ঢাকা ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই

  • আপডেট সময় : ০৭:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবেঁধে গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের দুই মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই হবে।

এ বিষয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের আবেদন রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মামলা দুটির বিচারের বাধা কাটল।

রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার (১৭ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নের্তৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চে লিভ টু আপিল না চালানোর কথা জানালে সর্বোচ্চ আদালত তা মঞ্জুর করে।

এ মামলায় বাদীপক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, “হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার লিভ টু আপিল করায় প্রায় তিন বছর ধরে মামলার বিচার কাজ বন্ধ আছে। সরকার আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলা পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকল না।”

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামীর সঙ্গে সিলেটের এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। তাকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।

পরদিন সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। আর ভুক্তোভোগী নারীর স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে।

২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই দিনে মহানগর দায়রা জজ আদালতে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই অভিযোগপত্রেই প্রধান আসামি করা হয় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে।

ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটজনের জনের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত, বাকিরা সহযোগিতা করেছে।

সরাসরি জড়িতরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া।

আর আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে দুটি মামলার বিচারকাজ একই আদালতে করার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে বাদীপক্ষ।

ওই আবেদনে শুনানির পর মামলা দুটির বিচারকাজ একই আদালতে, অর্থাৎ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করার আদেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশের পর মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু বিচারকাজে ধীরগতির কারণে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে ফের হাই কোর্টে আবেদন করে বাদীপক্ষ।

সেই প্রেক্ষাপটে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলা দুটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থনান্তর ও বিচারের নির্দেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ তখন হাই কোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়ে।

গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হযনি। এরপর গত বছর ২৬ জুন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় আটকে থাকে মামলা দুটির বিচারকাজ।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলে পক্ষভুক্ত হতে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি। গত ২০ জানুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। তখন আপিল বিভাগ পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ১৭ মার্চ দিন রাখে।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন প্রত্যাহার করে নিলে আদালত তাতে সম্মতি দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন মামলা স্থানান্তরের জন্য গেজেট জারি করবে। গেজেট জারির পর মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে বিচারের জন্য।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই

আপডেট সময় : ০৭:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবেঁধে গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের দুই মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই হবে।

এ বিষয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের আবেদন রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মামলা দুটির বিচারের বাধা কাটল।

রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার (১৭ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নের্তৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চে লিভ টু আপিল না চালানোর কথা জানালে সর্বোচ্চ আদালত তা মঞ্জুর করে।

এ মামলায় বাদীপক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, “হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার লিভ টু আপিল করায় প্রায় তিন বছর ধরে মামলার বিচার কাজ বন্ধ আছে। সরকার আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলা পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকল না।”

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামীর সঙ্গে সিলেটের এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। তাকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।

পরদিন সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। আর ভুক্তোভোগী নারীর স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে।

২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই দিনে মহানগর দায়রা জজ আদালতে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই অভিযোগপত্রেই প্রধান আসামি করা হয় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে।

ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটজনের জনের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত, বাকিরা সহযোগিতা করেছে।

সরাসরি জড়িতরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া।

আর আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয় সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে দুটি মামলার বিচারকাজ একই আদালতে করার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে বাদীপক্ষ।

ওই আবেদনে শুনানির পর মামলা দুটির বিচারকাজ একই আদালতে, অর্থাৎ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করার আদেশ দেয় হাই কোর্ট। ওই আদেশের পর মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু বিচারকাজে ধীরগতির কারণে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে ফের হাই কোর্টে আবেদন করে বাদীপক্ষ।

সেই প্রেক্ষাপটে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলা দুটি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থনান্তর ও বিচারের নির্দেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ তখন হাই কোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়ে।

গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হযনি। এরপর গত বছর ২৬ জুন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় আটকে থাকে মামলা দুটির বিচারকাজ।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলে পক্ষভুক্ত হতে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি। গত ২০ জানুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। তখন আপিল বিভাগ পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ১৭ মার্চ দিন রাখে।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন প্রত্যাহার করে নিলে আদালত তাতে সম্মতি দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন মামলা স্থানান্তরের জন্য গেজেট জারি করবে। গেজেট জারির পর মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে বিচারের জন্য।