ঢাকা ১০:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

এলপিজি কিনতে মাসে ‘২৭০০ কোটি টাকা’ বাড়তি দিচ্ছে ভোক্তারা

  • আপডেট সময় : ০২:১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন স্তরের এলপিজি ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকে মাসে অন্তত ২৭০০ কোটি টাকা বাড়তি আদায় করে নিচ্ছেন বলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এর মধ্যে কেবল আমদানি ও বোতলজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে যাচ্ছে ‘বাড়তি ৯০০ কোটি টাকা’। বাকি টাকা যাচ্ছে ডিলার, পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছে। বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এলপিজি অপারেটর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি, ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে আসে। ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এই খাতের ব্যবসায়ীরা একটি কৃত্রিম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফার পথ তৈরি করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যেই সমস্যাগুলো আমি দেখছি, সেটা পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে। সামনে রমজান আছে, যেন এই সুযোগে আপনারা আরেকটু ব্যবসা করে নিতে পারবেন।”এলপিজির বাজারে ভোক্তা স্বার্থ পরিপন্থি এসব তৎপরতার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান সফিকুজ্জামান। বসুন্ধরা, ওমেরা, বেক্সিমকো, যমুনা, ফ্রেশ, জেএমআই, বিএম এনার্জি, আইগ্যাস, ওরিয়ন গ্যাস, এনার্জিপ্যাক, ডেলটা এলপিজিসহ মোট ২৮টি কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে এলপি গ্যাস বোতলে ভরার ব্যবসা করছে। দেশে বর্তমানে মাসে এক লাখ ২০ হাজার টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে বলে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জানাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, সবচেয়ে বেশি চালু ১২ কেজি সিলিন্ডার হিসাব করলে মাসে কেনাবেচা হচ্ছে ৯০ লাখ সিলিন্ডার। এলপিজির দাম মাসে মাসে নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। ডিসেম্বরে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১২৯৭ টাকা। জানুয়ারি মাসে কমে হয়েছিল ১২৩২ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আবার দাম বাড়িয়ে ১৪৯৮ টাকা করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান উৎপাদন পর্যায়ে ১৪২৩ টাকা নেওয়ার পরিবর্তে ১৫২০ টাকা করে নিচ্ছে। সাধারণ ভোক্তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে সফিকুজ্জামান বলেন, “প্রতি সিলিন্ডারে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মিল গেইট থেকেই। আর ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে দাম ৩০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। ৯০ লাখ সিলিন্ডারে তাহলে প্রতিমাসে কত টাকা অতিরিক্ত লাভ হচ্ছে? আপানারাই হিসাব করে দেখেন।” তার হিসাবে, উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো মাসে ৯০০ কোটি টাকা এবং ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা আরও ১৮০০ কোটি টাকা বাড়তি আদায় করে নিচ্ছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরও এলপিজির বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বসেছিল ভোক্তা অধিকার। তখন যেসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার কোনোটিরই সমাধান হয়নি। বুধবারের বৈঠকেও একই সমস্যা নিয়ে টানা দুই ঘণ্টা আলোচনার পর কোনো রায় আসেনি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের হতাশার বিষয়টি বার বার উঠে আসে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালকের কণ্ঠে। “আমরা অভিযান করে, কিছু সুপারিশ দিয়ে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখতে পেলাম না। ২২ সেপ্টেম্বর যে সমস্যা দেখেছি, এখনও একই সমস্যাই দেখতে পাচ্ছি। এমন নয় যে বছরে একবার দাম ঠিক করা হয়। প্রতি মাসে মাসে দাম ঠিক করা হয়। তারপরেও বাজারের এই পরিস্থিতি।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

এলপিজি কিনতে মাসে ‘২৭০০ কোটি টাকা’ বাড়তি দিচ্ছে ভোক্তারা

আপডেট সময় : ০২:১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন স্তরের এলপিজি ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকে মাসে অন্তত ২৭০০ কোটি টাকা বাড়তি আদায় করে নিচ্ছেন বলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। এর মধ্যে কেবল আমদানি ও বোতলজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে যাচ্ছে ‘বাড়তি ৯০০ কোটি টাকা’। বাকি টাকা যাচ্ছে ডিলার, পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কাছে। বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এলপিজি অপারেটর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি, ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন তথ্য উঠে আসে। ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এই খাতের ব্যবসায়ীরা একটি কৃত্রিম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফার পথ তৈরি করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যেই সমস্যাগুলো আমি দেখছি, সেটা পরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে। সামনে রমজান আছে, যেন এই সুযোগে আপনারা আরেকটু ব্যবসা করে নিতে পারবেন।”এলপিজির বাজারে ভোক্তা স্বার্থ পরিপন্থি এসব তৎপরতার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান সফিকুজ্জামান। বসুন্ধরা, ওমেরা, বেক্সিমকো, যমুনা, ফ্রেশ, জেএমআই, বিএম এনার্জি, আইগ্যাস, ওরিয়ন গ্যাস, এনার্জিপ্যাক, ডেলটা এলপিজিসহ মোট ২৮টি কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে এলপি গ্যাস বোতলে ভরার ব্যবসা করছে। দেশে বর্তমানে মাসে এক লাখ ২০ হাজার টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে বলে এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ জানাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, সবচেয়ে বেশি চালু ১২ কেজি সিলিন্ডার হিসাব করলে মাসে কেনাবেচা হচ্ছে ৯০ লাখ সিলিন্ডার। এলপিজির দাম মাসে মাসে নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। ডিসেম্বরে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১২৯৭ টাকা। জানুয়ারি মাসে কমে হয়েছিল ১২৩২ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আবার দাম বাড়িয়ে ১৪৯৮ টাকা করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান উৎপাদন পর্যায়ে ১৪২৩ টাকা নেওয়ার পরিবর্তে ১৫২০ টাকা করে নিচ্ছে। সাধারণ ভোক্তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে সফিকুজ্জামান বলেন, “প্রতি সিলিন্ডারে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মিল গেইট থেকেই। আর ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে দাম ৩০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। ৯০ লাখ সিলিন্ডারে তাহলে প্রতিমাসে কত টাকা অতিরিক্ত লাভ হচ্ছে? আপানারাই হিসাব করে দেখেন।” তার হিসাবে, উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো মাসে ৯০০ কোটি টাকা এবং ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা আরও ১৮০০ কোটি টাকা বাড়তি আদায় করে নিচ্ছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরও এলপিজির বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বসেছিল ভোক্তা অধিকার। তখন যেসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার কোনোটিরই সমাধান হয়নি। বুধবারের বৈঠকেও একই সমস্যা নিয়ে টানা দুই ঘণ্টা আলোচনার পর কোনো রায় আসেনি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের হতাশার বিষয়টি বার বার উঠে আসে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালকের কণ্ঠে। “আমরা অভিযান করে, কিছু সুপারিশ দিয়ে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখতে পেলাম না। ২২ সেপ্টেম্বর যে সমস্যা দেখেছি, এখনও একই সমস্যাই দেখতে পাচ্ছি। এমন নয় যে বছরে একবার দাম ঠিক করা হয়। প্রতি মাসে মাসে দাম ঠিক করা হয়। তারপরেও বাজারের এই পরিস্থিতি।”