ঢাকা ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়িতেই সফল উদ্যোক্তা তিনি

  • আপডেট সময় : ১১:১২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : জান্নাতুল ফেরদাউস। সিলেটের হবিগঞ্জ শহরে জন্ম হলেও বাবার চাকরি সূত্রে বর্তমানে রাঙ্গামাটিতেই তার বসবাস। তিনি রাঙামাটি সরকারি এমবিএ ও বিএড-এ অধ্যয়নের পাশাপাশি একটি বেসরকারি হাইস্কুলে চাকরি করছেন।
চাকরি ও টিউশনি সব মিলিয়ে ছুটির দিনগুলো ছাড়া কোনো অবসর ছিলো না জান্নাতুল ফেরদাউসের। কোভিড-১৯ এর মহামারিতে সম্পূর্ণ ঘরমুখো হয়ে গেলেন তিনি। যেখানে নিজেকে দেওয়ার জন্য কোনো সময় ছিলো না সেখানে লকডাউনে সময়ই কাটছিল না তার। এরই মধ্যে যুক্ত হলেন ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম)। বিভিন্ন জেলার আপুদের দেশীয় পণ্যের এক বিরাট সমাগম এই উই। সেখানে অন্য নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনে অনলাইনে ব্যবসার অনুপ্রেরণা পেলেন তিনি। বলেন, অনেক অবাক হতাম এই ভেবে যে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে আপুরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।
বর্তমানে ফেসবুক পেজ “মনিপুরী কুঠুরী”-এর মাধ্যমে নিজ জেলার অর্থাৎ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়ি, টেম্পল পাড়ের জুম শাড়ি, মনিপুরী মোটিফে হাফ সিল্ক শাড়ি, জুম শাড়ি এবং তাঁতের তৈরি থ্রিপিস নিয়ে ব্যবসা করছেন জান্নাতুল ফেরদাউস।
নিজের ব্যবসার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, উইতে যখন সময় দেওয়া শুরু করলাম তখন থেকেই ইক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজিব স্যারের কথাগুলো শুনতাম। স্যার বলতেন দেশীয় পণ্যে নিয়ে কাজ করতে। উইয়ের আপুদেরও দেখতাম প্রতিটা আপুই তাদের নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে কাজ করতো। আমার জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য মনিপুরী শাড়ির প্রতি আকর্ষণ ছিলো আগে থেকেই। আর ছোট থেকেই দেখতাম আম্মুর মনিপুরী শাড়ি কেনার প্রতি অনেক আগ্রহ। কিন্তু রাঙামাটিতে মনিপুরী পণ্যগুলো পাওয়া যায় না। তখনই ঠিক করলাম রাঙামাটিসহ দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে দিবো এই ঐতিহ্য’।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত আমার প্রতিটা পণ্যের কালার চয়েস থেকে শুরু করে তাঁতি থেকে প্রোডাক্ট বাসায় আনা,পণ্যের ফটোগ্রাফি করা, কাস্টমার হ্যান্ডেল করা এমনকি ডেলিভারি দেওয়া- প্রতিটা পদক্ষেপে আমার বোন ও আমার স্বামী নিঃস্বার্থভাবে আমায় সাপোর্ট দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের দুই বোনের মিলিত উদ্যোগ আমাদের এই “মনিপুরী কুঠরী”। আমার বোনের হাসবেন্ড আমাদের প্রতিটা প্রোডাক্ট তাঁতি থেকে আনা ও প্রতিনিয়ত ডেলিভারি দিয়েই চলছে। আর ছায়ার মতো আমার বোন আমাদের ব্যবসার প্রতিটা কাজে জড়িয়ে আছে। আমার বলার অপেক্ষা রাখে না যে, “বোন এটা করো”। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া এতো সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছি। মূলধন থাকলেই আসলে সফল হওয়া যায় না। ব্যবসার জন্য সময় ও শ্রম প্রয়োজন যেটা আমার বোন আমাকে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা না থাকলে কখনো আমার পক্ষে এই উদ্যোগ পরিচালনা করা সম্ভব ছিলো না। আমি অনেক কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। আমার একার কিছুই না সবকিছুই আমাদের দুই বোনের।
উল্লেখ্য, শুরুতে ১৬ হাজার টাকার শাড়ি এনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদাউস। উই গ্রুপ থেকেই প্রথমে বিক্রি শুরু হয় তার পণ্যের। এছাড়াও অনেক প্রবাসি ক্রেতাও ছিল তার পেজে। আমাদের উদ্যোক্তা জীবনের ১ বছরে তার বিক্রির পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬,১০,৭৯৮ টাকা । এভাবেই প্রত্যেকের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে মনিপুরী কুঠরীকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান তিনি। যেন ক্রেতারা বিশ্বাস করে সহজেই প্রোডাক্ট ক্রয় করতে পারে। এই স্বপ্ন নিয়েই ব্যবসায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়িতেই সফল উদ্যোক্তা তিনি

আপডেট সময় : ১১:১২:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নারী ও শিশু ডেস্ক : জান্নাতুল ফেরদাউস। সিলেটের হবিগঞ্জ শহরে জন্ম হলেও বাবার চাকরি সূত্রে বর্তমানে রাঙ্গামাটিতেই তার বসবাস। তিনি রাঙামাটি সরকারি এমবিএ ও বিএড-এ অধ্যয়নের পাশাপাশি একটি বেসরকারি হাইস্কুলে চাকরি করছেন।
চাকরি ও টিউশনি সব মিলিয়ে ছুটির দিনগুলো ছাড়া কোনো অবসর ছিলো না জান্নাতুল ফেরদাউসের। কোভিড-১৯ এর মহামারিতে সম্পূর্ণ ঘরমুখো হয়ে গেলেন তিনি। যেখানে নিজেকে দেওয়ার জন্য কোনো সময় ছিলো না সেখানে লকডাউনে সময়ই কাটছিল না তার। এরই মধ্যে যুক্ত হলেন ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম)। বিভিন্ন জেলার আপুদের দেশীয় পণ্যের এক বিরাট সমাগম এই উই। সেখানে অন্য নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনে অনলাইনে ব্যবসার অনুপ্রেরণা পেলেন তিনি। বলেন, অনেক অবাক হতাম এই ভেবে যে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে আপুরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।
বর্তমানে ফেসবুক পেজ “মনিপুরী কুঠুরী”-এর মাধ্যমে নিজ জেলার অর্থাৎ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়ি, টেম্পল পাড়ের জুম শাড়ি, মনিপুরী মোটিফে হাফ সিল্ক শাড়ি, জুম শাড়ি এবং তাঁতের তৈরি থ্রিপিস নিয়ে ব্যবসা করছেন জান্নাতুল ফেরদাউস।
নিজের ব্যবসার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, উইতে যখন সময় দেওয়া শুরু করলাম তখন থেকেই ইক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজিব স্যারের কথাগুলো শুনতাম। স্যার বলতেন দেশীয় পণ্যে নিয়ে কাজ করতে। উইয়ের আপুদেরও দেখতাম প্রতিটা আপুই তাদের নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে কাজ করতো। আমার জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য মনিপুরী শাড়ির প্রতি আকর্ষণ ছিলো আগে থেকেই। আর ছোট থেকেই দেখতাম আম্মুর মনিপুরী শাড়ি কেনার প্রতি অনেক আগ্রহ। কিন্তু রাঙামাটিতে মনিপুরী পণ্যগুলো পাওয়া যায় না। তখনই ঠিক করলাম রাঙামাটিসহ দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে দিবো এই ঐতিহ্য’।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত আমার প্রতিটা পণ্যের কালার চয়েস থেকে শুরু করে তাঁতি থেকে প্রোডাক্ট বাসায় আনা,পণ্যের ফটোগ্রাফি করা, কাস্টমার হ্যান্ডেল করা এমনকি ডেলিভারি দেওয়া- প্রতিটা পদক্ষেপে আমার বোন ও আমার স্বামী নিঃস্বার্থভাবে আমায় সাপোর্ট দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের দুই বোনের মিলিত উদ্যোগ আমাদের এই “মনিপুরী কুঠরী”। আমার বোনের হাসবেন্ড আমাদের প্রতিটা প্রোডাক্ট তাঁতি থেকে আনা ও প্রতিনিয়ত ডেলিভারি দিয়েই চলছে। আর ছায়ার মতো আমার বোন আমাদের ব্যবসার প্রতিটা কাজে জড়িয়ে আছে। আমার বলার অপেক্ষা রাখে না যে, “বোন এটা করো”। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া এতো সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছি। মূলধন থাকলেই আসলে সফল হওয়া যায় না। ব্যবসার জন্য সময় ও শ্রম প্রয়োজন যেটা আমার বোন আমাকে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা না থাকলে কখনো আমার পক্ষে এই উদ্যোগ পরিচালনা করা সম্ভব ছিলো না। আমি অনেক কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। আমার একার কিছুই না সবকিছুই আমাদের দুই বোনের।
উল্লেখ্য, শুরুতে ১৬ হাজার টাকার শাড়ি এনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদাউস। উই গ্রুপ থেকেই প্রথমে বিক্রি শুরু হয় তার পণ্যের। এছাড়াও অনেক প্রবাসি ক্রেতাও ছিল তার পেজে। আমাদের উদ্যোক্তা জীবনের ১ বছরে তার বিক্রির পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬,১০,৭৯৮ টাকা । এভাবেই প্রত্যেকের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে মনিপুরী কুঠরীকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান তিনি। যেন ক্রেতারা বিশ্বাস করে সহজেই প্রোডাক্ট ক্রয় করতে পারে। এই স্বপ্ন নিয়েই ব্যবসায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।