ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসেই টিকা পাচ্ছেন, আবার ভোররাতে দাঁড়িয়েও ফিরে যেতে হচ্ছে

  • আপডেট সময় : ০২:১১:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার একটি কেন্দ্রে কেউ কেউ এসেই করোনার টিকা নিতে পারছেন। আবার অনেকে ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে রোকন উদ্দিন বলছেন, স্বেচ্ছাসেবীরা পরিবারের সদস্যদের টিকা দিতে চাইলে তিনি বাধা দিতে পারেন না।
এই ঘটনা ঘটছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটখোলার মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টার টিকাকেন্দ্রে। গতকাল বুধবার সকাল সাতটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী-পুরুষ লাইন ধরে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই বলেন, এর আগেও টিকার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। এরপর দুপুরবেলা তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা আজকে টিকা পাওয়ার কথা জানান।
সকাল ১০টার দিকে ওই কেন্দ্র থেকে টিকা নিয়ে বের হন গীতা রানী দাস। তিনি বলেন, তৃতীয় দিনের মাথায় আজকে টিকা পেয়েছেন। এই নারী জানান, গত সোমবার ভোররাত চারটায় টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ান। সে সময় তাঁর সামনে ছিল মাত্র ১১ জন নারী। কিন্তু ওই দিন বেলা তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও টিকা পাননি। পরদিন গত মঙ্গলবার আবার ভোররাত চারটার দিকে লাইনে দাঁড়ান। সেদিনও সারা দিন অপেক্ষা করে টিকা পাননি। আজ আবার ভোররাত পৌনে চারটায় লাইনে দাঁড়ান।
আল আমিন নামের এক ব্যক্তিও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সোমবার ভোররাত চারটার দিকে তিনি এই টিকাকেন্দ্রে আসেন। দিনভর অপেক্ষার পরেও টিকা পাননি। গত মঙ্গলবারে দিনের বেলা আসেন, টিকা পাননি। মঙ্গলবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে যখন তিনি এই টিকাকেন্দ্রে আসেন, তখন কেউ ছিল না। সকাল ৯টায় টিকা দেওয়া শুরু হলেও তিনি টিকা পান বেলা ১১টার দিকে। আল আমিন বলেন, ‘আজকেও টিকা পাওয়া যেত না। সাংবাদিক আসায় পাওয়া গেছে।’
আমির হোসেন নামের আরেকজন বলেন, তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিকা পেয়েছেন। তাঁর সিরিয়াল নম্বর ছিল ৫, কিন্তু টিকা পেয়েছেন ৬১ নম্বরে। তিনি বলেন, ‘অনেক অনিয়ম করে। এরা (কাউন্সিলরের লোক) বেনামে লোক ঢুকাই ফেলায়।’
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ টিকাকেন্দ্রে আসেন। ততক্ষণে তাঁর লোকজনও এসে গেছেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে চার–পাঁচজন নারী পাশের ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়ান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা কাউন্সিলরের লোকজনের সহায়তায় টিকাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এভাবে একে একে প্রায় ২০ জন প্রবেশ করেন, যদিও লাইনে দাঁড়ানো লোকজনকে তখনো ডাকাই হয়নি।
হঠাৎ করে আসা লোকদের টিকাকেন্দ্রে প্রবেশে সহায়তাকারী একজন শাফিন পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি। আমার পরিবারের লোকজনকে আমি টিকার ব্যবস্থা করতে পারব না? এখানে যারা এসেছে, তারা সবাই আমার পরিবারের লোক।’
এ কাজে সহযোগিতা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। তাঁদের একজন গ্রাম পুলিশ শাহেদা আক্তার শিলা বলেন, ‘তাঁরা অসুস্থ মানুষ, তাই ঢুকিয়েছি।’
লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই টিকাকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবীদের পরিবারের দু–একজন সদস্য আসতেই পারে, সেটা আমরা অবজ্ঞা করতে পারি? আমাদের এখানে স্বেচ্ছাসেবী যাঁরা আছেন, তাঁদের পরিবারের লোক তাঁরা।’
রোকন উদ্দিন বলেন, ‘আমার এখানে না, সব জায়গায় গেলেই বলবে যে আমরা পাচ্ছি না। এই কথাগুলো তাঁরা স্বভাবজাতভাবে বলেন।’
সকাল পৌনে ১০টার দিকে টিকাকেন্দ্রে লাইনের বাইরের লোকজনের প্রবেশে বাধা দেওয়ায় কাউন্সিলরের লোকজনের সঙ্গে টিকা নিতে আসা নারী–পুরুষের হট্টগোল বেধে যায়। এ সময় রনি নামের একজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন কাউন্সিলরের সমর্থকেরা। একই সময় কাউন্সিলরের লোকজন একজন রিকশাচালককে ঘুষি–লাথি মেরে আহত করেন। বিশৃঙ্খলা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা কেমনে নিয়ন্ত্রণ করব? কমিশনারের দলীয় লোক সব।’ আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘বিষয়টা কমিশনার দেখছেন। যদি আমাদের দেখতে দেয়, তাহলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এসেই টিকা পাচ্ছেন, আবার ভোররাতে দাঁড়িয়েও ফিরে যেতে হচ্ছে

আপডেট সময় : ০২:১১:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার একটি কেন্দ্রে কেউ কেউ এসেই করোনার টিকা নিতে পারছেন। আবার অনেকে ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে রোকন উদ্দিন বলছেন, স্বেচ্ছাসেবীরা পরিবারের সদস্যদের টিকা দিতে চাইলে তিনি বাধা দিতে পারেন না।
এই ঘটনা ঘটছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটখোলার মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টার টিকাকেন্দ্রে। গতকাল বুধবার সকাল সাতটায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক নারী-পুরুষ লাইন ধরে টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই বলেন, এর আগেও টিকার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। এরপর দুপুরবেলা তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা আজকে টিকা পাওয়ার কথা জানান।
সকাল ১০টার দিকে ওই কেন্দ্র থেকে টিকা নিয়ে বের হন গীতা রানী দাস। তিনি বলেন, তৃতীয় দিনের মাথায় আজকে টিকা পেয়েছেন। এই নারী জানান, গত সোমবার ভোররাত চারটায় টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ান। সে সময় তাঁর সামনে ছিল মাত্র ১১ জন নারী। কিন্তু ওই দিন বেলা তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও টিকা পাননি। পরদিন গত মঙ্গলবার আবার ভোররাত চারটার দিকে লাইনে দাঁড়ান। সেদিনও সারা দিন অপেক্ষা করে টিকা পাননি। আজ আবার ভোররাত পৌনে চারটায় লাইনে দাঁড়ান।
আল আমিন নামের এক ব্যক্তিও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সোমবার ভোররাত চারটার দিকে তিনি এই টিকাকেন্দ্রে আসেন। দিনভর অপেক্ষার পরেও টিকা পাননি। গত মঙ্গলবারে দিনের বেলা আসেন, টিকা পাননি। মঙ্গলবার রাত ৩টা ৩২ মিনিটে যখন তিনি এই টিকাকেন্দ্রে আসেন, তখন কেউ ছিল না। সকাল ৯টায় টিকা দেওয়া শুরু হলেও তিনি টিকা পান বেলা ১১টার দিকে। আল আমিন বলেন, ‘আজকেও টিকা পাওয়া যেত না। সাংবাদিক আসায় পাওয়া গেছে।’
আমির হোসেন নামের আরেকজন বলেন, তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টিকা পেয়েছেন। তাঁর সিরিয়াল নম্বর ছিল ৫, কিন্তু টিকা পেয়েছেন ৬১ নম্বরে। তিনি বলেন, ‘অনেক অনিয়ম করে। এরা (কাউন্সিলরের লোক) বেনামে লোক ঢুকাই ফেলায়।’
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ টিকাকেন্দ্রে আসেন। ততক্ষণে তাঁর লোকজনও এসে গেছেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে চার–পাঁচজন নারী পাশের ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়ান। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা কাউন্সিলরের লোকজনের সহায়তায় টিকাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এভাবে একে একে প্রায় ২০ জন প্রবেশ করেন, যদিও লাইনে দাঁড়ানো লোকজনকে তখনো ডাকাই হয়নি।
হঠাৎ করে আসা লোকদের টিকাকেন্দ্রে প্রবেশে সহায়তাকারী একজন শাফিন পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি। আমার পরিবারের লোকজনকে আমি টিকার ব্যবস্থা করতে পারব না? এখানে যারা এসেছে, তারা সবাই আমার পরিবারের লোক।’
এ কাজে সহযোগিতা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। তাঁদের একজন গ্রাম পুলিশ শাহেদা আক্তার শিলা বলেন, ‘তাঁরা অসুস্থ মানুষ, তাই ঢুকিয়েছি।’
লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই টিকাকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবীদের পরিবারের দু–একজন সদস্য আসতেই পারে, সেটা আমরা অবজ্ঞা করতে পারি? আমাদের এখানে স্বেচ্ছাসেবী যাঁরা আছেন, তাঁদের পরিবারের লোক তাঁরা।’
রোকন উদ্দিন বলেন, ‘আমার এখানে না, সব জায়গায় গেলেই বলবে যে আমরা পাচ্ছি না। এই কথাগুলো তাঁরা স্বভাবজাতভাবে বলেন।’
সকাল পৌনে ১০টার দিকে টিকাকেন্দ্রে লাইনের বাইরের লোকজনের প্রবেশে বাধা দেওয়ায় কাউন্সিলরের লোকজনের সঙ্গে টিকা নিতে আসা নারী–পুরুষের হট্টগোল বেধে যায়। এ সময় রনি নামের একজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন কাউন্সিলরের সমর্থকেরা। একই সময় কাউন্সিলরের লোকজন একজন রিকশাচালককে ঘুষি–লাথি মেরে আহত করেন। বিশৃঙ্খলা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমরা কেমনে নিয়ন্ত্রণ করব? কমিশনারের দলীয় লোক সব।’ আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘বিষয়টা কমিশনার দেখছেন। যদি আমাদের দেখতে দেয়, তাহলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না।’