ঢাকা ০৩:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

এরদোয়ানের পদত্যাগ চেয়ে তুরস্কে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যশা ডেস্ক:  প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-এর বিরুদ্ধে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহারের মাধ্যমে দমন-পীড়নের অভিযোগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রোববার রাজধানী আঙ্কারায় শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

বিক্ষোভের নেতৃত্বে আছে সিএইচপি। আন্দোলনকারীরা এরদোয়ানকে ‘স্বৈরশাসক’ উল্লেখ করে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।

২০২৩ সালে দলীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে সিএইচপি। সেই কংগ্রেসে সিএইচপি সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে দলের প্রেসিডেন্ট হন ওজগুর ওজেল। সম্প্রতি এক রায়ে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত সেই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে বলা হয়, নতুন কমিটি নির্বাচনের ভোটে ব্যাপক কারচুপি এবং অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছিল।

অবশ্য আদালতের রায় যে এমন হতে পারে, তা আগে থেকেই ধারণা করেছিনে সিএইচপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। রোববার রায় ঘোষণার দিন রাজধানী আঙ্কারার তান্দোয়ান স্কয়্যারে জড়ো হন দলটির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেন স্বয়ং ওজগুর ওজেল।

নিজ বক্তব্যে ওজেল বলেন, “আদালত সরকারকে তুষ্ট করার জন্য রায় দিয়েছেন। তুরস্কের বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং আদালত যে রায় দিয়েছেন— তা দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল।”

“আদলতের এই রায়ের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে এই সরকার গণতন্ত্র চায় না। কারণ তারা জানে যে যদি গণতন্ত্র থাকে, তাহলে নির্বাচনে তারা জিততে পারবে না। তারা ন্যায়বিচারও চায় না। কারণ যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তাদের অপরাধগুলো আর আড়ালে থাকবে না।”

এরদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে ওজেল বলেন, “আজ হাজার হাজার মানুষ স্লোগান দিচ্ছেন, ‘এরদোয়ানের পদত্যাগ চাই’। এরদোয়ান, আপনি কি এর আগে কখনও তান্দোয়ান স্কয়্যারে এমন দৃশ্য দেখেছেন?”

আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ওজেল। রোববারের সমাবেশে তিনি বলেন, “এই মামলা রাজনৈতিক, মামলার রায়ও রাজনৈতিক। আমাদের সহযোদ্ধারা নিরপরাধ। আদালত শুধু সংবিধানের বিরুদ্ধেই নয় বরং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট এবং ভবিষ্যতের সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছেন। আমরা আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব, অব্যাহত রাখব এবং অব্যাহত রাখব।”

সংবিধান অনুসারে তুরস্কে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২৮ সালে। তবে গতকালের সমাবেশে ওজেল নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

তুরস্কের সরকার অবশ্য সিএইচপির এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তুরস্কের বিচারবিভাগ স্বাধীন এবং আদালতের রায়ে সরকার কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করেনি।

তবে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, ২০২৮ সালের নির্বাচনে নিজের বিজয় সুরক্ষিত রাখতে যাবতীয় ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে ফেলতে চাইছেন তিনি এবং এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে বড় ‘পথের কাঁটা’ সিএইচপি।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত সিএইচপির ৫০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারদের ম্যেধ ১৭ জন মেয়রও আছেন।

সিএইচপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম একরেম ইমামোগ্লু। সিএইচপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। আগামী ২০২৮ সালের নির্বাচনে এরদোয়ানের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল ইমামোগ্লুকে। ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , ঘুষ , অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে কারাগারে আছেন ইমামোগ্লু।

তুরস্কের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ প্রসঙ্গে আজ সোমবার এক লিখিত বার্তায় ইমামোগ্লু বলেছেন, “স্বৈরতন্ত্রের দিন শেষ। আমাদের সামনে নতুন দিন হাতছানি দিচ্ছে। একজনের আওয়াজ যদি রুদ্ধ করা হয়, তাহলে হাজার জন আওয়াজ তুলবে।”

সূত্র : রয়টার্স

ওআ/আপ্র/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

এরদোয়ানের পদত্যাগ চেয়ে তুরস্কে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রত্যশা ডেস্ক:  প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-এর বিরুদ্ধে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহারের মাধ্যমে দমন-পীড়নের অভিযোগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রোববার রাজধানী আঙ্কারায় শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

বিক্ষোভের নেতৃত্বে আছে সিএইচপি। আন্দোলনকারীরা এরদোয়ানকে ‘স্বৈরশাসক’ উল্লেখ করে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।

২০২৩ সালে দলীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে সিএইচপি। সেই কংগ্রেসে সিএইচপি সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে দলের প্রেসিডেন্ট হন ওজগুর ওজেল। সম্প্রতি এক রায়ে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত সেই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। আদালতের রায়ে বলা হয়, নতুন কমিটি নির্বাচনের ভোটে ব্যাপক কারচুপি এবং অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়েছিল।

অবশ্য আদালতের রায় যে এমন হতে পারে, তা আগে থেকেই ধারণা করেছিনে সিএইচপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। রোববার রায় ঘোষণার দিন রাজধানী আঙ্কারার তান্দোয়ান স্কয়্যারে জড়ো হন দলটির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। সেই সমাবেশে বক্তব্য দেন স্বয়ং ওজগুর ওজেল।

নিজ বক্তব্যে ওজেল বলেন, “আদালত সরকারকে তুষ্ট করার জন্য রায় দিয়েছেন। তুরস্কের বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং আদালত যে রায় দিয়েছেন— তা দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল।”

“আদলতের এই রায়ের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে এই সরকার গণতন্ত্র চায় না। কারণ তারা জানে যে যদি গণতন্ত্র থাকে, তাহলে নির্বাচনে তারা জিততে পারবে না। তারা ন্যায়বিচারও চায় না। কারণ যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তাদের অপরাধগুলো আর আড়ালে থাকবে না।”

এরদোয়ানকে উদ্দেশ্য করে ওজেল বলেন, “আজ হাজার হাজার মানুষ স্লোগান দিচ্ছেন, ‘এরদোয়ানের পদত্যাগ চাই’। এরদোয়ান, আপনি কি এর আগে কখনও তান্দোয়ান স্কয়্যারে এমন দৃশ্য দেখেছেন?”

আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ওজেল। রোববারের সমাবেশে তিনি বলেন, “এই মামলা রাজনৈতিক, মামলার রায়ও রাজনৈতিক। আমাদের সহযোদ্ধারা নিরপরাধ। আদালত শুধু সংবিধানের বিরুদ্ধেই নয় বরং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট এবং ভবিষ্যতের সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছেন। আমরা আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব, অব্যাহত রাখব এবং অব্যাহত রাখব।”

সংবিধান অনুসারে তুরস্কে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২০২৮ সালে। তবে গতকালের সমাবেশে ওজেল নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

তুরস্কের সরকার অবশ্য সিএইচপির এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তুরস্কের বিচারবিভাগ স্বাধীন এবং আদালতের রায়ে সরকার কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করেনি।

তবে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, ২০২৮ সালের নির্বাচনে নিজের বিজয় সুরক্ষিত রাখতে যাবতীয় ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে ফেলতে চাইছেন তিনি এবং এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে বড় ‘পথের কাঁটা’ সিএইচপি।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত সিএইচপির ৫০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারদের ম্যেধ ১৭ জন মেয়রও আছেন।

সিএইচপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম একরেম ইমামোগ্লু। সিএইচপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। আগামী ২০২৮ সালের নির্বাচনে এরদোয়ানের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল ইমামোগ্লুকে। ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , ঘুষ , অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে কারাগারে আছেন ইমামোগ্লু।

তুরস্কের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ প্রসঙ্গে আজ সোমবার এক লিখিত বার্তায় ইমামোগ্লু বলেছেন, “স্বৈরতন্ত্রের দিন শেষ। আমাদের সামনে নতুন দিন হাতছানি দিচ্ছে। একজনের আওয়াজ যদি রুদ্ধ করা হয়, তাহলে হাজার জন আওয়াজ তুলবে।”

সূত্র : রয়টার্স

ওআ/আপ্র/২০২৫