রুট ভেজিটেবলস মাইক্রোওয়েভে ওভেনে গরম করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়, তেমনি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয় যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। খাবারে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই-সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ফলে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য তাতে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। মাইক্রোওয়েভে সেই খাবার গরম করলে কোলেস্টেরল অক্সিডেশন যৌগ উৎপন্ন হয়। এই যৌগ শরীরে গেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের শাকে প্রচুর মাত্রায় নাইট্রেট থাকে, যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে শাক গরম করলে উপকারী এই উপাদানটিই নাইট্রোসামাইন নামক যৌগ উৎপন্ন করে, যা শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলস্টোন, বন্ধ্যাত্ব, ছানি এবং ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের প্রবণতা বাড়ে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নার ফলে করোনারি আর্টারিতে (হার্টের রক্তবাহী ধমনি) চর্বির প্রলেপ পড়ার গতি বেড়ে যায় হু হু করে। ফলে হার্টের অসুখ এবং আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
হজমক্ষমতা একেবারে কমে যায়, লাগাতার বদহজম চলতেই থাকে। নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেলে লসিকাগ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যায়। লসিকা আমাদের শরীরকে কয়েকটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই এই যন্ত্রের ব্যবহার লসিকার কার্যক্ষমতা কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মাইক্রোওয়েভের খাবার খেলে অন্ত্র এবং পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রবণতাও বাড়ে। লাগাতার মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারে আমাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গকে ওলটপালট করে দেয়। এতে নার্ভ ও মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয়। আর এর প্রভাবে মানসিক স্থিতাবস্থা নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, স্থিরতা, ধৈর্য কমতে শুরু করে। শুরু হয় ডিপ্রেশন। অনেকেই খাওয়ার আগে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ভাত গরম করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস মোটেও ভালো নয়। মাইক্রোওয়েভে ভাত গরম করে খেলে পেটে বিষক্রিয়া হতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ভাত গরম করলে তাতে ব্যাসিলাস সেরেসাস নামক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে গিয়ে টক্সিন উৎপন্ন করে, যা ডায়রিয়াসহ পেটের নানান সমস্যার জন্য দায়ী। সবসময় কাচের পাত্রে খাবার গরম করুন। খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখতে খাবার গরম করার জন্য খাবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম না করে গ্যাসের চুলায় করতে পারেন। পাশাপাশি চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব রান্না করা খাবার সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলতে। কেননা, রান্না করার পর খাবার যতবার গরম করা হবে, ততই খাবারের গুণগতমান কমতে শুরু করবে।-