ঢাকা ০১:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

এলপিজি নিয়ে বিইআরসির গণশুনানি স্থগিত

  • আপডেট সময় : ০২:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চার মাস আগের নির্ধারণ করা দামের ওপরে ফের গণশুনানির আয়োজন করতে যাওয়ায় তা আটকে দিয়েছে হাইকোর্ট। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজির দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির ওই শুনানি নিয়ম বহির্ভূত উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই রুল জারি করেছে। এজন্য মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এলপিজির মূল্য পুননির্ধারণে বিইআরসি যে গণশুনানির আয়োজন করেছিল, তা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই নিয়ম ভেঙে বিইআরসি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের রুল বিশ্লেষণ করে তার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিইআরসির এই উদ্যোগ নিয়মবহির্ভূত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছে। অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভ করেছে। এখন যখন একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনই তারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিইআরসি তাদের নির্ধারিত মূল্য ব্যবসায়ীদের মানাতে বাধ্য করতে পারেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা। এই প্রেক্ষাপটে আদালতে আরেকটি রিট আবেদন করে ক্যাব। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, একটা সময় ছিল ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমত যেমন খুশি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতো। তারা ভোক্তাদের ঠকাতো। ক্যাব মামলা করার পর জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সে দাম কোনো ব্যবসায়ী মানেননি। উল্টা চার মাস পরে সেই প্রথম দফার মূল্য নতুন করে পুনর্বিবেচনার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, বিইআরসি যে দামের আদেশের ওপরে শুনানি করতে যাচ্ছে সেটি গত ১২ এপ্রিলের দেওয়া দামের বিষয়। এরমধ্যে আরও চারটি দাম সমন্বয়ের আদেশ দিয়েছে কমিশন। এ অবস্থায় আগের আদেশের কার্যকারিতা থাকে না। সেক্ষেত্রে কমিশন এই শুনানি করতে পারে না। পাল্টা জবাবে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠা ওমেরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, এলপিজির যে দাম বিইআরসি নির্ধারণ করে দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি এমনভাবে নির্ধারণ করা হোক যেটা ভোক্তা ও সরবরাহকারী উভয়পক্ষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। কিন্তু বিইআরসি তা করতে পারেনি বলে আমরা পুননির্ধারণের জন্য আবেদন করেছি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ক্যাবের দায়ের করা রিট আবেদনের নোটিশ পেয়েছি। যদিও আদালতের আদেশের কপি পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে গত ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এর ৯০ দিনের মাথায় ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির মূল্য বেধে দেয় বিইআরসি। এরপর প্রতিমাসেই আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। সবশেষ গত ২৯ জুলাই মূল্য সমন্বয় করা হয়। সে আদেশ অনুযায়ী বর্তমান এলপিজির সাড়ে ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৩ টাকা। আর সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ না থাকায় সিলিন্ডার আগের দাম ৫৯০ টাকা রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে বেসরকারি-খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে আসায় গত কয়েক বছরে বাজারে এলপিজির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিস্তৃতিও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরু থেকেই এলপিজির দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবসায়ীদের হাতে। চাহিদা সংকটের সময় তাদের ইচ্ছেমত দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। আর তা মেনেই ভোক্তারা এতদিন এলপিজি ব্যবহার করে আসছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তলবের পাল্টা তলব দিল্লির, উল্টো দুষল ইউনূস সরকারকে

এলপিজি নিয়ে বিইআরসির গণশুনানি স্থগিত

আপডেট সময় : ০২:২৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : চার মাস আগের নির্ধারণ করা দামের ওপরে ফের গণশুনানির আয়োজন করতে যাওয়ায় তা আটকে দিয়েছে হাইকোর্ট। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজির দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির ওই শুনানি নিয়ম বহির্ভূত উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই রুল জারি করেছে। এজন্য মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এলপিজির মূল্য পুননির্ধারণে বিইআরসি যে গণশুনানির আয়োজন করেছিল, তা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই নিয়ম ভেঙে বিইআরসি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের রুল বিশ্লেষণ করে তার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিইআরসির এই উদ্যোগ নিয়মবহির্ভূত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছে। অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভ করেছে। এখন যখন একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনই তারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিইআরসি তাদের নির্ধারিত মূল্য ব্যবসায়ীদের মানাতে বাধ্য করতে পারেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা। এই প্রেক্ষাপটে আদালতে আরেকটি রিট আবেদন করে ক্যাব। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, একটা সময় ছিল ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমত যেমন খুশি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতো। তারা ভোক্তাদের ঠকাতো। ক্যাব মামলা করার পর জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সে দাম কোনো ব্যবসায়ী মানেননি। উল্টা চার মাস পরে সেই প্রথম দফার মূল্য নতুন করে পুনর্বিবেচনার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, বিইআরসি যে দামের আদেশের ওপরে শুনানি করতে যাচ্ছে সেটি গত ১২ এপ্রিলের দেওয়া দামের বিষয়। এরমধ্যে আরও চারটি দাম সমন্বয়ের আদেশ দিয়েছে কমিশন। এ অবস্থায় আগের আদেশের কার্যকারিতা থাকে না। সেক্ষেত্রে কমিশন এই শুনানি করতে পারে না। পাল্টা জবাবে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠা ওমেরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, এলপিজির যে দাম বিইআরসি নির্ধারণ করে দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি এমনভাবে নির্ধারণ করা হোক যেটা ভোক্তা ও সরবরাহকারী উভয়পক্ষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। কিন্তু বিইআরসি তা করতে পারেনি বলে আমরা পুননির্ধারণের জন্য আবেদন করেছি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ক্যাবের দায়ের করা রিট আবেদনের নোটিশ পেয়েছি। যদিও আদালতের আদেশের কপি পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে গত ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এর ৯০ দিনের মাথায় ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির মূল্য বেধে দেয় বিইআরসি। এরপর প্রতিমাসেই আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। সবশেষ গত ২৯ জুলাই মূল্য সমন্বয় করা হয়। সে আদেশ অনুযায়ী বর্তমান এলপিজির সাড়ে ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৩ টাকা। আর সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ না থাকায় সিলিন্ডার আগের দাম ৫৯০ টাকা রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে বেসরকারি-খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে আসায় গত কয়েক বছরে বাজারে এলপিজির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিস্তৃতিও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরু থেকেই এলপিজির দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবসায়ীদের হাতে। চাহিদা সংকটের সময় তাদের ইচ্ছেমত দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। আর তা মেনেই ভোক্তারা এতদিন এলপিজি ব্যবহার করে আসছেন।